নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক প্রতিদিন সকালে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গতকালের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো গত ২৪ ঘন্টায়? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
তবে আজকের স্পেশাল সেগমেন্টে একনজরে দেখানো হবে এখনো পর্যন্ত কি ঘটেছে নিট পরীক্ষায় দুর্নীতি মামলায়
চলতি বছরের নিট পরীক্ষায় দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতেই চাপে পড়ে কেন্দ্র সরকার। সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি আক্রমণ করতে শুরু করে তাদের। পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলিতেও এই দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতে বয়ে নিন্দার বন্যা। এখানেই শেষ নয়, সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় কেন্দ্র সরকার যখন এর জল গড়ায় শীর্ষ আদালত পর্যন্ত। সেখানে কেন্দ্র একপ্রকার মানতে বাধ্য হয় যে এই পরীক্ষায় দুর্নীতি হয়েছে।
এছাড়া ধৃতদের বয়ানও বড় ধাক্কা দেয় তাদের। পাশাপাশি, পড়ুয়াদের একাংশ সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে। যদিও তা পড়ে খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের তরফ থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয় যে এই ব্যাপারে পড়ুয়াদের আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছুই নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও পড়ুয়ারা ক্ষোভ উগরে দেয় এবং বিক্ষোভ দেখায় তাঁর বাড়ির সামনে। সবমিলিয়ে, এই ঘটনা জনসমক্ষে আসতেই চরম চাপে ও অস্বস্তিতে পড়েছে এনডিএ জোট।
তবে তদন্তে নেমে বিহার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত মাস্টারমাইন্ড অমিত আনন্দ। পুলিশি জেরায় চাপের মুখে পড়ে তিনি করে বসেন বেশ কিছু বিস্ফোরক মন্তব্য। তিনি স্বীকার করেন যে প্রতিটি প্রশ্নপত্র বিক্রি করা হয়েছিল ৩০-৩২ লক্ষ টাকায়। পাশাপাশি, সে আরও জানায় যে পরীক্ষার ২৪ ঘন্টা আগে তা দেওয়া হয় পরীক্ষার্থীদের। তদন্ত করতে গিয়ে এটাও জানা গেছে যে বেআইনিভাবে একটি কোচিং সেন্টার চালাতো ধৃত অমিত আনন্দ।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ২০শে জুন, শীর্ষ আদালতের তরফ থেকেও একাধিক নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে এই দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে। সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টে নিট পরীক্ষা নিয়ে একাধিক মামলা চলছে সেগুলি তারা একত্রিত করে শুনতে চায়। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকার এবং ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সিকে নোটিস অবধি দেওয়া হয়েছে। যদিও এখনো স্থগিত করতে চায়নি নিটের কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া। বিচারপতিদের বক্তব্য যে কেন্দ্র ও ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি জবাব না শুনে কোন রায় দিতে চায়না তারা। এমনকি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ পর্যন্ত দিতে চায়না শীর্ষ আদালত বলে দাবি বিচারপতিদের। আগামী ৮ই জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি। যদিও পরে একপ্রকার মুখরক্ষার খাতিরে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। তার উপর বাড়তি চাপ বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মাস্টারমাইন্ডের ভাইরাল ছবি। এটি ভাইরাল করে আরজেডি।
কিন্তু রবিবার, অর্থাৎ ২৩শে জুন, এই মামলায় আরো চাপ ও অস্বস্তি বাড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের। একদিকে যন্তরমন্তরে পরীক্ষা বাতিলের দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখায় পরীক্ষার্থীরা এবং এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লোক কল্যাণ মার্গের বাসভবন পর্যন্ত একটি পদযাত্রাও করা হয় হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত পুলিশ আটকে দেওয়ায় তারা দেখা করতে পারেনি প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে এবং তাদের হাতেই তুলে দেওয়া হয় মেমোরান্ডাম, যাতে পরীক্ষা বাতিলের পাশাপাশি কাউন্সিলিং প্রক্রিয়াও স্থগিত রাখার কথা বলা হয়।
অন্যদিকে, বিহারের নওয়াদা জেলার রজৌলির কাসিয়াড়ি গ্রামে এই ঘটনার তদন্ত করতে এসে গ্রামবাসীদের হাতে গণপিটুনি খান সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। তবুও তার মাঝে দুটি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেন তারা এবং দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও গ্রামবাসীরা দাবি করেছে যে ভুয়ো আধিকারিক ভেবেই তাদের উপর হামলা করা হয়েছে। তবে ৮জন হামলাকারীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে পুলিশের তরফ থেকে। সবমিলিয়ে, এই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার যে ঘড়ে-বাইরে দুদিকেই চাপে তা বেশ স্পষ্ট।
উল্লেখ্য, এই ঘটনার সঙ্গে আয়ুশ রাজ নামে এক ধৃত পুলিশকে বয়ান দেন যে টাকা দিয়ে তিনি যেই প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন, পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখেন সেটা একেবারেই এক। তিনি বলেন, “গত ৪ঠা মে পাটনার লার্ন হোস্টেলে রাতে আমাকে নিয়ে গিয়ে প্রশ্নপত্র আর উত্তরপত্র, দুটোই দেওয়া হয়। ওরা আমাকে মুখস্ত অবধি করতে বলে। সেই সময়ে আমার সঙ্গে আরও ২০-২৫জন পরীক্ষার্থী ছিল। পরীক্ষার হলে গিয়ে আমি দেখি যে যেই প্রশ্নপত্র আমি টাকা দিয়ে পেয়েছিলাম, সেই একই প্রশ্নপত্র পরীক্ষা এসেছে।”
তবে এবার এর চেয়েও বড় চাপে পড়ে কেন্দ্র সরকার যখন বিহার সরকারের আর্থিক দুর্নীতি বিভাগের তরফ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পরীক্ষার্থীদের তলব করা হয় এবং সেই অনুযায়ী তারা তৈরি করা হয় একটি বিস্ফোরক রিপোর্ট। তাতে বলা হয়েছে যে ১৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা মূল্য প্রতিটি প্রশ্নপত্রের এবং তৈরি করা হয়েছিল একটি সলভার গ্যাং, যাদের দেওয়া হতো ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রশ্ন বিক্রির জন্য এবং সলভার গ্যাং এদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের কাজ করতো। তদন্তকারীদের অনুমান যে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও পরীক্ষা মাফিয়াদের সাহায্যে এই দুর্নীতির জাল ছড়িয়েছে বেশকিছু রাজ্যে। এরপরই তদন্ত করতে নেমে হাতে লাগে ছটি ৩০ লক্ষ টাকার মেয়াদউত্তীর্ণ চেক এবং গ্রেফতার করা হয় মাস্টারমাইন্ডকে। এবার দেখার বিষয় যে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামে এই দুর্নীতির মামলা। সব উত্তর পাওয়া যাবে আর কিছুদিনের মধ্যে।
‘সাতসকাল’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।