নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক দিনের শেষে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। আজকের থিম ‘বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফা’। কি ঘটলো ‘আজ সারাদিন’? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
কেতুগ্রামে রক্তগঙ্গা! ভোটের আগের রাতে হত্যা তৃণমূল কর্মী, গ্রেফতার ২
চতুর্থ দফার ভোটের আগেই রক্তগঙ্গা বইলো কেতুগ্রামে। রবিবার সন্ধ্যায় আনখোনা গ্রামপঞ্চায়েতের চেঁচুরি গ্রামে মিন্টু শেখ নামে এক ৪৫ বছর বয়সী তৃণমূল কর্মীকে কুপিয়ে ও বোমা মেরে হত্যা করা হয়। ঘটনার খবর পেয়ে সেই স্থানে তড়িঘড়ি ছুটে আসে কেতুগ্রাম থানার আইসি সহ গোটা পুলিশ বাহিনী। হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এলাকায়।
স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে এদিন বাইকে করে তাঁর এক সঙ্গীর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন মিন্টু শেখ এবং সেই সময়েই কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁর পথ আটকায়। এরপর বাইক থামাতেই দুষ্কৃতীদের দল তাঁর শরীরের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় এবং বোমা মেরে পালিয়ে যায়। এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্ব বলেন, “রবিবার সন্ধ্যাবেলায় সুদিপুর গ্রামে নির্বাচনের কাজেই গেছিলেন মিন্টু। এরপরই তার উপর হামলা করা হয় এবং তাকে হত্যা করা হয়। যদিও ঘটনার খবর পেয়ে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ সেখানে আসে। ভোটের কাজেও বেশ সক্রিয় ছিল মিন্টু এবং সেই কারণেই ওকে টার্গেট করা হয়েছে।”
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে বুলন শেখ নামে এক সিভিক ভলেন্টিয়ার সহ দুজনকে। যদিও সিভিক ভলেন্টিয়ারের গ্রেফতারি নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে তাঁর পরিবার ও প্রতিবেশীরা। এক সিপিএম কর্মী দাবি করেছেন যে গোটা ঘটনার সঙ্গে তাদের দলের কোন যোগ নেই। এখানেই শেষ নয় তিনি আরও দাবি করেছেন যে মিন্টু শেখকে হত্যা করেছে তাঁর নিজের দলের লোকেরাই। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই মিন্টু শেখকে হত্যা করা হয়েছে। সেই সিপিএম কর্মীর বক্তব্য, “ওনার স্ত্রী নালিশ করেছে যে তৃণমূলের কিছু লোকই তাঁর স্বামীকে খুন করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে সিপিএমের কোনো যোগ নেই। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এই হত্যা হয়েছে আর যারা গ্রেফতার হয়েছে, আমরা যতদূর জানি তারা তৃণমূলের লোক।”
কৃষ্ণনগরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ! বাম ও তৃণমূল কর্মীদের হাতাহাতিতে আহত কয়েকজন বাম কর্মী
শুরু হয়েছে চতুর্থ দফার লোকসভা নির্বাচন। সকাল থেকেই মানুষ লাইন দিয়েছে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে। কিন্তু এদিনও অশান্তি লক্ষ্য করা গেছে কয়েকটি জায়গায়। তাদের মধ্যে একটি কৃষ্ণনগর। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর উঠে আসে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা এবং এর জেরে আহত হন কয়েকজন বাম কর্মী। যদিও নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
সোমবার সকালে তেহট্টের থানারপাড়া থানা এলাকায় একটি বুথে সিপিএমের পোলিং এজেন্টকে বসতে বাধা দেয় তৃণমূল। এমন অভিযোগ করা হয় সিপিএমের তরফ থেকে। যদিও স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে প্রথমে দুই পক্ষের মধ্যে বছর হয় এবং পরে তা হাতাহাতিতে পরিণত হয় এবং এই ঘটনায় এক সিপিএম কর্মীর মাথা ফাটে। যদিও খবর পেয়ে তড়িঘড়ি সেই স্থানে এসে পৌঁছায় থানারপাড়া থানার পুলিশ।
তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ওঠে নাকাশিপাড়ার আড়ারবেঘিয়া গ্রামেও। সিপিএমের অভিযোগ যে সেখানকার একটি বুথে তাদের এক কর্মীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে শাসকদলের কর্মীরা। চাপড়াতেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। বামেদের অভিযোগ যে তৃণমূল কর্মীরা তাদের এক এজেন্টকে মারধর দিয়ে বুথ থেকে বের করে দিয়েছে। যদিও এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
যদিও শুধু সিপিএম কর্মীরা নয় তৃণমূলের বিরুদ্ধে অশান্তির অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম ভোটাররাও। তাদের অভিযোগ যে চাপরা বিধানসভার সোনপুকুর দাস পাড়ায় ৯ এবং ১০ নম্বর বুথে তাদের ভোট দিতে দিচ্ছেনা তৃণমূলের লোকেরা। অশান্তির অভিযোগ এসেছে তেহট্ট বিধানসভার নারায়ণপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭ এবং ১৯ নম্বর বুথ থেকে। এছাড়া এদিন বামেদের তরফ থেকে কালীগঞ্জ থানা এলাকাতে সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধানের আত্মীয়ের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে যে সেই আহত ব্যক্তির নাম হাসমুত শেখ।
এই অশান্তি প্রসঙ্গে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদির বলেছেন, “সকাল থেকেই তৃণমূলের লোকেরা একটা সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি করার চেষ্টা করছে। যদিও বেশকিছু জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে বাম কর্মীদের তরফ থেকে। ওরা ঠিক তৃণমূলের সন্ত্রাস রুখে দেবে এবং সাধারণ মানুষ ঠিক ভোট দিতে পারবে। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি ঠিকই কিন্তু ওদের তরফ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।” অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায় বলেন, “ভোটারদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছি তৃণমূলের গুন্ডারা। কিন্তু আমরাও এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি।”
যদিও সমস্ত অভিযোগ বিজেপি ও সিপিএমের দিকে ঠেলে দেয় তৃণমূল। কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান বলেন, “দেখুন ভোট শান্তিপূর্ণ হচ্ছে কিন্তু ইচ্ছাকৃত অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে সিপিএম ও বিজেপি। যথেষ্ট সংযমের পরিচয় দিচ্ছে তৃণমূল কর্মীরা।”
‘আজ সারাদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।