নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক প্রতিদিন সকালে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গতকালের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো গত ২৪ ঘন্টায়? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
সম্প্রতি সদ্য জয়ী মোদি সরকার নিজেদের প্রথম বাজেট পেশ করে সংসদে। যাবতীয় সব ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। ঘোষণায় দেখা যায় যে সবকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যের জন্য অজস্র টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বিশেষ করে একাধিক আর্থিক প্যাকেজ ও সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য। কিন্তু অন্যদিকে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির জন্য কিছুই ব্যবস্থা করা হয়নি। এরপরই ক্ষোভ উগড়ে দেয় ইন্ডিয়া জোটের সকল শরীক দল। সকলের একটাই বক্তব্য যে এই বাজেট তৈরি করা হয়েছে কেন্দ্র সরকারের নিজের গোদি বাঁচানোর জন্য। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য যে যেহেতু এই মুহূর্তে নীতিশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নাইডু টিডিপি কেন্দ্র সরকারের রাজত্ব ধরে রাখতে পারে, সেই কারণেই তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য এমন বাজেট তৈরি করেছে গেরুয়া শিবির।
এরপরে সংসদের ভিতরে ও বাইরে সুর চড়িয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে দাবি করেছে যে এটি আসলে ‘বিহার-অন্ধ্র বাজেট’। দলের বর্ষিয়ান নেতা, তথা শ্রীরামপুর সাংসদ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন যে এটি ‘কুরসি বাঁচাও বাজেট’। এখানেই শেষ নয় তিনি আরো বলেন যে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার অত্যন্ত বাংলা বিদ্বেষী এবং তারা কোনদিনই চায়না বাংলার ভালো হোক। এখানেই শেষ নয় তিনি আরো দাবি করেছেন যে বাংলার মানুষ এর জবাব ভোটবাক্সে দেবেন এবং শীঘ্রই বিজেপি শূন্যে নেমে আসবে বাংলায়।
একই সুর শোনা যায় দলের সেনাপতি, তথা ডায়মন্ড হারবার সাংসদ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তিনিও দাবি করেন যে এই বাজেট নিজের রাজত্ব বাঁচানোর জন্য তৈরি করেছে কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরো জানান যে বাংলার প্রতি যে অন্যায় গেরুয়া শিবিরের তরফ থেকে করা হয়েছে, তার জবাব আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দেবে বাংলার সাধারণ মানুষ। অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন যে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার অধিকাংশ মানুষ বিজেপিকে ভোট দেবেনা এবং বড় ব্যবধানে জিতবে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমগুলির মুখোমুখি হয় এক হাত নেন কেন্দ্র সরকারকে। তিনিও দাবি করেন যে এমন বাজেট তৈরি করে রীতিমতো অন্যায় করা হয়েছে বাংলা ও তাদের মানুষের সঙ্গে। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “একটা অত্যন্ত দিশাহীন ও জনগণবিরোধী বাজেট তৈরি করেছে কেন্দ্র সরকার। ওরা কোনদিন গরীবদের দেখেনি। বাংলাকে বঞ্চিত করেছে কেন্দ্র সরকার। তবে আমরাও ওদের দয়া চাইনা। বাংলার মানুষও বিজেপিকে ছেড়ে কথা বলবেনা। সকলে আওয়াজ তুলবে বিজেপির বিরুদ্ধে। ভোটের আগে এসে ওরা সকলেই অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু যেই ভোট মিটে যায়, ওরা সব ভুলে যায়। এটাই ওদের ধরন। বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশকে দিচ্ছে, তাতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। কিন্তু বাংলার সঙ্গে এমন আচরণ কেন? আমরা এখনো তোদের থেকে এক লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাই।”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সংসদে ঝড় তোলেন কেন্দ্র সরকারের একতরফা বাজেট নিয়ে। তিনি সরাসরি আক্রমণ করে নিজের অবস্থান প্রকাশ্যে আনেন এবং দাবি করেন যে এই বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু দেওয়া নেই। এখানেই শেষ নয় এমনকি স্পিকারকেও একহাত নিয়ে বসেন ঘাসফুল সেনাপতি। কৃষক মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলতেই স্পিকার জানান যে এই বিষয় নিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলা হয়ে গেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদ জানাতে গেলে তাঁকে স্পিকার বলেন যে তিনি তাঁর কথা শুনতে বাধ্য। ঠিক সেই মুহূর্তেই গেরুয়া শিবিরের সাংসদরা টেবিল চাপড়াতে শুরু করেন স্পিকারের কথা শুনে। তা দেখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজ যারা তালি দিচ্ছে, তাদের জন্যই কিন্তু ৭০০ কৃষক মারা গেছে। কতজনকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এরা?” এরপর স্পিকারকে ঝাঁজালো ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, “নেহরুর আমলে কি হয়েছে, তা নিয়ে কথা বললে আপনি চুপ থাকেন। কিন্তু যে কেউ আট বছর আগে নোটবন্দির কথা তোলে, তখন আপনি তাদের থামিয়ে দেন।”
তবে তৃণমূল কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টির লড়াই আরো উগ্র হয়ে ওঠে নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে। দিল্লি যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে কথা বলার সুযোগ না দিলে তিনি বেরিয়ে আসবেন এবং ঠিক সেটাই তিনি করে দেখিয়েছেন। তিনি বৈঠক থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে তাঁকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেই তিনি বেরিয়ে এসেছেন। এখানেই শেষ নয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরো জানান যে এনডিএ জোটের দলগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের অনেকক্ষণ কথা বলার সময় দেওয়া হয়েছে কিন্তু বিরোধীদের নয়। পাশাপাশি, তিনি এটাও জানিয়ে দেন যে এই অপমান শুধু তৃণমূল কংগ্রেসের অপমান নয়, বরং সকল বিরোধী দলের অপমান। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন এই অভিযোগ এবং দাবি করেছেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছিল নিজের দাবিদাওয়া তুলে ধরার জন্য, কিন্তু তিনি তা না করে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। কলকাতা ফিরে তৃণমূল সুপ্রিমো জানান যে কেন্দ্রের তরফ থেকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও ইন্ডিয়া জোটের দলগুলি মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য প্রভাবশালী নেতারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ান।
এই ইস্যুকে ঘিরে উত্তাল হয় রাজ্য বিধানসভা। আলোচনা করতে চাইলে বিজেপি বিধায়করা বিক্ষোভ দেখিয়ে ওয়াকআউট করেন। একদিকে গেরুয়া শিবিরের দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিথ্যা কথা বলছেন। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য যে তৃণমূল সুপ্রিমোকে অপমান করেছে বিজেপি। এখানেই শেষ নয় তাদের আরো অভিযোগ যে বাংলাকেও বঞ্চনা করা হয়েছে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে। বাইরে বেরিয়ে বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক শংকর ঘোষ শাসকদলকে একহাত নেন। তিনি উপস্থিত সকল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিথ্যা খুব ভালোই বলতে পারে। ইতিমধ্যেই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে যে উনি মিথ্যা কথা বলছেন। প্রথমে যাবেন কি যাবেন না তা নিয়ে টালবাহানা চলছিল। শেষে উনি ঠিক করলেন যে ওখানে গিয়ে নাটক করবেন আর ঠিক সেটাই করেছেন। এগুলো নিয়ে আবার আলোচনা করতে হবে? ফিরহাদ হাকিম অমুসলিমদের ইসলাম ধর্মে আনার কথা বলছেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনার অনুমতি পাওয়া যায়না। কিন্তু ওনার নাটক নিয়ে আলোচনা করতে হবে।”
এরপর পক্ষপাতিত্ব সহ ১৮ দফার অভিযোগ তুলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনল বিজেপির পরিষদীয় দল। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, “মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে বিধানসভার বাইরের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেন তিনি। উনি শাসক দলের বিধায়কদের বিরোধী বিধায়কদের বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব আনতে উৎসাহিত করেন স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলে। উনি পক্ষপাতিত্ব আচরণ করেন।” এই প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আর কয়েকটা দিন অবশিষ্ট রয়েছেবিধানসভা অধিবেশনের। এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হোক এর মধ্যে।”
এরপর ন্যায় সংহিতার বিরোধিতা করে প্রস্তাব পাশ করা হয় বিধানসভায়। পাশ করেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। এই নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিমি বলেন, “ইন্ডিয়ান কথাটি আগের আইনগুলিতে ছিল। তবে ইন্ডিয়া জোট যাতে কোনরকম সুবিধা না পায়, সেই কারণে শব্দটিকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ১৪৭ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার পর ২০ ডিসেম্বর বিলগুলি একসঙ্গে পেশ করা হয়। তাতে বিরোধীদের কথা বলার জায়গাই তো ছিল না তখন সংসদে। কেন হাত দিচ্ছে কেন্দ্র রাজ্যের তালিকাভুক্ত বিষয়ে? পুলিশকে নিজেদের কব্জায় নিতে?”
এছাড়া রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও একহাত নেন কেন্দ্রকে। তিনি বলেন, “রাজ্যের যে পরিমাণ সার প্রয়োজন সেই অনুযায়ী খুব অল্প পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। এমনকি সারে ভর্তুকিও কমাচ্ছে কেন্দ্র।” এরপর সিপিএমকেও কটাক্ষ করেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সিপিএম যখন শাসকদল ছিল, তখন রাজ্যের বহু কৃষক আত্মহত্যা করেছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস আসার পর এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ মন্ত্রী হওয়ার পর এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। ঋণগ্রস্ততার কারণে বহু কৃষক আত্মহত্যা করেছেন সেই সময়ে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটিকে দূর করতে সফল হয়েছেন এবং কৃষকদের সুবিধার জন্য একাধিক প্রকল্প চালু করেছেন।”
তবে বাদল অধিবেশনের শেষদিনে এক আলাদাই সৌজন্য দেখা গেল বিধানসভায়। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রস্তাব গ্রহণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব পেশ করেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে শুভেন্দু অধিকারী ব্যাখ্যা দেন যে সুকান্ত মজুমদার কোনভাবেই বঙ্গভঙ্গের পক্ষে নয়। পাশাপাশি, তিনি এটাও স্পষ্ট করে দেন যে সংবিধান সংশোধন করে যদি কিছু বাড়তি টাকা আসে তাহলে সেটা সুবিধা হবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের খরচ করতে। এরপরই শুভেন্দু অধিকারী প্রস্তাবে সহমত জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তা গ্রহণ করে নেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এদিন অনন্ত মহারাজের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রসঙ্গ ওঠায় তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন যে তিনি তাঁর বাড়িতে চা খেতে গেছিলেন এবং বিরোধী দলনেতা আমন্ত্রণ জানালে তিনি তাঁর বাড়িতেও চা খেতে যাবেন।
এরপর ১৪ই আগস্ট আরজি কর হত্যাকান্ড নিয়ে উত্তাল হয় বিধানসভা। সেই চত্বরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি করেন এবং আগামীদিনে একাধিক কর্মসূচির ডাক দেন।
এছাড়াও এই ব্যাপারে বঙ্গ বিজেপির তরফ থেকে বাংলা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য ১৬ই আগস্ট বঙ্গ বিজেপির তরফ থেকে আরজি কর হাসপাতালের আশেপাশে এলাকায় বিক্ষোভে বসা হবে। এছাড়াও দলের মহিলা মোর্চার তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করা হবে। যদিও নবান্নের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে বন্ধের কোন প্রভাব পরিবহনে পড়বেনা এবং সবকিছু স্বাভাবিক থাকবে।
অন্যদিকে এই ঘটনার জেরে অশান্তির আশঙ্কায় বাতিল করা হয় ডুরান্ড কাপের ডার্বি ম্যাচ। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সামনে আরজি কর হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। লাঠিচার্জ করে পুলিশ এবং এই ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। এছাড়াও আরজি কর চত্বরে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। মৃত মহিলা চিকিৎসকের মা-বাবা আস্থা হারিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। পরিবারের দাবি যে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।
ঘটনার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসে যাতে বলা হয়েছে যে যৌন হেনস্থার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ডঃ কুনাল সরকার ও সুবর্ণ গোস্বামীকে তলব করে লালবাজার। এর প্রতিবাদে একঝাঁক আইনজীবী ও চিকিৎসক রাস্তায় নামে এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লালবাজার অবধি প্রতিবাদ মিছিল করে। তবে প্রায় এক ঘন্টা বাদে দুই ডাক্তার বেরিয়ে সবকিছু জানান সংবাদমাধ্যমকে এবং সবরকমভাবে পুলিশকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭।
সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে আরজি কর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি, ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে যাদের দায়িত্ব নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা এবং কি পদক্ষেপ করা সেগুলি জানানো। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে অনুরোধ করা হয় যাতে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। যদিও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় চিকিৎসকরা তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে যতক্ষণ না নিরাপত্তার দিকটা নিশ্চিত করা হচ্ছে ততক্ষণ কর্মবিরতি চলবে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২২শে আগস্ট। এছাড়া এবিভিপি ও কংগ্রেসের মিছিল ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় সল্টলেক ও ধর্মতলা এলাকায়। দুই পক্ষের কর্মী ও সমার্থক রাই পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের অভিযোগ তোলে।
অন্যদিকে সন্দীপ ঘোষ এর বিরুদ্ধে আদালতে ই ডি তদন্তের দাবি জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। কংগ্রেসের লালবাজার অভিযান ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। আটক করা হয়েছে একাধিক প্রভাবশালী নেতাকে এবং তারপর অবস্থান বিক্ষোভে বসে কর্মীরা। বঙ্গ বিজেপির তরফ থেকেও ধরনায় বসা হয়। এরপর একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয় যাতে দলের নেতাদের সঙ্গে পা মেলান কাশ্মীর ফাইলস পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী।
সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানিতে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় সিবিআই ও রাজ্য পুলিশকে। যদিও শীর্ষ আদালত অনুরোধ করে চিকিৎসকরা যেন দ্রুত কাজে ফিরে আসে। দিল্লি এইমসের চিকিৎসকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলেও প্রত্যাহার করেনি আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। অন্যদিকে বঙ্গ বিজেপির স্বাস্থ্য ভবন অভিযান ঘিরে হইচই পড়ে যায় করুণাময়ী এলাকায়। গেরুয়া শিবিরের বেশ কয়েকজন নেতাকে আটক করে পুলিশ। পাশাপাশি, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়ায় পুলিশ।
অন্যদিকে মেডিকেল ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের প্রধান মুখ রিমঝিম সিনহা জানান আগামী কর্মসূচি কিরমভাবে হবে। পাশাপাশি, গোটা রাজ্যজুড়ে থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বঙ্গ বিজেপি। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে তারা। কলকাতা হাইকোর্টের ধাক্কা খায় রাজ্য সরকার। নবান্ন অভিযানে হ্যাঁ করে আদালত। এছাড়াও আরজি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্ব আদালত দিল সিবিআইকে।
সন্দীপ ঘোষ সহ একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই এবং উদ্ধার করে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। পাশাপাশি তল্লাশি চালানো হয় আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। এছাড়া ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে বঙ্গরত্ন পুরস্কার ফিরিয়ে দেন আলিপুরদুয়ারের লেখক-গবেষক পরিমল দে। বিজেপির তরফ থেকেও একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় আগামীদিনের জন্য।
নবান্ন অভিযান থেকে অশান্তি রুখতে প্রায় চার হাজার পুলিশকে পথে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। পাশাপাশি সাংবাদিক বৈঠক করে কুনাল ঘোষ দুটি ভিডিও দেখান যেখানে শোনা যায় যে চক্রান্ত করে লাশ ফেলা হতে পারে। সেই ভিডিও অনুযায়ী দুই বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও সেমিনার হলের সেই ভিডিওটি প্রকাশ্যে আছে যেখানে দেখা যায় অবাধে আসা যাওয়া চলছে অজস্র লোকের। যদিও ভিডিওটির সঙ্গে যে আসল ঘটনাস্থলের যোগ নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে পুলিশ।
‘সাতসকাল’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।