কি হলো ‘আজ সারাদিন’?
নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক দিনের শেষে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো ‘আজ সারাদিন’? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
রায়তে থাকতে পারে ছক, সুপ্রিম কোর্টের দিকে অভিষেক
মঙ্গলবার ইস্তফা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বঙ্গ বিজেপিতে যোগদান করার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এখানেই শেষ নয়, তিনি রীতিমতো কটাক্ষ করেছেন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীদের। এছাড়াও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো, তথা ডায়মন্ড হারবার সাংসদ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে জানিয়ে দেন যে তাঁর কেন্দ্র থেকে যদি গেরুয়া শিবির তাঁকে দাঁড় করায় তাহলে তিনি তৃণমূল সাংসদকে লক্ষ লক্ষ ভোটে হারাবেন।
তবে এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রাক্তন বিচারপতি বলে বসেন যে তাঁর সঙ্গে বিজেপির যোগাযোগ ছিল। এই মন্তব্যের পরই তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হবেন তারা কারণ তাঁর দেওয়া বিভিন্ন রায়ের পেছনে কোন ছক থাকতে পারে। রিট পিটিশন দাখিল করতে পারেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার, তৃণমূল সাংসদ নিউটাউনে গিয়েছিলেন ব্রিগেডে আশা কর্মীদের থাকার জন্য শিবির তৈরি দেখতে। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই প্রসঙ্গে বলেন, “হয়তো উনি মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। তবুও এটার জন্য ওনাকে ধন্যবাদ। আমার যেটা সবচেয়ে বেশি ইন্টারেস্টিং লেগেছে, সেটা হলো যে উনি বললেন ‘আই অ্যাপ্রোচড দ্য বিজেপি, অ্যান্ড বিজেপি অ্যাপ্রোচড মি।’ বাকিটা বাংলার মানুষই বুঝে নেবে।”
দিল্লি চলো অভিযান: আন্দোলনরত কৃষকদের রুখতে কড়া নিরাপত্তা পুলিশের
বুধবার দিল্লি চলো অভিযানে নামছে আন্দোলনরত কৃষক বাহিনী। ইতিমধ্যেই, কিসান মোর্চা এবং সংযুক্ত কিসান মোর্চার এই প্রতিবাদ ঘিরে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে গোটা রাজধানী জুড়ে। তাদের রুখতে মরিয়া প্রশাসন, তাই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কড়া নিরাপত্তা মোতায়ন করা হয়েছে চারিদিকে।
জানা গিয়েছে যে পুলিশের প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ এবং রাজস্থানে। এছাড়া দিল্লির মেট্রোগুলিতেও মোতায়েন করা হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। চারিদিকে রাখা হচ্ছে নজর কারণ মনে করা হচ্ছে যে নিত্যযাত্রীদের মাঝে আন্দোলনকারী কৃষকরা ঢুকে পড়তে পারে। তবে সবচেয়ে স্পর্শকাতর সিংম্ভি এবং টিকরি সীমান্ত। পরপর লোহার ব্যারিকেড বসানো হয়েছে সেখানে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে কৃষকদের এই আন্দোলন চাপে ফেলতে পারে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার অর্থাৎ ভারতীয় জনতা পার্টিকে।
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে শুরু হয় কৃষকদের এই আন্দোলন। তাদের মূল দাবি ফসলের ন্যায্য মূল্য। কৃষক সংগঠনগুলি দাবি করেছে যে আইন করে ন্যুনতম ক্রম মূল নির্ধারণ করে দিতে হবে। তবে যেহেতু সরকার পক্ষের তরফ থেকে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তাই আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়েছে আন্দোলনরত কৃষকেরা। এর আগে পুলিশ-কৃষক সংঘর্ষে রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। কৃষকরা ব্যারিকেড ভেঙ্গে এগোলে পুলিশের তরফ থেকে কাদানে গ্যাস ছাড়া হয়। তাতে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুও হয় একজনের। এরপর ১০ই মার্চ তাদের তরফ থেকে নেওয়া হয়েছে গোটা দেশজুড়ে রেল রোকো কর্মসূচি।
ফের সন্দেশখালি নিয়ে তৃণমূলকে একহাত মোদির, কথা বললেন নির্যাতিতাদের সঙ্গেও
আরামবাগ ও কৃষ্ণনগরের পর এবার বারাসাতেও সন্দেশখালি কান্ড নিয়ে বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে একহাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কাছারি ময়দানের জনসভা থেকে তিনি উপস্থিত সকল বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের জানালেন যে তৃণমূল আশ্রিত গুন্ডাদের অত্যাচার রুখে দিয়েছেন সেখানকার মা-বোনেরা। এখানেই শেষ নয়, তিনি আরো দাবি করেন যে বাংলার মহিলারা ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূলের দাদাগিরি বন্ধ করতে। পাশাপাশি, তিনি আরও জানান যে বাংলার নারীদের জন্য একমাত্র বিজেপিই আওয়াজ তোলে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “এই বাংলা সারদা মা, রাণী রাসমনির জন্মস্থান আর এখানেই মা-বোনেদের উপর অত্যাচার করে মহা পাপ করেছে তৃণমূল। সন্দেশখালিতে যা হয়েছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আপনাদের কষ্ট তৃণমূল সরকার বোঝেনা। ওদের কিছু যায় আসেনা এতে। সেখানকার মা-বোনেরা দেখিয়ে দিয়েছে যে কিভাবে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনীদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়। আমি দেখতে পাচ্ছি যে বাংলার নারী শক্তি ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূলের দাদাগিরি বন্ধ করতে। সন্দেশখালি ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে যে বাংলার নারীর জন্য একমাত্র বিজেপিই আওয়াজ তোলে।”
এরপরই প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন যে তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের সবটা দিয়ে দেয় অপরাধীদের বাঁচাতে। তিনি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস অপরাধীদের বাঁচাবার জন্য নিজেদের সব শক্তি কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট, দুই জায়গাতেই ওরা ধাক্কা খেয়েছে। ওরা শুধুমাত্র তোলাবাজদের জন্য কাজ করে। তাই ওরা কোনদিনই বাংলার নারীদের সুরক্ষা দিতে পারবেনা।”
উল্লেখ্য, এদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায় সহ বঙ্গ বিজেপির একাধিক নেতা-নেত্রীরা। তবে দেখা যায়নি দিলীপ ঘোষকে। এছাড়া মঞ্চের পিছনে সন্দেশখালির পাঁচ নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী এবং খোঁজ নেন সেখানকার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে।
দিল্লি অভিযান: রাজপথে নেমে পড়েছে আন্দোলনরত কৃষকরা
যেমন কথা তেমন কাজ! ফের ময়দানে নেমে পড়েছে কৃষকরা। বলা যায়, আক্রমণের ঝাঁজ দ্বিগুণ করেছে তারা। কয়েকদিনের বিরতির পর বুধবার, অর্থাৎ ৬ই মার্চ, দিল্লি অভিযানের জন্য ফের রাজপথে নেমে পড়েছে আন্দোলনরত কৃষকরা। সূত্রের খবর, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পুলিশের তরফ থেকে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও চারিদিকে নজর রাখা হচ্ছে। সুতরাং গোটা রাজধানীতে যে একটা চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা একেবারেই স্পষ্ট।
এই প্রসঙ্গে ডিসিপি রাজীব কুমার জানিয়েছেন, “দেখুন আমরা মনে করছি যে আজ কৃষকেরা দিল্লির দিকে রওনা দিতে পারে। তাই সেই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আমরা কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। চারিদিকে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে আমাদের তরফ থেকে। এছাড়া যানবাহনের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই কেউ যাতে কোনরকমের কোন অসুবিধায় না পড়ে, এই কারণে আমরা সেই বিষয়টার উপরও নজর দিচ্ছি।”
উল্লেখ্য, ইউনাইটেড কিষাণ মোর্চা, বিকেইউ উগ্রাহন, ক্রান্তিকারি কিষাণ ইউনিয়ন এবং বিকেইউ ডাকাউন্ড ৫ মার্চ পাটিয়ালার পুড্ডা মাঠে একটি সমাবেশ করে এবং স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে তাদের দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরো বড় আকার নেবে। এবার দেখার বিষয় যে শেষ পর্যন্ত ফের কেন্দ্র সরকারকে মাথানত করাতে সফল হয় কিনা তারা। তা বলবে সময়।
মোদির সভার দিন আশাকর্মী এবং আইসিডিএস কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি ও ব্রিগেডে যোগদানের আহ্বান মমতার
দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন! ইতিমধ্যেই সমস্ত রাজনৈতিক দল প্রচার থেকে প্রার্থী বাছাই, সবকিছুই শুরু করে দিয়েছে। বাংলার অবস্থাটাও ঠিক এমনই। একদিকে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুদিন অন্তর অন্তর রাজ্যে আসছেন দলের প্রচার করে মনোবল চাঙ্গা করতে, তেমনি অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। সুতরাং লড়াই যে হাড্ডাহাড্ডি হবে তা কার্যত স্পষ্ট।
এমন আবহাওয়ায় এদিন সকালে বড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুক থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি জানান যে আগামী এপ্রিল মাস থেকে আশাকর্মী এবং আইসিডিএস কর্মীদের ৭৫০ টাকা করে বেতন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, তিনি আরো জানান যে তিনি চিরকাল মানুষের সেবা করতে চান। শেষ করেন ‘জয় হিন্দ! জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে।
তবে এখানেই শেষ নয়। বারাসাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভার পর তিনি আবারও ভিডিয়ো বার্তা দেন। ব্রিগেডে ‘জনগর্জন’ সভার প্রচার করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তার সঙ্গে সঙ্গে এক্স হ্যান্ডেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, “বাংলার ধৈর্য ও সৌজন্যতাকে একেবারেই দুর্বলতা মনে করা উচিত নয়। বহিরাগত জমিদারদের জায়গা আগামী ১০ই মার্চ বুঝিয়ে দিতে হবে। এদিন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটবে।” এরপরই অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংস্কৃতির নামে বাংলাকে ভাগ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আধার কার্ড বন্ধের নামে এনআরসি-সিএএ চালু করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমরা এই চক্রান্ত একেবারেই মানবোনা। আসুন এই সমাবেশের মাধ্যমে আমরা এর বিরুদ্ধে গর্জন করি। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাবো।”
তৃণমূলে মহা সংকট! শাহজাহানকে পেলো সিবিআই, বিজেপিতে তাপস
লোকসভা নির্বাচন যতো কাছে আসছে, ততো সমস্যা বাড়ছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের। একদিকে শাহজাহান মামলায় সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা। তার উপর তাপস রায়ের বিজেপিতে যোগদান। সবমিলিয়ে, এই মুহূর্তে মহা সংকটে সবুজ শিবির।
সন্দেশখালি কাণ্ডে শাহজাহানকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। তার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৃণমূল। কিন্তু সেখানেও ধাক্কা খায় তারা। বহাল থাকে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ। সময়ের আগে ভবানী ভবনে পৌঁছালেও, হাত লাগেনি শাহজাহান। ক্ষুব্ধ ইডি ফের দ্বারস্থ হয় আদালতের। ফের এজলাসে বসার অনুরোধ করে তারা। যদিও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ভবানী ভবনের অন্য পথ দিয়ে সন্দেশখালির বেতাজ বাদশাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু তা করেও পার পাননি তিনি। অবশেষে নিজেদের জালে পেতে সফল হলো।
অন্যদিকে আরও একটি বড় ধাক্কা খেলো শাসকদল। ইস্তফা দেওয়ার পর বিজেপিতে যোগদান দিলেন প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। গেরুয়া শিবিরের পতাকা তুলেই তিনি ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তোলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই সরকার চোরেদের, দুষ্কৃতিদের সরকার। এরা হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের রায় মানেনা। বাংলায় শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য বিজেপিতে যোগ দিলাম। আজ থেকে আমি মোদি পরিবারের সদস্য হলাম। যতদিন থাকবো নিজের দায়িত্ব পালন করে চলবো।”
‘আজ সারাদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।