নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক দিনের শেষে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো ‘আজ সারাদিন’? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
উত্তরবঙ্গের জনসভা থেকে বিজেপি ও এজেন্সির বিরুদ্ধে রণহুংকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
ফের বিজেপির শাসন ও ‘এজেন্সিরাজ’ নিয়ে সুর চড়ালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিটি জনসভার মতো মাথাভাঙার জনসভায়ও একই অভিযোগ তোলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এখানেই শেষ নয়, তিনি আরো দাবি করেন যে কেন্দ্রীয় সরকার ‘এক দেশ, এক রাজনৈতিক দল’ নীতিতে বিশ্বাসী। এদিন ঘাসফুল শিবিরের কর্মী ও সমর্থকদের ভিড় ছিল দেখার মতো।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আর কয়েকদিন বাদেই শুরু হবে লোকসভা নির্বাচন। কিন্তু তার আগে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলো বাড়ির বাড়ি যাচ্ছে। ওরা ভয় দেখাচ্ছে সকলকে। ওদের বক্তব্য বিজেপিতে যোগ দিন, নাহলে গ্রেফতার হন। সিআইএসএফ, আয়কর, এনআইএ, এরা সকলেই বিজেপির ইশারায় কাজ করছে এবং মানুষের উপর অত্যাচার করছে। ওরা রীতিমতো মানুষকে অত্যাচার করছে। আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ করছি যে এই ব্যাপারটা আপনারা একটু দেখুন।”
এরপরই গেরুয়া শিবিরের নীতির দিকে আঙ্গুল তোলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওদের নীতি একটাই। ওরা চায় গোটা দেশজুড়ে শুধু ওরাই রাজত্ব করুক। ওরা এক দেশ, এক রাজনৈতিক দল নীতিতে বিশ্বাসী। ওরা নিজেদের স্বৈরাচারী শাসন বজায় রাখতে চায়। আর বিজেপির শাসন মানেই তো এজেন্সিরাজ।”
কিন্তু কোচবিহারের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী গত বিধানসভা নির্বাচনে হওয়া শীতলকুচি কান্ডের কথা মনে করিয়ে দিলেন উপস্থিত সকলকে। তিনি জানালেন যে কিভাবে সংখ্যালঘুদের উপর গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান যে সেই মুহূর্তে নির্বাচন চলাকালীন তিনি সময় নষ্ট না করে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত বিধানসভা নির্বাচনে শীতলকুচিতে ৫ জনকে গুলি করেছিল, যার মধ্যে সংখ্যালঘু ছিল ৪ জন এবং ১ জন রাজবংশী ভাইও ছিল। নির্বাচন চলাকালীন খবর পাওয়া মাত্রই আমি কোন দেরি না করে ওদের কাছে ছুটে এসেছিলাম সাহায্য করতে। যেভাবে সম্ভব আমি ওদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।”
এরপর ঘটনার মাস্টারমাইন্ডকে প্রার্থী করানোতে বিজেপিকে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “যার নির্দেশ এই ঘটনাটি ঘটেছিল, তার বিরুদ্ধে আমার সরকারের দুটো ডিপি চলছে এবং ভিজিলেন্স অবধি ক্লিয়ার হয়নি। আমাদের আপত্তি সত্ত্বেও কেন্দ্র ওকে ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে। আইন বা সংবিধান কিচ্ছু মানেনি। তিনি আবার বীরভূমে দাঁড়িয়েছেন। এতো মানুষের হত্যা করেও হাতের রক্ত মোছেনি। এখন বীরভূমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আর বলছে আমি তো এসডিপিও ছিলাম। তো কি হয়েছে তাতে?”
“যা দেখেছেন সব ট্রেলার” কোচবিহার থেকে দাবি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির
একদিকে যখন কোচবিহারে আয়োজিত সভা থেকে গত বিধানসভা নির্বাচনে হওয়া শীতলকুচি কান্ডকে হাতিয়ার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঠিক তখন অন্যদিকে চলতি বছরে হওয়ার সন্দেশখালি কান্ডকে অস্ত্র হিসেবে তুলে নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঞ্চ থেকে তিনি উপস্থিত সকল দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের প্রতিশ্রুতি দেন যে বিজেপি সরকার সন্দেশখালি কান্ডের সঙ্গে যুক্ত সকলকেই হাজতে পুড়ে ছাড়বে। এখানেই শেষ নয়, তিনি আরো দাবি করেন যে অপরাধীদের সারা জীবন জেলেই কাটাতে হবে এবং সেই কারণে অঞ্চলের সকল বুথে বিজেপির পক্ষে ভোট পড়া অবশ্যই জরুরি।
এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “আমি আজ আপনাদের সকলকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে বিজেপি সরকার সন্দেশখালির সকল অপরাধীদের জেল খাটিয়েই ছাড়বে। ওদের সারাজীবনই কারাগারের মধ্যে বন্দি থাকতে হবে। তাই এখানে প্রতিটি বুথে বিজেপির পক্ষে ভোট পড়া অত্যন্ত জরুরি। বিজেপির আসল উদ্দেশ্য নারী শক্তির উন্নয়ন। আমরা তিন কোটি মেয়েকে লাখপতি দিদি বানানোর গ্যারান্টি দিয়েছি। আমি মনে করি যে মা ও বোনেদের স্বনির্ভর করতে পারলেই দেশ আত্মনির্ভর হবে।”
এরপরই তৃণমূলের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টানলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কোচবিহার হোক কি আলিপুরদুয়ার, এই এলাকাগুলিতে বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিজেপি সরকার সব রকম চেষ্টা করছে যাতে এই অঞ্চলগুলির উন্নয়ন হয়। আমি আপনাদের সকলকে বলছি যদি তৃণমূলের গুন্ডারা পথে বাধা হয়ে এসে দাঁড়ায় এবং আপনাদের আটকানোর চেষ্টা করে, তাহলে সাহসের সঙ্গে রুখে দাঁড়াবেন। নির্বাচন কমিশন এবার আরো বেশি শক্ত হয়েছে। তাই আপনারাও নেতাদের মতো বিনা ভয়ে গিয়ে ভোট দিন। বিজেপি মনে করে দেশ বাঁচাতে হলে দুর্নীতিবাজদের হাটাতে হবে। কিন্তু তৃণমূলের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উল্টো। ওরা মনে করে দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করা উচিত।”
এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত ১০ বছরে আপনারা যা কিছু দেখেছেন, ওটা সব ট্রেলার এখনো অনেক উন্নয়ন বাকি রয়েছে। বাংলার ৪০ লক্ষ মানুষ পাকা ছাদের বাড়ি পেয়েছেন, কৃষকদের অ্যাকাউন্টে আমরা টাকা পাঠিয়েছি। এছাড়াও অজস্র মানুষ নতুন শৌচালয় পেয়েছে। এই সবকিছুই ট্রেলার। আর্থিকভাবে ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় শক্তি করার জন্য এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। কোন দুর্বল জোট সরকারের দ্বারা এই কাজ কোনদিনই সম্ভব নয়। আপনারা যখন ভোট দিতে যাবেন তখন এই কথাটা মাথায় রাখবেন যে এই ভোট আপনারা দিচ্ছেন ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় শক্তি বানাতে।”
‘আজ সারাদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।