নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক প্রতিদিন সকালে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গতকালের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো গত ২৪ ঘন্টায়? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
নিউটাউনে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে স্থানীয় দোকানদারদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়লেন পুলিশ ও এনকেডিএ কর্মীরা
নবান্নের বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমক্যে নড়েচড়ে বসে পুরসভার পুরপ্রধান ও প্রশাসকরা। সাথে তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশও। নির্দেশ অনুযায়ী কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় উচ্ছেদ অভিযানে নামা হয়। তবে নিউটাউনের অ্যাক্সিস মল এলাকায় উচ্ছেদ করতে এলে স্থানীয় দোকানদারদের চাপের মুখে পড়ে এনকেডিএ কর্মীরা।
যেহেতু রাস্তার ফুটপাত ঘিরে রয়েছে বহু অস্থায়ী দোকান, তাই সেখানে উচ্ছেদ করতে আসা হয়। কিন্তু তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয় দোকানদাররা। তাদের বক্তব্য যে কোনোকিছু না জানিয়েই হঠাৎ এসে তাদের উঠে যেতে বলা হয়। এখানেই শেষ নয় তাদের আরো অভিযোগ যে হঠাৎ এসে এনকেডিএ কর্মীরা জিনিসপত্র ফেলতে শুরু করে এবং তারপরেই তারা বিক্ষোভ নামে। চাপে পড়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় এনকেডিএ কর্মীরা।
একই ঘটনা ঘটে কোল ভবনের সামনেও। উচ্ছেদ করতে এলে স্থানীয় দোকানদার ও হকাররা জমায়েত করতে শুরু করেন। এখানেই শেষ নয় এমনকি পুলিশের সঙ্গেও তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে তারা। এছাড়া এনকেডিএ মাইকিং পর্যন্ত করে। সবমিলিয়ে, গোটা নিউটাউন চত্বর একটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এই ঘটনার পর বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিরোধীদল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে গীরুয়া শিবির এমন কাজের নিন্দা জানায়। এখানেই শেষ নয়, তিনি আরো দাবি করেন যে রাজ্য সরকারের এমন সিদ্ধান্তের জন্য সাধারণ গরিব মানুষের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারি জমি আদৌ উদ্ধার করা হচ্ছেনা। সাধারণ গরিব মানুষের ক্ষতি করা হচ্ছে বিশেষ কয়েকটি এলাকায় এবং যা হচ্ছে সব ক্যামেরার সামনেই হচ্ছে। প্রচারের তাগিদ বেশি কাজের চেয়ে।”
সাংবাদিক বৈঠকে তিনি আরো বলেন, “বিজেপি পুর এলাকাগুলিতে পরিচ্ছন্নতার পক্ষে। কিন্তু আমার প্রশ্ন এটাই যে দার্জিলিং থেকে দিঘা, কলকাতা থেকে কাকদ্বীপ— সব জায়গাতেই এই কাজ করা হচ্ছে কি? নাকি শুধু বিধাননগর, হাতিবাগান ও উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার বিশেষ কিছু এলাকায় এই অভিযান চালানো হচ্ছে? এগুলো কি জেলা থেকে যে গরিব মানুষগুলি কলকাতায় এসে হকারি করে পেট চালানো তাদের জন্য? নাকি এই নিয়ে একটা সিস্টেম তৈরি হয়েছে গোটা রাজ্যে? আমার বক্তব্য এটাই যে প্রথমে তৈরি করুন একটি এসওপি। চিহ্নিত করুন সরকারি জমি। মানুষকে জমি ছাড়তে বলুন নোটিস দিয়ে।”
এরপর বিরোধী দলনেতা বলেন, “এই প্রান্তিক গরিব মানুষগুলির বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে তো বহু জায়গায় বলতে শোনা যায় যে তিনি অনেককে চাকরি দিয়েছেন। তাহলে এবার কয়েক লক্ষ হকারকেও চাকরি দিন। এই অভিযানের জন্য বহু গরীব মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। এদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।”
শেষে তিনি বলেন, “আমরা আর একটা দিন দেখবো। শুক্রবারও যদি এমন অত্যাচার চলে তাহলে আমরা হকারদের পাশে দাঁড়াবো। দরকার হলে বুলডোজারের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো আমি। গরীবদের জিনিসপত্র অন্যায়ভাবে তুলে নিচ্ছে লালবাজারের পুলিশ। যেহেতু বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় তৃণমূলের চেয়ে ভালো ফল করেছে বিজেপি। তাই শাসকদল জালা থেকে এসব করছে। বাধা দিন সকলে হকার উচ্ছেদ হলে। পাশে থাকবো আমরা। কর্মীদেরও অনুরোধ করবো। আশা করছি দ্রুত প্রত্যাহার করবেন মুখ্যমন্ত্রী এই অমানবিক নির্দেশ।”
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় অপ্রত্যাশিতভাবে বড় ব্যবধানে জয় পায় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কোনভাবেই দাগ কাটতে পারেনি গেরুয়া শিবির। তাদের তরফ থেকে যে আশা করা হয়েছিল, তা একেবারেই করে দেখাতে পারেনি তারা। কিন্তু পুরসভাগুলিতে খুব একটা ভালো ফল করতে সফল হয়নি ঘাসফুল শিবির, যা রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলেছে দলের সুপ্রিমো, তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এরপরই তিনি নবান্নে একটি বৈঠক ডাকেন পুরসভার পুরপ্রধান ও প্রশাসকদের নিয়ে এবং ধমক দেন সকলকে এবং স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যে কারোর কাজেই তিনি সন্তুষ্ট নন। পাশাপাশি, দেন একাধিক নির্দেশিকাও।
প্রশ্ন: এবার দেখার বিষয় যে আগামীদিনে এর ফল কি হবে? কিভাবে এই চাপ সামাল দেবে তৃণমূল কংগ্রেস? পরবর্তী পরিকল্পনা কি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের? বিজেপির তরফ থেকে কি স্ট্র্যাটেজি নেওয়া হবে? কোথায় এগোচ্ছে এই অধ্যায়? সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আর কিছুদিনের মধ্যে।
‘সাতসকাল’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।