নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক প্রতিদিন সকালে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গতকালের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো গত ২৪ ঘন্টায়? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
মানিকতলা বিধানসভা উপনির্বাচন ঘিরে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি! একে অপরকে আক্রমণ তৃণমূল-বিজেপির
বুধবার, অর্থাৎ ১০ই জুলাই, উপনির্বাচন হল রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রে – মানিকতলা, বাগদা, রায়গঞ্জ ও রানাঘাট দক্ষিণ। এই চারটির মধ্যে সবথেকে বেশি বিতর্কিত ছিল মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্র। কারণ প্রাক্তন মন্ত্রী, তথা প্রয়াত তৃণমূল নেতা, সাধন পান্ডের মৃত্যুর পর থেকে এই বিধানসভাটি থাকে বিধায়কশূন্য। এমনকি বিজেপি প্রার্থী কল্যাণচৌকিক তরফ থেকেও আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে যাবতীয় জট কাটে এবং হয় উপনির্বাচন। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল সাধন পান্ডের স্ত্রী সুপ্তি পান্ডেকে। অন্যদিকে, গেরুয়া শিবিরের তরফ থেকে প্রার্থী করা হয়েছিল সেই কল্যান চৌবেকেই।
তবে নির্বাচনের দিন রীতিমত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা মানিকতলা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতেই করা হয় নির্বাচন। সকাল থেকে লাইন দিয়ে ভোটাররা ভোট দিতে আসেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে ভোটাররা। তাদের অভিযোগ, জাওয়ানরা হুমকি দিচ্ছেন যে ভোট দিতে এলেই গুলি করে দেবে তারা। এই ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় ১৬৭ মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের ২৩৪ নম্বর বুথে।
খবর পেয়ে বিন্দুমাত্র দেরি না করে ঘটনাস্থলে তাড়াতাড়ি এসে পৌঁছান তৃণমূল প্রার্থী সুপ্তি পান্ডে। এসেই তিনি ভোটার সহ অন্যান্য দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর এই প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেন এবং জানান যে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানাবেন। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে তিনি বলেন যে বেশ কয়েকটি জায়গায় জওয়ানরা অতিরিক্ত সক্রিয়তা দেখাচ্ছে এবং নিজেরাই যেছে কাজ করছেন প্রিসাইডিং অফিসারের। এই ঘটনার পর রীতিমত হইচই পড়ে যায় মানিকতলা সহ তার আশেপাশের এলাকায়।
তবে এদিন বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে। জানা গিয়েছে যে তিনি গাড়ি নিয়ে ঢুকতেই তাঁকে ঘিরে ফেলেন তৃণমূল কর্মীরা। এরপরই তাঁরা ওঠাতে শুরু করেন গো ব্যাক স্লোগান। যদিও কোনভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। অবশেষে তিনি সকলকে এড়িয়ে গাড়ি করে বেরতে সফল হন এবং রীতিমতো তাঁর গাড়ির পেছনে ইট নিয়ে ধাওয়া করে ঘাসফুল কর্মীরা। যদিও এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের কল্যাণ চৌবে জানান, “আমি এসেছিলাম ভুয়ো ভোটা ধরতে। কিন্তু তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী আমাকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখায়। ওরা চায় না যে আমি ভুয়ো ভোটারদের ধরি।” যদিও ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের দাবি যে এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর জন্য এসেছিলেন কল্যান চৌবে। এছাড়াও বিজেপি নেতা অর্জুন সিং অভিযোগ করেন যে নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে ব্যর্থ। তিনি আরো দাবি করেন যে কমিশন যদি ঠিকঠাক ভাবে নজরদারি চালাতো তাহলে অনেককিছু ধরা পড়তো, কিন্তু তা হয়নি।
এছাড়াও এদিন ভোট লুটের অভিযোগ তুলে ফুলবাগান থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন বিজেপি কর্মীরা। তাদের অভিযোগ যে গত লোকসভা নির্বাচনে যেই জায়গাগুলি থেকে বিজেপি এগিয়েছিল, সেখানকার ভোট লুট করেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এখানেই শেষ নয় রীতিমতো বিস্ফোরক অভিযোগ তোলে তারা পুলিশের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভকারী গেরুয়া শিবিরের কর্মীদের বক্তব্য যে পুলিশ সব কিছু জানার সত্ত্বেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি এবং তারা রীতিমতো সাহায্য করছে শাসকদলের গুন্ডাবাহিনীকে।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেন বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তমঘ্ন ঘোষ। তিনি বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে এসে পুলিশকে সবকিছু জানাই। কিন্তু ওরা প্রথমে তাতে কোন গুরুত্ব দেয়নি। যেই আমি এসে বাইরে বিক্ষোভে বসলাম তক্ষুনি ওরা বাইরে এলো। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার যে তৃণমূলকে ভোট লুট করতে সাহায্য করছে এই পুলিশরা। নির্লজ্জের মতো সাহায্য করছে শাসকদলকে। এখানকার প্রতিটা গলিতে তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডাবাহিনীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু পুলিশ সেই নিষ্ক্রিয়ই রয়েছে। এভাবে গণতন্ত্রকে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে। ওদের লজ্জা লাগা উচিত।”
যদিও গেরুয়া শিবিরের তোলা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে। ঘাসফুল শিবিরের জনপ্রিয় নেতা কুনাল ঘোষ এই প্রসঙ্গে নিজের মতামত জানান সংবাদমাধ্যমকে। তিনি দাবি করেন যে এই সবকিছু বিজেপির অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয়। ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে এলাকার কোথাও কল্যান চৌবেকে দেখা যায়নি। উনি মামলা করে অনেক বাধা দিয়েছেন। ওনার এই কর্মের জন্য সাধারণ মানুষকে। স্থানীয় মানুষ বিভিন্ন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের বকুনিতে এই উপনির্বাচন হলো। হঠাৎ এতকাল বাদে তিনি ফিরে এসে হাজির হন। সুতরাং এই সবকিছুর পর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তো থাকবেই। এখন যতো রাজ্যের নাটক করছে ওরা। এখন আর এসব করলে হবে? এগুলো করে কোনো লাভ হবেনা।”
‘সাতসকাল’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।