নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক প্রতিদিন সকালে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গতকালের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো গত ২৪ ঘন্টায়? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
তেজস্বী যাদবকে চাপ দিতে গিয়ে পাল্টা চাপ খেয়ে গেল বিজেপি
নিট পরীক্ষায় দুর্নীতি মামলায় লালুপুত্র তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনে বিজেপি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ধোপে টিকলোনা। বরং পাল্টা চাপ খেয়ে গেল বিজেপি নিজেই। ভাইরাল হল এমন একটি ছবি যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ সকল দেশবাসীর। অন্যদিকে, আরো অস্বস্তি বাড়লো গেরুয়া শিবিরের। পাশাপাশি, সমস্ত নেটিজেনদের তরফ থেকে কুড়োলো চরম নিন্দাও।
কি সেই ছবি যা দেখে চমকে গেল দেশের সাধারণ মানুষ? আরজেডির তরফ থেকে একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল করা হয় যেখানে দেখা যাচ্ছে যে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী সম্বর্ধনা দিচ্ছেন নিট পরীক্ষায় দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড অমিত আনন্দকে। এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো বয়ে যায় নিন্দার বন্যা। নেটিজেনদের অধিকাংশই চরম নিন্দা জানিয়েছেন এবং দাবি করেছেন যে গেরুয়া শিবিরের লজ্জা লাগা দরকার। তবে অন্যদিকে বিজেপি সমর্থকরা দাবি করছেন যে যখন এই ছবি নেওয়া হয়েছে তখন কেউই জানতোনা যে এমন একটি কান্ড ঘটিয়ে বসতে পারেন অমিত আনন্দ। সবমিলিয়ে, দুই পক্ষের সমর্থকদের অনলাইন লড়াইয়ে একেবারে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলি।
উল্লেখ্য, এই ঘটনার সঙ্গে আয়ুশ রাজ নামে এক ধৃত পুলিশকে বয়ান দেন যে টাকা দিয়ে তিনি যেই প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন, পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখেন সেটা একেবারেই এক। তিনি বলেন, “গত ৪ঠা মে পাটনার লার্ন হোস্টেলে রাতে আমাকে নিয়ে গিয়ে প্রশ্নপত্র আর উত্তরপত্র, দুটোই দেওয়া হয়। ওরা আমাকে মুখস্ত অবধি করতে বলে। সেই সময়ে আমার সঙ্গে আরও ২০-২৫জন পরীক্ষার্থী ছিল। পরীক্ষার হলে গিয়ে আমি দেখি যে যেই প্রশ্নপত্র আমি টাকা দিয়ে পেয়েছিলাম, সেই একই প্রশ্নপত্র পরীক্ষা এসেছে।”
তবে এবার এর চেয়েও বড় চাপে পড়ে কেন্দ্র সরকার যখন বিহার সরকারের আর্থিক দুর্নীতি বিভাগের তরফ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পরীক্ষার্থীদের তলব করা হয় এবং সেই অনুযায়ী তারা তৈরি করা হয় একটি বিস্ফোরক রিপোর্ট। তাতে বলা হয়েছে যে ১৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা মূল্য প্রতিটি প্রশ্নপত্রের এবং তৈরি করা হয়েছিল একটি সলভার গ্যাং, যাদের দেওয়া হতো ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রশ্ন বিক্রির জন্য এবং সলভার গ্যাং এদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের কাজ করতো। তদন্তকারীদের অনুমান যে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও পরীক্ষা মাফিয়াদের সাহায্যে এই দুর্নীতির জাল ছড়িয়েছে বেশকিছু রাজ্যে। এরপরই তদন্ত করতে নেমে হাতে লাগে ছটি ৩০ লক্ষ টাকার মেয়াদউত্তীর্ণ চেক এবং গ্রেফতার করা হয় মাস্টারমাইন্ডকে। তবে খারিজ করে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের সিবিআই তদন্তের আর্জি। এবার দেখার বিষয় যে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামে এই দুর্নীতির মামলা। সব উত্তর পাওয়া যাবে আর কিছুদিনের মধ্যে।
পরীক্ষার্থীদের থেকে যুব কংগ্রেস সবার বিক্ষোভেই চাপে শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান
চলতি বছরের নিট পরীক্ষায় দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতেই চাপে পড়ে কেন্দ্র সরকার। সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি আক্রমণ করতে শুরু করে তাদের। পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলিতেও এই দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতে বয়ে নিন্দার বন্যা। এখানেই শেষ নয়, সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় কেন্দ্র সরকার যখন এর জল গড়ায় শীর্ষ আদালত পর্যন্ত। সেখানে কেন্দ্র একপ্রকার মানতে বাধ্য হয় যে এই পরীক্ষায় দুর্নীতি হয়েছে।
এছাড়া ধৃতদের বয়ানও বড় ধাক্কা দেয় তাদের। পাশাপাশি, পড়ুয়াদের একাংশ সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে। যদিও তা পড়ে খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের তরফ থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয় যে এই ব্যাপারে পড়ুয়াদের আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছুই নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও পড়ুয়ারা ক্ষোভ উগরে দেয় এবং বিক্ষোভ দেখায় তাঁর বাড়ির সামনে। সবমিলিয়ে, এই ঘটনা জনসমক্ষে আসতেই চরম চাপে ও অস্বস্তিতে পড়েছে এনডিএ জোট।
এমন পরিস্থিতিতে অস্বস্তি আরো কিছুটা বাড়লো গেরুয়া শিবিরের যখন শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে দেখানো হয় কালো পতাকা ও তাঁর বিরুদ্ধে তোলা হয় স্লোগান। যোগ দিবস উপলক্ষে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় যাচ্ছিলেন একটি অনুষ্ঠানে যোগদান দিতে। কিন্তু সেখানে তাঁকে পড়তে হয় পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মাঝে। পরিস্থিতির চাপে তিনি সেখান থেকে ফিরে যান। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ দেখায় যুব কংগ্রেস। তাঁর বাড়ির সামনে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। যুব কংগ্রেসের বক্তব্য যে অবিলম্বে ধর্মেন্দ্র প্রধানের পদত্যাগ করা উচিত শিক্ষামন্ত্রী পদ থেকে এবং সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্ত হওয়া উচিত এই দুর্নীতি মামলার। এবার দেখার বিষয় যে শেষ পর্যন্ত মামলার জল কতদূর গড়ায়। সব উত্তর পাওয়া যাবে কিছুদিনের মধ্যে।
‘সাতসকাল’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।