নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক প্রতিদিন সকালে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গতকালের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো গত ২৪ ঘন্টায়? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
১৪ই আগস্ট আরজি কর হত্যাকান্ড নিয়ে উত্তাল হয় বিধানসভা। সেই চত্বরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি করেন এবং আগামীদিনে একাধিক কর্মসূচির ডাক দেন।
এছাড়াও এই ব্যাপারে বঙ্গ বিজেপির তরফ থেকে বাংলা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য ১৬ই আগস্ট বঙ্গ বিজেপির তরফ থেকে আরজি কর হাসপাতালের আশেপাশে এলাকায় বিক্ষোভে বসা হবে। এছাড়াও দলের মহিলা মোর্চার তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করা হবে। যদিও নবান্নের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে বন্ধের কোন প্রভাব পরিবহনে পড়বেনা এবং সবকিছু স্বাভাবিক থাকবে।
অন্যদিকে এই ঘটনার জেরে অশান্তির আশঙ্কায় বাতিল করা হয় ডুরান্ড কাপের ডার্বি ম্যাচ। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সামনে আরজি কর হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। লাঠিচার্জ করে পুলিশ এবং এই ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। এছাড়াও আরজি কর চত্বরে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। মৃত মহিলা চিকিৎসকের মা-বাবা আস্থা হারিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। পরিবারের দাবি যে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।
ঘটনার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসে যাতে বলা হয়েছে যে যৌন হেনস্থার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ডঃ কুনাল সরকার ও সুবর্ণ গোস্বামীকে তলব করে লালবাজার। এর প্রতিবাদে একঝাঁক আইনজীবী ও চিকিৎসক রাস্তায় নামে এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লালবাজার অবধি প্রতিবাদ মিছিল করে। তবে প্রায় এক ঘন্টা বাদে দুই ডাক্তার বেরিয়ে সবকিছু জানান সংবাদমাধ্যমকে এবং সবরকমভাবে পুলিশকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭।
সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে আরজি কর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি, ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে যাদের দায়িত্ব নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা এবং কি পদক্ষেপ করা সেগুলি জানানো। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে অনুরোধ করা হয় যাতে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। যদিও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় চিকিৎসকরা তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে যতক্ষণ না নিরাপত্তার দিকটা নিশ্চিত করা হচ্ছে ততক্ষণ কর্মবিরতি চলবে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২২শে আগস্ট। এছাড়া এবিভিপি ও কংগ্রেসের মিছিল ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় সল্টলেক ও ধর্মতলা এলাকায়। দুই পক্ষের কর্মী ও সমার্থক রাই পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের অভিযোগ তোলে।
অন্যদিকে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আদালতে ইডি তদন্তের দাবি জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। কংগ্রেসের লালবাজার অভিযান ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। আটক করা হয়েছে একাধিক প্রভাবশালী নেতাকে এবং তারপর অবস্থান বিক্ষোভে বসে কর্মীরা। বঙ্গ বিজেপির তরফ থেকেও ধরনায় বসা হয়। এরপর একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয় যাতে দলের নেতাদের সঙ্গে পা মেলান কাশ্মীর ফাইলস পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী।
সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানিতে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় সিবিআই ও রাজ্য পুলিশকে। যদিও শীর্ষ আদালত অনুরোধ করে চিকিৎসকরা যেন দ্রুত কাজে ফিরে আসে। দিল্লি এইমসের চিকিৎসকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলেও প্রত্যাহার করেনি আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। অন্যদিকে বঙ্গ বিজেপির স্বাস্থ্য ভবন অভিযান ঘিরে হইচই পড়ে যায় করুণাময়ী এলাকায়। গেরুয়া শিবিরের বেশ কয়েকজন নেতাকে আটক করে পুলিশ। পাশাপাশি, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়ায় পুলিশ।
অন্যদিকে মেডিকেল ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের প্রধান মুখ রিমঝিম সিনহা জানান আগামী কর্মসূচি কিরমভাবে হবে। পাশাপাশি, গোটা রাজ্যজুড়ে থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বঙ্গ বিজেপি। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে তারা। কলকাতা হাইকোর্টের ধাক্কা খায় রাজ্য সরকার। নবান্ন অভিযানে হ্যাঁ করে আদালত। এছাড়াও আরজি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্ব আদালত দিল সিবিআইকে।
সন্দীপ ঘোষ সহ একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই এবং উদ্ধার করে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। পাশাপাশি তল্লাশি চালানো হয় আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। এছাড়া ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে বঙ্গরত্ন পুরস্কার ফিরিয়ে দেন আলিপুরদুয়ারের লেখক-গবেষক পরিমল দে। বিজেপির তরফ থেকেও একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় আগামীদিনের জন্য।
নবান্ন অভিযান থেকে অশান্তি রুখতে প্রায় চার হাজার পুলিশকে পথে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। পাশাপাশি সাংবাদিক বৈঠক করে কুনাল ঘোষ দুটি ভিডিও দেখান যেখানে শোনা যায় যে চক্রান্ত করে লাশ ফেলা হতে পারে। সেই ভিডিও অনুযায়ী দুই বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও সেমিনার হলের সেই ভিডিওটি প্রকাশ্যে আছে যেখানে দেখা যায় অবাধে আসা যাওয়া চলছে অজস্র লোকের। যদিও ভিডিওটির সঙ্গে যে আসল ঘটনাস্থলের যোগ নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে পুলিশ।
২৭শে আগস্ট নবান্ন অভিযানে নামে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ। আন্দোলনের জেরে রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা বাংলা। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় সংঘর্ষ। জখম হয় দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন। যদিও পুলিশের বক্তব্য আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য ছিল অশান্তি ছড়ানো। উল্টে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। তবে এদিন নবান্ন অভিযান শেষ হতে না হতেই লালবাজার অভিযানে নামে গেরুয়া শিবির। সেখানে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এছাড়া বিজেপির তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ২৮শে আগস্ট ১২ ঘন্টা বাংলা বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি আগামীদিনে একাধিক কর্মসূচিরও কথা ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য সরকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে কোনরকমের কোন বন্ধ মানা হবেনা।
২৮শে আগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদ প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে রাজপথে ভিড় যেমন ঘাসফুল শিবিরের ছাত্ররা। যদিও ময়দানে নামে বিজেপিও ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধ সফল করতে। কিন্তু তেমন প্রভাব ফেলতে সফল হয়নি তারা। মেয়ো রোডে সভা থেকে একাধিক বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যে বিজেপি এই ঘটনাকে নিয়ে রাজনীতি করছে। পাশাপাশি, তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে তিনি চাইলেই পদক্ষেপ নিতে পারেন কিন্তু নিচ্ছেন না চিকিৎসকদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এছাড়াও একাধিক কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। অন্যদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দেন এবং জানান যে সুবিচার না পেলে এই ব্যাপার দিল্লি পর্যন্ত যাবে।
নবান্ন অভিযানে অশান্তি ছড়ানো ও এক পুলিশকে গুরুতর আহত করার জন্য গ্রেফতার করা হয় এক তরুণী ও এক যুবককে। পাশাপাশি, ছাত্র সমাজের তিন প্রধান মুখই ধরা পড়েছে পুলিশের জালে। এছাড়াও মৃত মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর হাসপাতালে তরফ থেকে প্রথম তিন কল প্রকাশ্যে আসে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা হুঁশিয়ারি দেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে মুখ্যমন্ত্রী যদি কোন পদক্ষেপ নেন তাঁদের বিরুদ্ধে, তাহলে গণহারে ইস্তফা দেবেন তাঁরা। এখানেই শেষ নয় বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ২রা সেপ্টেম্বর তাঁরা লালবাজার অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য মহিলা কমিশনের অফিস তালা অভিযান ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় সেই চত্বরে। ছাত্র সমাজের ধৃত ছাত্রনেতা সায়নকে জেলমুক্তির নির্দেশ দেয় আদালত।
মৃতার পরিবারকে ফোন করেন তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ। তিনি সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন এবং পরিবারের লোককে বলেন, “আমি বা দল চাইনা যে এমন কিছু মুখ থেকে বের যাতে আপনারা কষ্ট পান। যদি তেমন কোন কথা আমার মুখ থেকে শোনেন তাহলে আমাকে সরাসরি জানাবেন। সংশোধন করে দেবেন।” তিনি আরো বলেন, “আপনাদের যন্ত্রণা থেকে আপনারা যা পদক্ষেপ নেন না কেন, তা নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই। আমরা আপনাদের সঙ্গেই আছি এই ন্যায়বিচারের লড়াইতে। যদি মনে হয় কিছু ভুল হয়েছে, তাহলে সরাসরি ধরিয়ে দেবেন। সেভ করে রাখুন নম্বরটা।”
অবশেষে সন্দীপ ঘোষকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। যদিও গ্রেফতার করা হয়েছে দুর্নীতি মামলায়। অন্যদিকে, পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে লালবাজার অভিযানে নেমেছে জুনিয়র চিকিৎসকরা। এখনো তারা বসে ধর্না দিচ্ছে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে।
বামেদের মিছিল ঘিরে রনক্ষেত্রের চেহারা নেয় শ্যামবাজার চত্বর। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে তারা। রাত দখলের ডাক দেয় দলের যুব ও মহিলা সংগঠন। এছাড়া সন্দীপ ঘোষ কে আট দিনে হেফাজতের নির্দেশ দেয় সিবিআই আদালত। এমন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী পেশ করেন অপরাজিতা বিল।
জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফ থেকে ফের একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়। রাতে ফের তারা পথে নামেন হাতে প্রদীপ নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন সিনিয়র চিকিৎসকরাও। এছাড়া সন্দীপ ঘোষ দ্বারস্থ হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে। যদিও ৫ই সেপ্টেম্বর মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভবনা নেই সুপ্রিম কোর্টে।
সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে জানানো হয় যে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর। এছাড়া মাঝে ঘটে একটি চাঞ্চল্যকর কান্ড। প্রথমে মৃতার পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয় যে পুলিশের তরফ থেকে টাকার অফার করা হয়েছিল মুখ বন্ধ রাখার জন্য। যদিও পড়ে পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয় যে তাদের কোন টাকা অফার করা হয়নি। কিন্তু এরপর ফের পরিবার জানায় যে তাদের জোর করে এমন কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই এর জেনে চাপে পড়ে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
ফের নবান্ন অভিযানের সম্ভাবনা রয়েছে এমনটাই জানানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের তরফ থেকে। পুজোর আগেই কোন বড় কর্মসূচি নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সন্দীপ ঘোষের বেলেঘাটার বাড়ি সহ শ্বশুরবাড়ি ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে হানা দিয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। অন্যদিকে আদালতে ধরনার অনুমতি পেয়েছেন আনিস পিতা সালেম খান। ডিওয়াইএফআইয়ের স্বাস্থ্য দপ্তর অভিযান ঘিরে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয় হাওড়ায়। ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে গেলে পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি। ফের রাত দখলের ডাক দেওয়া হয় রিমঝিম সিনহাদের তরফ থেকে।
৮ই সেপ্টেম্বর মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয় জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফ থেকে। টলিপাড়া থেকে শুরু করে ক্রীড়া জগতের সকলেই রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানান। এছাড়া রাত দখলের ডাক দেন রিমঝিম সিনহারা। তবে নৈহাটিতে আন্দোলনকারীদের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
৯ই সেপ্টেম্বর এই মামলায় বড় রায় দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের তরফ থেকে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় যেনো ১০ই সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটার মধ্যে তাঁরা কাজে ফেরেন, নাহলে পদক্ষেপ নিতে পারবে রাজ্য সরকার। বেঞ্চের তরফ থেকে এটাও জানিয়ে দেওয়া হয় যে তেমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে বাধা দিতে পারবেনা। যদিও নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে একেবারেই পিছিয়ে আসতে নারাজ জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাদের তরফ থেকেও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হলো যে আন্দোলন জারি থাকবে এবং ১০ই সেপ্টেম্বর তাঁরা স্বাস্থ্য ভবন অভিযানে নামবেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পরোয়া না করে ১০ই সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের নামেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে ইমেল করে জানানো হয় ১০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে বসে আলোচনা করার কথা। কিন্তু কেউ তাতে সাড়া দেননি। সারারাত অবস্থান নিয়ে বসে জুনিয়র চিকিৎসকরা।
এখনো জারি রয়েছে চিকিৎসকদের অবস্থান-বিক্ষোভ যদি মাঝরাতে নির্যাতিতার মা-বাবা সেখানে যোগদান দেন এবং সরকারের জন্য বার্তা রাখেন। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার বার্তা দেওয়া হলেও চিকিৎসকরা একাধিক শর্ত চাপান। যদিও এই সবকিছু দেখে তৃণমূলের সন্দেহ যে আন্দোলনের পেছনে রাজনীতি রয়েছে।
তিনদিন ধরে আন্দোলন চলা সত্ত্বেও হলোনা সমস্যার সমাধান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন না আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। লাইভ স্ট্রিমিং করা হবেনা বলেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের তরফ থেকে। এমনটাই জানানো হয়েছে। যদি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন এই প্রসঙ্গে এবং জানান যে মানুষের স্বার্থে তিনি পদত্যাগ করতেও রাজি কারণ তিনি চান অভয়া বিচার পাক এবং সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাক।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফ থেকে, যারা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন তাদের পরিবারকে দুই লক্ষ টাকা করে, আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন। তবে বিস্ফোরক তথ্য পেশ করেন তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুনাল ঘোষ নিজের এক্স হ্যান্ডেল থেকে একটি কথোপকথন পেশ করে তিনি দাবি করেন যে বামেরা চক্রান্ত করছে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের উপর হামলা করা এবং সরকারকে কালিমালিপ্ত করার। এছাড়া আরো একটি ভিডিও পেশ করেছেন তিনি যেখানে দেখা যাচ্ছে সল্টলেকের বিজেপি অফিসে সম্ভবত কয়েকজন চিকিৎসক গেছেন এবং দাবি করছেন যে বিজেপি সাহায্যে চিকিৎসকদের উস্কানি দেওয়ার কাজ চলছে এবং সরকারের উপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে।
কুনাল ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় দুজনকে, যাদের মধ্যে একজন ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান দাশগুপ্ত। এরপরই সিপিএমের তরফ থেকে দাবি করা হয় যে তৃণমূল সর্বশক্তি লাগে বামেদের আটকানোর চেষ্টা করছে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী নিজে গিয়ে ধর্নাস্থলে হাজির হন এবং অনুরোধ করেন জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন তুলে নেওয়ার জন্য এবং তাঁর বাড়িতে বৈঠকের অনুরোধও করেন। কিন্তু বাড়ির দোরগোড়া থেকেও ভেস্তে যায় বৈঠক। নিজেদের দাবি থেকে অনড় থাকেন চিকিৎসকরা। যদিও ঘাসফুল শিবিরের বক্তব্য সবরকম চেষ্টা করা হয়েছিল বৈঠকের জন্য কিন্তু কয়েকজন আন্দোলনকারীর জেদের জন্য তা ভেস্তে যায়। বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। যদিও আন্দোলনকারীদের বক্তব্য তাদের ঘাড়-ধাক্কা দিয়ে তাড়ানো হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সেদিনের রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আমরা যখন বেরোচ্ছি, তখন ওরা এসে বলে বৈঠক করবো। তখন মুখ্য সচিব বলেন যে এখন রাত ৯টা বেজে গিয়েছে। আপনারা ফিরে যান। পরে বৈঠক হবে। কিন্তু ওদের তখনই বৈঠক চাই। বসে আছি কি রাজ্য সরকার? মানে একটা ব্যাপার চলছে যে ওরা যখন চাইবে রাজ্য সরকারকে বৈঠকে বসতে হবে আর তা না হলে সরকারকে দোষারোপ করবে। এরপর যখন চিকিৎসকদের থেকে আবেদন আসবে তখন দেখা যাবে।”
অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা এবং কালীঘাটে যান বৈঠক করতে। প্রায় দুই ঘন্টা বাদে বেরন তারা এবং সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়ে দেন যে কিছু দাবি মানা হয়েছে এবং কিছু হয়নি, তবে কর্মবিরতি জারি থাকবে। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের জানান যে চিকিৎসকদের দাবি অনুযায়ী তিনি সিপি সহ একাধিক ব্যক্তিকে তাঁদের পদ থেকে সরিয়েছেন।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানিতে রাজ্যকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয় জুনিয়র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে যাতে কোনরকম শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করতে। পাশাপাশি, সমস্ত মেডিকেল পড়ুয়াদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ পর্যন্ত দেওয়া হয়। তবে এদিন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংকে ধমকের সুরে জানান যে আদালত কোন রাজনৈতিক মঞ্চ নয় এবং এখানে মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগের দাবি করা যাবেনা। এরপরই সিপি পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে নতুন সিপি করা হয় মনোজকুমার বর্মাকে। পাশাপাশি, আরও রদবদল করা হয়। যদিও চিকিৎসকদের বেশকিছু দাবি মানা হয়নি সেই কারণে তারা ফের বৈঠকের অনুরোধ করেন। মুখ্যসচিবের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক হয় এবং জানা গিয়েছে যে তাদের অধিকাংশ দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে।
অবশেষে তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে আগামী ২১শে সেপ্টেম্বর থেকে তাঁরা জরুরী পরিষেবা বিভাগে যোগ দেবেন। তবে এটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে আংশিক কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং প্রয়োজন পড়লে ফের পূর্ণ কর্ম বিরতিতে নামবেন তাঁরা। অন্যদিকে রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ২০শে সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য ভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মিছিল করেন। তাতে যোগ দেন অনেকেই। একেবারে দেখার মতো ভিড় ছিল। তবে রাজ্য সরকারের বদলে এদিন উঠছিল সিবিআই বিরোধী স্লোগান। পাশাপাশি, এদিন জেলমুক্ত হন কলতান দাশগুপ্ত।
এছাড়া আরজি কর কাণ্ডে জড়িত থাকার জেরে আইএমএর বৈঠক থেকে বের করে দেওয়া হয় তিন চিকিৎসককে। অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কোন ডাক্তারকে রাখা হবেনা সংগঠনে। এখানেই শেষ নয়, কলকাতা শাখা ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব পর্যন্ত দেওয়া হয়। সংগঠনের বঙ্গীয় শাখার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন শান্তনু সেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পানিহাটি তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষকে তলব করে সিবিআই। সাত ঘন্টা পর তিনি দপ্তর থেকে বেরিয়ে জানান যে দুই পক্ষের মধ্যেই অনেক কথা হয়েছে এবং তিনি তা প্রকাশ্যে আনতে চান না। এছাড়াও শীর্ষ আদালতেও পিছিয়ে গেছে মামলার শুনানি। ২৭শে সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে শুনানি হবে ৩০শে সেপ্টেম্বর।
জুনিয়র চিকিৎসকদের এই আন্দোলনকে নাটক তকমা দেন বিজেপি নেতা, তথা প্রাক্তন সাংসদ, দিলীপ ঘোষ। তিনি দাবি করেন যে অযথা মানুষকে দেড় মাস কষ্ট করতে হলো। যদিও আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরাও পাল্টা দিয়েছেন তাঁকে। তাঁদের বক্তব্য, এমন মন্তব্য করে তিনি সাধারণ মানুষকে অপমান করেছেন। পাশাপাশি, প্রশ্ন ছেড়ে দিয়েছেন যে সুপ্রিম কোর্টে মামলা এত দেরি হচ্ছে কেন।
অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কালিঘাটে একটি জনসভা থেকে জানান যে দুর্গাপূজায় এই বিষয়ে আন্দোলন জারি থাকবে বিজেপির। জুনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন যে আগামী ২৭শে সেপ্টেম্বর একটি নাগরিক সম্মেলন হবে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে দেবিপক্ষের সূচনায় জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন ফিরতে পারে নতুন রূপে এমনটাই আলোচনা করা হয়েছে জিবি বৈঠকে।
এছাড়া মুখ্য সচিব কেঁপে চিঠি দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা এবং দাবি করেছেন এখনো অনেক দাবি তাঁদের মেনে নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি জুনিয়র ডাক্তারদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে রে মহালয়ার ভোরে এবং অষ্টমীতে ফের প্রতিবাদ জানাতে পথে নামবেন তাঁরা। কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকেও রাজ্যের কাছে হলফনামা চাওয়া হয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলিতে থ্রেট কালচার নিয়ে।
২৭ সেপ্টেম্বর এসএসকেএমের গণ কনভেনশনে আগামীদিনের কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁরা বলেন যে পুজোর সময় তাঁরা পথে নেমে আন্দোলন করবেন। এছাড়া মহালয়ার দিনেও তাঁদের কর্মসূচির কথা তাঁরা ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, উঠে আসে বিস্ফোরক তথ্য। জানা গিয়েছে অভয়ার অন্য হাসপাতালে ময়নাতদন্ত এবং সেমিনার রুম সংলগ্ন দেওয়াল ভাঙ্গার পিছনে হাত রয়েছে জুনিয়র চিকিৎসকদের। এছাড়া ২৮শে সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উপর নির্ভর করবে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ। প্রয়োজন পড়লে ফের তারা পূর্ণ কর্মবিরতিতে নামবেন।
সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের ভূমিকায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে জরুরি পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি ওপিডি ও আইপিডি দুটোতেই তাদের ফিরতে হবে। যদিও আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বক্তব্য যে সুপ্রিম কোর্টের শুনানির প্রতিলিপীর পর বৈঠক হবে এবং সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জিবি বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ফের পূর্ণ কর্মবিরতিতে নামবেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী মহালয়ার আগের দিন কলকাতার রাজপথে ফের মিছিলে নামেন তাঁরা। কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত মিছিল করেন তাঁরা। মিছিলে যোগ দেন বেশকিছু সিনিয়র চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষ। সকলেই এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ী করেন।
‘সাতসকাল’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।