নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক দিনের শেষে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো ‘আজ সারাদিন’? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
“এনআইএর উপর হামলা হয়েছে” রিপোর্টে শিকার করে নিলো জেলা প্রশাসন
লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ভূপতিনগরে একটি বিস্ফোরণের তদন্তে গিয়ে স্থানীয়দের আক্রমণের শিকার হয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। এই ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় গোটা এলাকায়। পাশাপাশি, হইচই পড়ে যায় গোটা রাজনৈতিক মহলেও। বঙ্গ বিজেপির বক্তব্য তৃণমূলের ইশারায় এই হামলা হয়েছে এনআইএর উপর। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। ঘাসফুল শিবির দাবি করেছে যে স্থানীয় বাসিন্দারা আক্রমণ করেনি, হামলা হয়েছে এনআইএর তরফ থেকেই।
তবে এবার ভূপতিনগর কান্ড ঘিরে উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। ‘এনআইএর উপর হামলা হয়েছে’ একটি রিপোর্টের মাধ্যমে শিকার করে নিলো জেলা প্রশাসন। সোমবার, অর্থাৎ ৮ই মার্চ, এই রিপোর্ট সিইও অফিসে জমা দেওয়া হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ এবং এসডিওর তরফ থেকে। এখানেই শেষ নয়, রিপোর্টে আরো জানানো হয়েছে যে গোটা অভিযান সম্পর্কে পুলিশকে আগে থেকেই জানানো হয়েছিল।
জেলা প্রশাসন সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে জমা দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, “গত শনিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ অভিযান সম্পর্কে পুলিশকে জানানো হয়েছিল এনআইএর তরফ থেকে। তবে পুলিশ বাহিনী প্রস্তুত হওয়ার অনেক আগেই ঘটনাটি ঘটে। আধিকারিকদের উপর হামলা হওয়ার খবরটি তড়িঘড়ি সেই স্থানে পুলিশ চলে যায়। এমনকি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের আধিকারিকরাও ঘটনাস্থলে যান খবরটি পাওয়া মাত্র।” যদিও এখনো পর্যন্ত শাসকদলের তরফ থেকে এই বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মনে করা হচ্ছে যে এই ঘটনা রীতিমতো চাপে ফেলতে পারে তৃণমূলকে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব মেদিনীপুর ভগবানপুর ২ ব্লকের ভূপতিনগর থানা এলাকায় নাড়ুয়াবিড়লা গ্রামে একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে তিনজনের মৃত্যু হয়। থানায় অভিযোগ করা হয় যে বাজি তৈরি করার সময় এই বিস্ফোরণ হতে পারে এবং যেই বাড়িতে এটি ঘটে সেটি একটি তৃণমূল নেতার। এরপরই কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থে মামলা দায়ের করা হয় এবং ঘটনার তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় এনআইএকে। এরপরই ভূপতিনগরে তদন্ত করতে গিয়ে আক্রান্ত হয় এনআইএ আধিকারিকরা। যদিও গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বলাই মাইতি এবং বুথ সভাপতি মনোব্রত জানাকে। যদিও বলাইচরণ মাইতির স্ত্রী পুরো অভিযোগটাই ঠেলে দেন এনআইএর দিকে এবং দাবি করেন এটি ষড়যন্ত্র।
ধরনা কর্মসূচি থেকে অনড় তৃণমূল! সাহায্যের হাত এগিয়ে দিলো আপ
এজেন্সিরাজের বিরুদ্ধে বরাবরই সুর চরাতে পিছু হাটেনি বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। ভূপতিনগর কান্ডেও তার ব্যতিক্রম হলোনা। একদিকে যখন এনআইএর বক্তব্য যে তাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। ঠিক তখন অন্যদিকে দলের সুপ্রিমো, তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন যে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা দলের নেতা সহ স্থানীয় মহিলাদের হেনস্তা করেছে।
এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার তকমা দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জানাতে যান দলের ১০জন প্রতিনিধি যার মধ্যে ছিলেন দোলা সেন, শান্তনু সেন, ডেরেক ও’ব্রায়েন, সাগরিক ঘোষ, অর্পিতা ঘোষ সহ অন্যান্যরা। বেরিয়েই ২৪ ঘণ্টার ধরনার কথা ঘোষণা করা হয় তাদের তরফ থেকে। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে এসে উপস্থিত হন রাজ্য পুলিশ এবং টেনে হিঁচড়ে দলের নেতাদের তুলে নিয়ে গিয়ে আটক করা হয় দিল্লির মন্দির মার্গ থানায়। যদিও পরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।
কিন্তু নিজেদের বিক্ষোভের জায়গা থেকে সরে আসেনি তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার, অর্থাৎ ৯ই মার্চ, সকাল থেকে সকল প্রতিনিধি থানার বাইরে বসে। দলের এক দাপুটে নেত্রী দোলা সেন এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তাদের অবস্থান প্রকাশ্যে আনেন। তিনি বলেন, “আমাদের এই অবস্থান মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত চলবে। কমিশনের বাইরে অবস্থান করতে পারিনি ঠিকই, তবে আমরা নিজেদের কর্মসূচি থানাতেই চালিয়ে যাবো।”
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় দিল্লির শাসকদল, অর্থাৎ আম আদমি পার্টি। ঘাসফুল শিবিরের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন দলের একজন নেতা সঞ্জয় সিং। নিজেদের এক্স হ্যান্ডেলে তারা লিখেছে, “নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে যদি আপনি সুবিচার চাইতে যান, তাহলে আপনাদের কপালে জেল খাটা লেখা আছে। তবে আম আদমি পার্টি রয়েছে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন ও তাঁর দলের এই লড়াইয়ের পাশে।”
উল্লেখ্য, এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূলের সাংসদদের ওভাবে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে অসম্মানিত করেছে দিল্লি পুলিশ ও সিআইএসএফ। এই কাজ কমিশনের অনুমতি ছাড়া সম্ভব নয়। এটা সত্যিই গণতন্ত্রের জন্য একটা কালো দিন। গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে কমিশন। নির্বাচন কমিশন বিজেপির হাতের পুতুল। ওরা বিজেপির ইশারায় চলে। ওরা চায়না বিরোধী দলগুলি লড়াই করার সমান জমি পাক।”
‘আজ সারাদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।