২৬সে আগস্ট জন্মাষ্টমী। এইদিনে ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতারের পৃথিবীতে আবির্ভাব – এমনটাই বিশ্বাস করা হয়। দেবকী ও বসুদেবের অষ্টম সন্তান রূপে এই ধরাধামে আবির্ভূত হন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণ ভক্তগন এই দিনটিকে জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করেন। শ্রীকৃষ্ণ ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার বলে মনে করা হয়। এছাড়াও ভগবান বিষ্ণুর বহু অবতারের উল্লেখ করা হয়েছে পুরাণ গুলিতে। ভগবত পুরাণ অনুযায়ী যেমন ভগবান বিষ্ণুর ২২ টি অবতার। আবার
গরুড় পুরাণ অনুসারে ভগবান বিষ্ণুর দশটি অবতার। ভগবান বিষ্ণুর গরুড় পুরাণ মতে এই দশটি অবতারই অধিক প্রচলিত। বিশ্বের বহু বিজ্ঞানী ও গুনীজন গরুড় পুরাণে বর্ণিত ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারের সাথে বিশ্বখ্যাত বিবর্তনবাদের জনক চার্লস ডারউইনের জীব বিবর্তনের তত্ত্বটির কিছু মিল খুঁজে পান।…………
🔹প্রথম অবতার – মৎস অবতার
ভগবান বিষ্ণু মৎস অবতার রূপে সত্যযুগে এই পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। সে ছিল পুরাণের কাহিনী। চার্লস ডারউইন বললেন, পৃথিবীতে সবার প্রথমে প্রাণ এসেছিল জলের মধ্যে। অর্থাৎ সমুদ্রের মধ্যে। মাছ একটি জলজ জীব।
🔹দ্বিতীয় অবতার – কূর্ম অবতার
অর্থাৎ কচ্ছপ জাতীয় প্রাণী।সত্যযুগে কূর্ম রূপে আবির্ভূত হন ভগবান বিষ্ণু। কচ্ছপ হল একটি উভচর প্রাণী। যার জল স্থল উভয় স্থানেই চলাচল। ডারউইন বললেন, জলের পরবর্তীতে প্রাণ জল থেকে স্থলে উঠে আসতে থাকে। স্থলে প্রথম প্রাণের বিচরণ শুরু হয় উভচর প্রাণীর সাহায্যে। যাদের বলা হল – Amphibians ।
🔹তৃতীয় অবতার – বরাহ অবতার
বরাহ অর্থাৎ শূকর জাতীয় বণ্যপ্রাণী। এই অবতার ও আবির্ভূত হন সত্যযুগে। ডারউইন বিবর্তনবাদ বলছে, উভচর প্রাণীর পর আসে স্থলজ বণ্যপ্রাণী। যেমন ডাইনোসর ইত্যাদি। এদের বনেই বাস। এরা ছিল সরিসৃপ ও পক্ষীর মধ্যবর্তী অবস্থা।
🔹চতুর্থ অবতার – নৃসিংহ অবতার
সত্যযুগের শেষ অবতার। যার অর্ধ অংশ পশুর ও অর্ধেক মানুষ। মানবজাতির পশু সুলভ অবস্থা। ডারউইন বিবর্তনবাদ বলছে, মানুষের প্রথম বিবর্তনটি হল খানিকটা এমন। অর্ধেক পশুও অর্ধেক মানুষ।
🔹পঞ্চম অবতার – বামন অবতার
বামন অবতারের আবির্ভাব ঘটে ত্রেতাযুগে। এই অবতার খর্বাকৃতির। অর্থাৎ আকারে ছোট। ডারউইন বিবর্তনবাদ বলছে, মানবপশু থেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষের অবস্থাটি ছিল খর্বাকৃতির। অর্থাৎ ক্ষুদ্র মানুষ।
🔹ষষ্ঠ অবতার – পরশুরাম অবতার
এই অবতার আবির্ভূত হন ত্রেতাযুগে। এনার বনেই বাস। গায়ে ভর্তি লোম। ডারউইন বিবর্তনবাদ বলছে, মানুষ এবার তার স্বাভাবিক আকার লাভ করতে থাকে। জীবনযাপন তখন জঙ্গলে।
🔹সপ্তম অবতার- রাম অবতার
উন্নত মানের মানুষ। সমাজবদ্ধ জীব। ভগবান বিষ্ণুর রাম অবতার আবির্ভূত হন ত্রেতাযুগে। শেখালেন সমাজবদ্ধ হয়ে থাকা। রাজ্য পরিচালনা বা সমাজ পরিচালনার খুঁটিনাটি। ডারউইন বিবর্তনবাদ বলছে, জঙ্গলের বাস ত্যাগ করে উন্নত পর্যায়ের মানুষ সমাজ তৈরী করে এবং সভ্যতার বিকাশ হয়।
🔹অষ্টম অবতার – শ্রীকৃষ্ণ অবতার
আবির্ভূত হন দ্বাপর যুগে। এই অবতার শেখায় গবাদি পশুপালন, প্রেম ও রাজনীতি। অর্থাৎ, এই অবতার ইঙ্গিত করে মানুষের উন্নত জটিল বৌদ্ধিক বিকাশের দিকে। ডারউইন বিবর্তনবাদ বলছে, পূর্ণ উন্নত সমাজবদ্ধ মানুষের এবার শুরু হয় জটিল বৌদ্ধিক বিকাশ। পশু মেরে ঝলসে খাওয়ার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে এসে এইসময় মানুষ তাদের লালনপালন শুরু করে।
🔹নবম অবতার – বলরাম অবতার/বুদ্ধ অবতার
বলরাম ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। আবির্ভূত হন দ্বাপর যুগে।গরুড় পুরাণ বা ভগবত পুরাণে বলরাম কেই ভগবান বিষ্ণুর নবম অবতার রূপে মানা হয়। গরুড় পুরাণ বা ভগবত পুরাণে গৌতম বুদ্ধের কথা উল্লেখ নেই বলেই শুনেছি। পরবর্তীতে হয়ত তা যুক্ত করা হয়। বলরাম অথবা ভগবান বুদ্ধের রূপে নবম অবতার মানুষকে আরও উন্নত চিন্তা চেতনা জ্ঞান বিজ্ঞানের পাঠ দেন। ডারউইন বললেন, জটিল বুদ্ধির বিকাশের পরবর্তীতে মানুষের আরও উন্নত বিকাশ হতে শুরু করে। মানুষ বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে।
🔹দশম অবতার – কল্কি অবতার
এই অবতার ধ্বংসের প্রতীক। কলিযুগের অন্তিম কালে এনার আবির্ভাব হবে। কলিযুগের সকল পাপ কালিমা ধ্বংস করে এই অবতার পুনরায় সত্য যুগের সৃষ্টি করবেন। এমনটাই বিশ্বাস করেন ভগবান বিষ্ণুর ভক্তরা। ডারউইন বলেছিলেন, বিবর্তনের অন্তিম পর্যায়ে সব কিছু ধ্বংস হবে ও পুনরায় সব সৃষ্টি হবে।
আমার এ হেন ব্যাখ্যা পাঠ করে ভারতীয় বাঙালি ডারউইন ভক্তরা হয়ত আমার উপর বিরক্ত হবেন। তাই আগেই বলে রাখি এ বিশ্লেষণ আমার নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বহু গুনিজন এই বিশ্লেষণ করেছেন। সাদৃশ্য খুঁজে বের করেছেন। তারা কোনকিছু দাবী করেন নি। শুধু সাদৃশ্য গুলো মেলে ধরেছেন। ব্যাস এইটুকুই। একজন ভারতীয় হিসেবে আমার গর্ব এইটুকুই যে, ১৮৫৯ সালে ডারউইন যে বিশ্বখ্যাত বিবর্তনের তত্ত্ব টি আমাদের উপহার দিয়েছিলেন, সেই তত্ত্ব যিশু খ্রিস্টের জন্মের বহুবছর পূর্বে এই ভারতের মাটিতেই প্রথম চর্চা হয়েছিল। যা আমাদের মুনি ঋষিগন করে গিয়েছিলেন। ব্যস আমার গর্ব এইটুকুই।
লেখিকা: সায়নী দাশগুপ্ত