নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক দিনের শেষে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। আজকের থিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গর্জন। কি ঘটলো ‘আজ সারাদিন’? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
দেখতে দেখতে শেষ অর্ধেক লোকসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে চার দফা। আর কিছুদিন বাদেই শুরু হবে পঞ্চম দফার নির্বাচন এবং তার আগেই জোরদার প্রচার শুরু করে দিয়েছে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। সকলেই একে অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুকে হাতিয়ার করে অভিযোগের আঙুল তুলছে। পাশাপাশি, বইছে প্রতিশ্রুতির বন্যাও এসব তরফ থেকে। সবমিলিয়ে, এই মুহূর্তে গোটা ভারতবর্ষে দেখা যাচ্ছে একটা অন্যরকমের ব্যস্ততার চিত্র।
মঙ্গলবার, অর্থাৎ ১৪ই মে, বনগায় একটি জনসভা আয়োজন করা হয় বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে। কল্যাণীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফুটবল মাঠে তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসের সমর্থনে প্রচার করতে আসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তথা দলের সুপ্রিমো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চ থেকে এদিন তিনি ফের একাধিক ইস্যু নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেন। পাশাপাশি, উপস্থিত সকল দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের কাছে অনুরোধ করেন বিশ্বজিৎ দাসকে ভোট দিয়ে জেতাতে।
প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি এরকম নির্বাচন আগে কোনদিন দেখিনি। আমি নির্বাচন কমিশনকে সম্মান করি। কিন্তু কিছু লোক আছে যারা রীতিমতো বিজেপির হাতের পুতুল হয়ে গেছে। নির্বাচন হচ্ছে ২-৩ মাস ধরে। বন্ধ সব সরকারি কাজও। ওরা এগুলো করে বেড়াচ্ছে শুধু মোদিকে সমর্থন জোগাতে। অনেক সম্মান রইল আপনাদের জন্য। কিন্তু আপনাদের মতো লোক থাকলে বেশি সময় লাগবেনা মিটিং করতে।”
এরপরই বিজেপিকে সরাসরি আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা ছুটি দিই হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে। যতদিন বড়মা বেঁচে ছিলেন, আমি ততদিন এখানে আসতাম। আপনারা সকলেই ভাল করে জানেন যে এই নির্বাচন কিন্তু বাংলার চালানোর নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন দিল্লি চালানোর নির্বাচন। কিন্তু আমরা এখন বলছি পাল্টে দিন। এখন যিনি প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন, তাঁর এবং তাঁর দলের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অত্যাচারিত। হয়ে জেলে নয় গেলে। কিছু নেই মাঝখানে। উত্তরপ্রদেশ প্রথম তফসিলিদের মধ্যে। ওটা বিজেপির রাজ্য এবং ওখানে সবচেয়ে বেশি অত্যাচার হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা গঙ্গায় স্নান করি। গঙ্গার জোয়ারে নোংরা আসে আবার ভাটা নিয়ে চলে যায়। রাজনীতিও ঠিক জোয়ার-ভাটার মতোই। গঙ্গায় যতবার ইচ্ছা স্নান করা যায়, কিন্তু কেউ কি গঙ্গায় স্নান করলে পবিত্র হয়ে যায়? সেই সময়ে আতঙ্ক চলছিল কোভিডের। উত্তরপ্রদেশে অনেক দেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যার জন্য দূষণ হয়েছিল। অনেক দেহ আমাদের মুর্শিদাবাদে এসেছিল এবং আমরা পূর্ণ সম্মানের সঙ্গে দাহ করেছিলাম। আমরা কিন্তু সম্মান দিয়েছিলাম। বিজেপি দেয়নি।”
এদিন মঞ্চ থেকে ফের মোদির গ্যারান্টিকে কটাক্ষ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেউ নাকি বলছে প্রধানমন্ত্রীর গ্যারান্টি। আমি কারোর নাম নিচ্ছিনা। আগেও পাঁচবার গ্যারান্টি দিয়েছিল। গ্যারান্টি দিয়ে কথা রাখলে, সেটার দাম আছে। কিন্তু যদি কথা না রাখা হয় আর শুধু বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার চালিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে সেটাকে আমি আর গ্যারান্টি মনে করিনা। পাঁচ বছর আগে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনারা কি কেউ পেয়েছেন? ওটা ফোর টোয়েন্টি। মোদির গ্যারান্টি নয়। দেওয়ার কথা ছিল ১০ কোটি চাকরি। কিন্তু সেটাও ওরা দেয়নি।”
এরপর চাকরি খাওয়া প্রসঙ্গে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আপনারা চাকরিখেকো বাঘ শুনেছেন? আমরা যাকেই চাকরি দিচ্ছি সিপিএম, কংগ্রেস আর বিজেপি মিলে কোর্টে কেস করে তাদের চাকরি আটকে দিচ্ছে। যদিও দিল্লির কংগ্রেসের এতে হাত নেই। কিন্তু এই তিনজন চাকরি খাচ্ছে। কিন্তু এদের কাজ দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তবে আমরা ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশে আছি।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী চোখ থেকে জল বার করে বলেছেন যে তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশে আছেন। কিন্তু এই বিজেপি আদালতে চাকরি যাওয়াকে সমর্থন করেছিল। আর সিপিএমের প্রকাশ বাবু তো একজন বিখ্যাত আইনজীবী। যখন উনি কলকাতার মেয়র ছিলেন তখন উনি হাজার হাজার ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট বার করেছিলেন। কিন্তু আমি ওই কথাগুলি মনে রাখিনি। যেই সুপ্রিম কোর্ট চাকরি যাওয়ার মামলায় স্থগিতাদের দিল, তখনই ওনার গায়ে জ্বালা ধরলো।” এছাড়াও এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও কিছু বিষয় নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেন এবং শেষে দাবি করেন যে এবার বিজেপি জিততে পারবেনা।
‘আজ সারাদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।