নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক প্রতিদিন সকালে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গতকালের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো গত ২৪ ঘন্টায়? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
সম্প্রতি সদ্য জয়ী মোদি সরকার নিজেদের প্রথম বাজেট পেশ করে সংসদে। যাবতীয় সব ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। ঘোষণায় দেখা যায় যে সবকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যের জন্য অজস্র টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বিশেষ করে একাধিক আর্থিক প্যাকেজ ও সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য। কিন্তু অন্যদিকে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির জন্য কিছুই ব্যবস্থা করা হয়নি। এরপরই ক্ষোভ উগড়ে দেয় ইন্ডিয়া জোটের সকল শরীক দল। সকলের একটাই বক্তব্য যে এই বাজেট তৈরি করা হয়েছে কেন্দ্র সরকারের নিজের গোদি বাঁচানোর জন্য। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য যে যেহেতু এই মুহূর্তে নীতিশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নাইডু টিডিপি কেন্দ্র সরকারের রাজত্ব ধরে রাখতে পারে, সেই কারণেই তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য এমন বাজেট তৈরি করেছে গেরুয়া শিবির।
এরপরে সংসদের ভিতরে ও বাইরে সুর চড়িয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে দাবি করেছে যে এটি আসলে ‘বিহার-অন্ধ্র বাজেট’। দলের বর্ষিয়ান নেতা, তথা শ্রীরামপুর সাংসদ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন যে এটি ‘কুরসি বাঁচাও বাজেট’। এখানেই শেষ নয় তিনি আরো বলেন যে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার অত্যন্ত বাংলা বিদ্বেষী এবং তারা কোনদিনই চায়না বাংলার ভালো হোক। এখানেই শেষ নয় তিনি আরো দাবি করেছেন যে বাংলার মানুষ এর জবাব ভোটবাক্সে দেবেন এবং শীঘ্রই বিজেপি শূন্যে নেমে আসবে বাংলায়।
একই সুর শোনা যায় দলের সেনাপতি, তথা ডায়মন্ড হারবার সাংসদ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তিনিও দাবি করেন যে এই বাজেট নিজের রাজত্ব বাঁচানোর জন্য তৈরি করেছে কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরো জানান যে বাংলার প্রতি যে অন্যায় গেরুয়া শিবিরের তরফ থেকে করা হয়েছে, তার জবাব আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দেবে বাংলার সাধারণ মানুষ। অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন যে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার অধিকাংশ মানুষ বিজেপিকে ভোট দেবেনা এবং বড় ব্যবধানে জিতবে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমগুলির মুখোমুখি হয় এক হাত নেন কেন্দ্র সরকারকে। তিনিও দাবি করেন যে এমন বাজেট তৈরি করে রীতিমতো অন্যায় করা হয়েছে বাংলা ও তাদের মানুষের সঙ্গে। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “একটা অত্যন্ত দিশাহীন ও জনগণবিরোধী বাজেট তৈরি করেছে কেন্দ্র সরকার। ওরা কোনদিন গরীবদের দেখেনি। বাংলাকে বঞ্চিত করেছে কেন্দ্র সরকার। তবে আমরাও ওদের দয়া চাইনা। বাংলার মানুষও বিজেপিকে ছেড়ে কথা বলবেনা। সকলে আওয়াজ তুলবে বিজেপির বিরুদ্ধে। ভোটের আগে এসে ওরা সকলেই অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু যেই ভোট মিটে যায়, ওরা সব ভুলে যায়। এটাই ওদের ধরন। বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশকে দিচ্ছে, তাতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। কিন্তু বাংলার সঙ্গে এমন আচরণ কেন? আমরা এখনো তোদের থেকে এক লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাই।”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সংসদে ঝড় তোলেন কেন্দ্র সরকারের একতরফা বাজেট নিয়ে। তিনি সরাসরি আক্রমণ করে নিজের অবস্থান প্রকাশ্যে আনেন এবং দাবি করেন যে এই বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু দেওয়া নেই। এখানেই শেষ নয় এমনকি স্পিকারকেও একহাত নিয়ে বসেন ঘাসফুল সেনাপতি। কৃষক মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলতেই স্পিকার জানান যে এই বিষয় নিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলা হয়ে গেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদ জানাতে গেলে তাঁকে স্পিকার বলেন যে তিনি তাঁর কথা শুনতে বাধ্য। ঠিক সেই মুহূর্তেই গেরুয়া শিবিরের সাংসদরা টেবিল চাপড়াতে শুরু করেন স্পিকারের কথা শুনে। তা দেখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজ যারা তালি দিচ্ছে, তাদের জন্যই কিন্তু ৭০০ কৃষক মারা গেছে। কতজনকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এরা?” এরপর স্পিকারকে ঝাঁজালো ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, “নেহরুর আমলে কি হয়েছে, তা নিয়ে কথা বললে আপনি চুপ থাকেন। কিন্তু যে কেউ আট বছর আগে নোটবন্দির কথা তোলে, তখন আপনি তাদের থামিয়ে দেন।”
তবে তৃণমূল কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টির লড়াই আরো উগ্র হয়ে ওঠে নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে। দিল্লি যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে কথা বলার সুযোগ না দিলে তিনি বেরিয়ে আসবেন এবং ঠিক সেটাই তিনি করে দেখিয়েছেন। তিনি বৈঠক থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে তাঁকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেই তিনি বেরিয়ে এসেছেন। এখানেই শেষ নয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরো জানান যে এনডিএ জোটের দলগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের অনেকক্ষণ কথা বলার সময় দেওয়া হয়েছে কিন্তু বিরোধীদের নয়। পাশাপাশি, তিনি এটাও জানিয়ে দেন যে এই অপমান শুধু তৃণমূল কংগ্রেসের অপমান নয়, বরং সকল বিরোধী দলের অপমান। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন এই অভিযোগ এবং দাবি করেছেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছিল নিজের দাবিদাওয়া তুলে ধরার জন্য, কিন্তু তিনি তা না করে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। কলকাতা ফিরে তৃণমূল সুপ্রিমো জানান যে কেন্দ্রের তরফ থেকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও ইন্ডিয়া জোটের দলগুলি মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য প্রভাবশালী নেতারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ান।
এই ইস্যুকে ঘিরে উত্তাল হয় রাজ্য বিধানসভা। আলোচনা করতে চাইলে বিজেপি বিধায়করা বিক্ষোভ দেখিয়ে ওয়াকআউট করেন। একদিকে গেরুয়া শিবিরের দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিথ্যা কথা বলছেন। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য যে তৃণমূল সুপ্রিমোকে অপমান করেছে বিজেপি। এখানেই শেষ নয় তাদের আরো অভিযোগ যে বাংলাকেও বঞ্চনা করা হয়েছে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে। বাইরে বেরিয়ে বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক শংকর ঘোষ শাসকদলকে একহাত নেন। তিনি উপস্থিত সকল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিথ্যা খুব ভালোই বলতে পারে। ইতিমধ্যেই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে যে উনি মিথ্যা কথা বলছেন। প্রথমে যাবেন কি যাবেন না তা নিয়ে টালবাহানা চলছিল। শেষে উনি ঠিক করলেন যে ওখানে গিয়ে নাটক করবেন আর ঠিক সেটাই করেছেন। এগুলো নিয়ে আবার আলোচনা করতে হবে? ফিরহাদ হাকিম অমুসলিমদের ইসলাম ধর্মে আনার কথা বলছেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনার অনুমতি পাওয়া যায়না। কিন্তু ওনার নাটক নিয়ে আলোচনা করতে হবে।”
এরপর পক্ষপাতিত্ব সহ ১৮ দফার অভিযোগ তুলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনল বিজেপির পরিষদীয় দল। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, “মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে বিধানসভার বাইরের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেন তিনি। উনি শাসক দলের বিধায়কদের বিরোধী বিধায়কদের বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব আনতে উৎসাহিত করেন স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলে। উনি পক্ষপাতিত্ব আচরণ করেন।” এই প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আর কয়েকটা দিন অবশিষ্ট রয়েছেবিধানসভা অধিবেশনের। এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হোক এর মধ্যে।”
‘সাতসকাল’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।