নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক নতুন সপ্তাহের শুরুতে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গত সপ্তাহের সেরা সব খবর। তবে এবার থেকে প্রকাশিত হবে সপ্তাহের সেরা গল্পগুলি। এই সপ্তাহের সেরা গল্প ‘ফ্রেন্ডশিপ’।
কাল রাত থেকে দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি মৃণাল, আগামী কাল তার স্বপ্ন পূরণের শেষ যুদ্ধ। মৃণাল এর অনেক দিন এর লড়াই, আত্মত্যাগ এর পুরষ্কার কি সে পাবে। সেই কলেজ পাস করার পর থেকে সে wbcs পরীক্ষার পড়াশোনা শুরু করেছে। প্রায় 5 বছর ধরে সে পড়াশোনা করছে। এই 5 বছরে সে অনেক হার জিত এর সম্মুখীন হয়েছে। কখনো সে prelims পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে কখনো বা mains দিলেও পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে সে পঞ্চম প্রচেষ্টা তে mains পাস করে ইন্টারভিউ দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে।
এত কাছে এসে চাকরী না হলে তার থেকে হতাশা জনক আর কিছু হবে না। ওদিকে মৃণাল এর বয়েস টা বাড়ছে বাবা অবসর গ্রহণ করেছেন তাই মৃণাল এর উপর চাপ বাড়ছে। এই সমাজে বাপের হোটেল এ খাওয়া পুরুষ মানুষের যে কোন কদর নেই তা মৃণাল খুব ভালো মত বুঝে গেছে। এই সব কিছু ভাবতে ভাবতে রাতে দুই চোখের পাতা কিছু তে এক করতে পারছে না মৃণাল। তার মধ্যে একদিকে যেমন চাপা উত্তেজনা কাজ করছে সেইরকম এক প্রকার চাপা আতঙ্ক ও কাজ করছে সমান্তরাল ভাবে। পরের দিন সকালে কোন রকমে নাকে মুখে গুঁজে সব ডকুমেন্ট গুছিয়ে বাবা আর মা কে প্রণাম করে বেড়িয়ে পরল মৃণাল। মৃণাল anxity disorder এর সমস্যা তে ভোগে।
ট্রেনে ওঠার পর থেকেই মৃণালের অত্যধিক ঘাম হচ্ছে, সে পকেটে থাকা একটা হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়ে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে থাকে। শিয়ালদহ স্টেশন এ ট্রেন থেকে নেমে সে বাথরুম এ গিয়ে কিছু টা ফ্রেশ হয় কিন্তু বাথরুম থেকে বেড়িয়ে সে অনুভব করতে পারে সে একটা বিরাট বড় ভুল করে ফেলেছে। সে তার ব্যাগ টা ট্রেনে ফেলে দিয়ে চলে এসেছে।ওই ব্যাগতেই তার সব ডকুমেন্ট রয়েছে। কি করবে বুঝতে না পেরে মৃণাল ছুটে যায় ট্রেনে এর সেই কামরা তে কিন্তু অনেক খুঁজেও সে তার ব্যাগ টা ফেরত পায় না। এমন সময়ে সে স্থির করে GRP তে গিয়ে সে তার এই অবস্থার কথা জানাবে, সেই উদ্দেশ্য নিয়েই মৃণাল GRP অফিসের দিকে ছুটতে থাকে ,এমন সময়ে মৃণাল এর পথ আটকে কেউ তাকে বলে-“কি রে এই ব্যাগ টা খুঁজে পাচ্ছিলি না?” মৃণাল এর ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। মৃণাল তার ব্যাগ পাওয়ার থেকেও বেশি অবাক হয়েছিল মেয়ে টিকে দেখে। মেয়েটি তার কলেজের সহপাঠী সুস্মিতা।
সুস্মিতা বলে-“কিরে আমাকে দেখে ভূত দেখার মত করছিস কেন ? আর তোর এই ফেলে আসার স্বভাব টা গেলো না, মনে আছে কলেজ এ যখন আমরা excursion গিয়েছিলাম তখন তুই হোটেলে একবার তোর একটা লাগেজ ফেলে চলে এসেছিলিস। যাই হোক দেখে মনে হচ্ছে প্রচণ্ড টেনশনে আছিস, চল তোর ভয় টা কাটাই । চল সামনে দোকানে চা খাই। ” চা খেতে খেতে তারা দুজন কিছু টা কথা বলে। সুস্মিতা এর সাথে কথা বলে মৃণাল এর anxity অনেক টা কেটে যায়। যাওয়ার আগে সুস্মিতা বলে ” টেনশন করিস না, ভালো করে ইন্টারভিউ টা দিস। আমি জানি তোর ভালো হবে।” সেদিন এর ইন্টারভিউ ভালো হয়েছিল মৃণাল এর।
ইন্টারভিউ থেকে বেড়িয়ে সে অনেক টা চাপ মুক্ত। বাড়িতে ফোন করার পর তার সুস্মিতা এর কথা মনে পরে। কিছু প্রশ্ন তার মনে আসে যা সকালে টেনশন আর anxity এর কারণে তার মাথায় আসে নি। তার ট্রেন এ ফেলে আসা ব্যাগ টা সুস্মিতা পেলো কি করে। যাই হোক সুস্মিতা কে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ভেবে সে সুস্মিতা কে ফোন করবে বলে ঠিক করে কিন্তু ফোন করতে গিয়ে তার মনে পরে সুস্মিতা তো তার ফোন নম্বর টা ব্লক করে দিয়েছিল কলেজ পাস করার পরেই। দিন দুই পর এক দিন রাতের বেলায় হঠাৎ মৃণাল এর whats app এ সুস্মিতা এর মেসেজ- “কি রে কাল ফ্রি আছিস, বিকেলে এর দিকে একবার আসতে পারবি গঙ্গার ঘাটে? যে খানে আমরা প্রায়শই কলেজ এর পর আড্ডা দিতাম ।” মৃণাল এর মনে পরে যায় কলেজ জীবনের কথা কলেজের পাশের সেই নির্জন গঙ্গার ঘাটে বসে অনেক বিকেল এক সাথে কাটিয়েছে তারা। practical করতে করতে অনেক সূর্যাস্ত এর সাক্ষী তারা থেকেছে কিন্তু মৃণাল তার মনের কথা কখনো সুস্মিতা কে বলে উঠতে পারে নি। সুস্মিতা আর মৃণাল কলেজে best ফ্রেন্ড ছিল। তাদের বন্ধুত্ব অনেকের হিংসার কারণ ছিল কিন্তু ভীতু স্বভাব এর মৃণাল সুস্মিতা কে কখনো বলতে পারে নি তার এক তরফা ভালোবাসার কথা, সে ভয়ে পেতো যদি তাদের বন্ধুত্ব এ চির ধরে যায় কারণ মৃণাল খুব ভালো করে জানতো সুস্মিতা কলেজের ইউনিয়ন এর দাদা রাজীব কে ভালোবাসে। নিতান্তই সাধারণ পরিবার এর ছেলে মৃণাল, কখনো কলেজের বাহুবলি ইউনিয়ন এর দাদা দের সাথে সে অসম লড়াই তে পেরে উঠবে না তাই সে কখনো নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করার বৃথা চেষ্টা করে নি।
এই সব ভাবতে ভাবতে সে রাতে ঘুমিয়ে পরে মৃণাল। পরদিন সেই পুরোনো গঙ্গার ঘাটে সুস্মিতা এর সাথে এত দিন বাদে দেখা হবে ভেবে আলাদা একটা উত্তেজনা হচ্ছিল মৃণাল এর। সে একটা সবুজ রঙের পাঞ্জাবী পরে এসেছিল একটু পরেই সুস্মিতা এলো মৃণাল এর দেওয়া শাড়ি টা পরে। সুস্মিতা বলে-” তুই এই পাঞ্জাবি টা পরে এসেছিস। মনে আছে সেই saraswati পুজো তে exactly তুই এই পাঞ্জাবি টা আর আমি এই শাড়ি টা পরে বেড়িয়েছিলাম, অনেকেই আমাদের boy friend- girlfriend ভাবছিল”।
মৃণাল বলে-“মনে আছে। লোকে তো অনেক কিছু ভেবে নেয় , পাথর কে ভগবান মেনে নেয় তাকে পুজো করে কিন্তু দিনের শেষে সেটা তো পাথর হয়েই থেকে যায়” । সেদিন অনেক না হওয়া গল্প এর মাঝখানে মৃণাল সুস্মিতা কে বলে-” ব্লক টা না করলেই পারতিস। জানি রাজীব দা সন্দেহ করতো। বন্ধুত্ব টা না নষ্ট করলেই পারতিস”। সুস্মিতা-” বাদ দে ওসব কথা। তুই anxity disorder টা কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা কর । এটা কিন্তু তোকে future এও ভোগাবে। মনে আছে তুই সেকেন্ড ইয়ারে practical পরীক্ষার আগে ও এরকম anxity তে ছিলি “। মৃণাল-” তুই moral সাপোর্ট দিয়ে সে যাত্রা আমাকে পাস করতে সাহায্য করেছিলি । কিন্তু এখন তো আর তুই নেই “। সুস্মিতা-” কে বললো আমি নেই আমি সব সময়ে তোর সাথে আছি। চল যত দিন না তোর ইন্টারভিউ এর রেজাল্ট বেড়াচ্ছে ততদিন তোর সাথে আছি ।” মৃণাল- “আর তারপর ? যাই হোক তোর present স্ট্যাটাস কি এখনো রাজীব দা এর সাথে প্রেম করছিস , বিয়ে কবে করবি “?
সুস্মিতা বলে “সে সব বিষয়ে সময় এলেই জানতে পারবি। চল আজ উঠি সময় এলে সব জানতে পারবি।” ইতি মধ্যে মৃণাল আর সুস্মিতা এর মধ্যে আবার পুরানো হারিয়ে বন্ধুত্ব ফিরে আসে। মৃণাল তার একাকীত্ব আর দাঁত চাপা লড়াই এর মাঝখানে সুস্মিতা কে পায় মুক্ত বাতাসের মতো।
ইতিমধ্যে মৃণাল ইন্টারভিউ এর রেজাল্ট প্রকাশিত হল।সে তার অতিকাঙ্খিত সফলতা লাভ করেছে। তার এই সাফল্যের খবর টা দেওয়ার জন্যে সুস্মিতা কে ফোন করলেও ফোন swiched off। whatsappএও সুস্মিতা on হয় না এক সপ্তাহ হয়ে গেলো। অবশেষে কি করবে বুঝতে না পেরে মৃণাল তার পুরোনো ফোন ঘেঁটে সুস্মিতা এর বোন প্রেরণা এর ফোন নম্বর খুঁজে পায় আর প্রেরণা কে ফোন করে। কিন্তু ফোন করে যা শোনে তাতে মৃণাল এর হাত পা অবশ হয়ে আসে। প্রেরণা জানায়- তার দিদি এক বছর হল মারা গেছে। কলেজ শেষ হওয়ার পর সুস্মিতা তার প্রেমিক রাজীব কে বিয়ে করে কিন্তু তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি।
রাজীব ছিল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন এর নেতা। ক্রমে সে স্থানীয় এক দুর্নীতি তে যুক্ত নেতার ছত্রছায়া তে না না অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। রাজীব চাকরী দেওয়ার নাম করে অনেকের থেকে টাকা তুলতে থাকে কিন্তু সুস্মিতা একদিন এসব জেনে ফেলে আর তাদের মধ্যে অশান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছায় আর একদিন সুস্মিতা আত্মহত্যা করে। উক্ত ঘটনার পর মৃণাল অনেক টা ভেঙে পরে আর ভাবতে থাকে তার গুরুত্ব পূর্ন জিনিস ফেলে আসার স্বভাব টা কিছুতেই কাটাতে পারলো না। তার ভাগ্য ভালো সে তার ফেলে আসা ব্যাগ টা ফিরে পায় যা সেদিন তাকে চাকরী পেতে সাহায্য করে। কিন্তু সে জীবন এর একটা গুরুত্ব পূর্ন জিনিস কলেজে ফেলে চলে এসেছে যা সে কোন দিন ফেরৎ পাবে না। আরো একটা শিক্ষা সে জীবনে পেলো কোন বিষয়ে ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসার থেকে সাহস করে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
সেদিন যদি মৃণাল সাহস করে তার মনের কথা সুস্মিতা কে জানাতে পারতো , হয়তো সে তার best friend কে এভাবে হারাত না।। পরের দিন সন্ধ্যা বেলা মৃণাল আবারো কোন এক অজানা আকর্ষণ এ সেই পুরোনো কলেজের পাশের বহু স্মৃতি তে ভরা গঙ্গার ঘাটে উপস্থিত হয়েছে। আজ তার সুস্মিতা এর বলা কথা গুলো খুব মনে পরছে। সুস্মিতা বলেছিল তার ইন্টারভিউ এর রেজাল্ট বেড়ি হওয়া অবধি সে মৃণাল এর সাথে থাকবে। কেন বলেছিল সে একথা তা আজ মৃণাল এর কাছে পরিষ্কার। গোধূলি এর আলো দিগন্তে অন্ধকারে বিলীন হচ্ছে উল্টো দিকে পূর্ণিমা এর চাঁদ এর আলো তে ভরে উঠছে বিপরীত দিকের আকাশ। এমনই দৃশ্য দেখতে দেখতে মৃণাল বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তার যে এখনো অনেক কাজ বাকি।
লেখক: মৌক্তিক সাহা
‘ফিরে দেখা সাতদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামী সপ্তাহে আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো সপ্তাহের সব নজরকাড়া গল্প নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।