নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক দিনের শেষে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো ‘আজ সারাদিন’? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
‘সন্দেশখালি ঘটনার তদন্ত করতে পারবে সিবিআই’, জানালো কলকাতা হাই কোর্ট
সন্দেশখালি কাণ্ডে ঐতিহাসিক রায় দেওয়া হলো কলকাতা হাই কোর্টের তরফ থেকে। বড় ক্ষমতা পেল কেন্দ্রীয় এজেন্সি সিবিআই। এবার এই মর্মান্তিক কান্ডের তদন্ত করতে পারবে তারা। বুধবার থেকেই তাদের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফ থেকে। এখানেই শেষ নয়, এবার পুরো তদন্ত হবে আদালতের নজরদারিতেই। এছাড়াও গোটা সন্দেশখালি এলাকাকে স্পর্শকাতর এলাকার তকমা দেওয়া হয়েছে এবং একাধিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই ক্ষেত্রে।
ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, “এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে এই মামলায় নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজন। সিবিআই সকলের অভিযোগ শুনে তারপর সেই অনুযায়ী তদন্ত শুরু করবে। সিবিআইয়ের চালু করা ইমেল আইডিতে সব পক্ষকেই আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সমস্ত অভিযোগ জমা দিতে হবে। ওই ইমেল আইডির প্রচার করতে হবে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসককে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২রা মে। সেদিন সিবিআইকে যাবতীয় সব রিপোর্ট জমা দিতে হবে। দরকারে যেকোনো ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য বা মতামত নিতে পারবে সিবিআই। পুরো তদন্তই চলবে আদালতের নজরদারিতে। এছাড়া সিবিআই যে রিপোর্ট জমা দেবে সেটার ভিত্তিতেই পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া হবে।”
আদালত আরো বলেছে, “উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, স্থানীয় প্রশাসনকে একসঙ্গে মিলে সন্দেশখালির স্পর্শকাতর এলাকাগুলি চিহ্নিত করতে হবে এবং সেখানে সিসিটিভি এবং এলইডি আলো বসাতে হবে। এর জন্য যাবতীয় সব খরচ দিতে হবে রাজ্য সরকারকেই। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই খরচ রাজ্য সরকারকে দিতে হবে। এছাড়াও সিবিআই চাইলে পুলিশকে নির্দেশ দিতে পারবে নির্যাতিত, ক্ষতিগ্রস্ত এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে।”
প্রসঙ্গত, সন্দেশখালি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করল সিবিআই। সুত্র মারফত জানা গিয়েছে যে এই দলে রয়েছেন একজন ডিআইজি, দুজন ডিএসপি ও একজন এসপি পদমর্যাদার আধিকারিক। অন্যদিকে, আদালতের রায় প্রকাশ্যে আসতেই নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির তরফ থেকে। একদিকে যখন গেরুয়া শিবির এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে, ঠিক তখন অন্যদিকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ঘাসফুল শিবিরের বক্তব্য যে তাদের সন্দেহ রয়েছে গোটা ঘটনার তদন্ত কতটা নিরপেক্ষ হবে। এবার দেখার বিষয় যে শেষ পর্যন্ত কি বেরিয়ে আসে তদন্ত করে। জানা যাবে আর কিছুদিনের মধ্যে।
“গোটা বাংলার মা-বোনেরা বুঝে গেছে যে আপনি এই অপরাধীদের পক্ষে”: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ
সন্দেশখালি কান্ডে কলকাতা হাই কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের দিনই সেই ঘটনাকে হাতিয়ার করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির মতো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এই বিষয়ে সুর চড়ালেন। বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে বালুরঘাটের সভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেন তিনি এবং দাবি করেন যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করছেন। এখানেই শেষ নয়, অমিত শাহ আরো জানিয়েছেন যে ঘাসফুল শিবিরকে নির্বাচনে জেতানো মানে সন্দেশখালি মতো নৃশংস ঘটনাকে পশ্রয় দেওয়া।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “আমি মমতা দিদিকে প্রশ্ন করতে চাই যে আপনি তো একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। তাহলে কি করে সন্দেশখালির মতো এক নিন্দনীয় ঘটনা নিয়ে আপনি রাজনীতি করতে পারছেন? বছরের পর বছর আপনার দলের গুন্ডারা মহিলাদের উপর নির্যাতন করে বেরিয়েছে। তাদের ধরতে গেলে ইডির উপর হামলা করছে আপনার লোকেরা। হাই কোর্টের তরফ থেকে নির্দেশ আসার পর আত্মসমর্পণ করলো। মমতা দিদিকে আমার প্রশ্ন। কি করে আপনি কয়েকটা ভোট পাওয়ার জন্য তোষণের রাজনীতি করছেন এবং সন্দেশখালির অপরাধীদের রক্ষা করছেন? গোটা বাংলার মা-বোনেরা বুঝে গেছে যে আপনি এই অপরাধীদের পক্ষে।”
এরপরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত সকল দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, “আমি সকল মা-বোনেদের প্রশ্ন করতে চাই যে আপনারা কি তাদের ভোট দেবেন যারা এই অপরাধীদের রক্ষা করছে? আপনারা বলুন এদের কি ভোট দেওয়া উচিত? আপনারা সকলেই ভাল করে জানেন কে বাঁচিয়ে চলছে সন্দেশখালির এই অপরাধীদের। মনে রাখবেন আপনারা যদি তৃণমূল কংগ্রেসকে যেতাম তাহলে এমন নৃশংস ঘটনা ভবিষ্যতে আরো ঘটবে। ওদের জেতানো মানে অপরাধকে আরো পশ্রয় দেওয়া। কিন্তু মোদীজিকে জেতানো মানে, সোনার বাংলা তৈরির রাস্তা বানিয়ে দেওয়া।”
এছাড়াও এদিন ভূপতিনগর কাণ্ড নিয়েও মুখ খোলেন অমিত শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “২০২২ সালে ভূপতিনগরে একটি বিস্ফোরণ হয়েছিল, যাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। আপনারা বলুন যারা এই অপরাধ করেছে, তাদের কি জেলে ঢোকানো উচিত নয়? এই ঘটনার তদন্ত হাই কোর্ট এনআইএকে করতে দিয়েছে। আর মমতা দিদি এনআইএর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বোমা বিস্ফোরণকারীদের রক্ষা করতে। এটা চরম লজ্জার ব্যাপার যে আপনি এই অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে বেড়াচ্ছেন। আমি বাংলার সকল মানুষকে বলছি যে আপনাদের ভয় পাওয়ার মতো কোনো ব্যাপার নেই। এনআইএকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে উল্টো করে ঝুলিয়ে দিয়ে সোজা করে দেওয়া হবে।”
‘আজ সারাদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।