Mysterious Twin Village in India
মহাভারতে গান্ধারীর একত্রে একশটি পুত্র ও একটি কণ্যার জন্মের ইতিহাস আমরা সকলেই জানি। বর্তমানে ২০০৮ বা ২০০৯ সালে একাধিক জন্মদানের সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছেন আমেরিকার এক জননী, নাম নাদিয়া সুলতানা। উনি একত্রে বারোটি সন্তানের জন্ম দেন। ভারতবর্ষ এমনিতে জমজ সন্তান বা একাধিক জন্মের হারের দিক থেকে অন্যান্য দেশের থেকে নিচের দিকেই আছে। সরকারি সার্ভে অনুযায়ী ভারতে যমজের হার হল – প্রত্যেক ১০০০ জনে ৯ জন। কিন্তু কেরলের মালাপ্পুরম জেলার কোধিনি গ্রামটি যমজ ও একাধিক জন্মের হারের দিক থেকে গোটা বিশ্বে বিশেষ ভাবে আলোচিত।
সরকারি সার্ভে গুলি বলছে কোধিনি গ্রামে – “১০০ জোড়া” একাধিক জন্ম, “২০৪ জোড়া” যমজ ও ত্রয়ীর সংখ্যা দুই জোড়া। যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়া এই গ্রামে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। ওখানকার স্থানীয়দের কথা অনুযায়ী ১৯৪৯ সালে গ্রামে প্রথম যমজের জন্ম হয়। যদিও কোধিনি একাই এমন রহস্যময়ী নয়। নাইজেরিয়ার Lgbo-Ora তেও একই ঘটনা ঘটে চলেছে। ডাক্তার এবং বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে বলেছেন ঐখানের মহিলাদের খাদ্যাভ্যাসের জন্য, ওষুধের কেমিক্যাল রিয়াকশনের জন্য এরকম ঘটনা ঘটে। কিন্তু কোধিনির ক্ষেত্রে তারা তেমন কিছু সূত্র খুঁজে পায়নি। কেউ কেউ অবশ্য বলেন বটে যে কোধিনির জল থেকে কোনো কেমিক্যাল রিয়াকশনের ফলে এমন ঘটে, তবে তা প্রমাণ করা যায় নি। মহামারীর প্রকোপ কমে গেলে এই রহস্যময়ী গ্রামটি কে দর্শন করে আসতে হবে।
Modern Polo migrated from India to England & NewYork….
পোলো খেলাটি সম্পর্কে আমার একসময় ধারণা ছিল যে এই খেলাটি বোধহয় গোড়া সাহেবদের খেলা। কিন্তু গোড়া সাহেবরা যে এই খেলাটি আমার দেশের থেকেই ওপারে নিজেদের দেশে নিয়ে গেছে সে বিষয়ে অজ্ঞাত ছিলাম।
১৮৫৮ সালে ক্যাপ্টেন রবার্ট স্টুয়ার্ট ও মেজর জেনারেল জো শেরার ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্য মনিপুরে কয়েকজন স্থানীয় যুবককে প্রথমবার পোলো খেলতে দেখেন। মনিপুর বাসিরা এই খেলাটিকে বলত – সাগোল কাঙ্গজেই, কানজাই বাজি বা পুলু। দুই গোড়া সাহেবের এই ঘোড়া চেপে বল খেলা খুবই মনে ধরে। তারা এই খেলাটি নিজেদের দেশে নিয়ে যান। সেখানে খেলার কিছু নিয়ম কানুন পরিবর্তন করে খেলাটিকে চালু করে দেন ইংল্যান্ডে। জন্ম হয় মডার্ন পোলো খেলার। ১৮৬১ সালে ক্যালকাটা পোলো ক্লাবের প্রতিষ্ঠা হয় এই দুজনের হাতেই। ক্যালকাটা পোলো ক্লাবেই পরবর্তী সময়ে পোলো খেলার সংঘবদ্ধ নিয়মাবলী তৈরী হয়। এরপর ১৮৭৬ সালে নিউইয়র্কের হেরাল্ডের প্রকাশক জেমস গর্ডন বেনেট ইংল্যান্ডে কাজে এসে পোলো খেলাটি দেখতে পান এবং ভালো লাগার সাথে সাথেই উনি খেলাটিকে নিউইয়র্কে নিয়ে যান। ইউরোপ আমেরিকার অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা এখন “সাগোল কাঙ্গজেই” বা মর্ডান পোলো যার জন্ম এই ভারতেই। বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন পোলো গ্রাউন্ডটিও হল ইম্ফল পোলো গ্রাউন্ড।
পোলোর আদত উৎপত্তি ঠিক কোথায় তা জানা যায় না। তবে এটি পারস্য দেশের (বর্তমানে ইরান) সনাতন যোরাস্ট্রিয়ান ধর্মের লোকেরা ১ম শতাব্দী এডি থেকে প্রথম খেলা শুরু করেছিলেন বলে ধরা হয়। পারস্যে এই খেলাটিকে “চৌগান” খেলা বলা হয়। আরবের মুসলিম শাসকরা সপ্তম শতাব্দীতে পারস্য দখল করার পর সম্ভবত আরব শাসকদের হাত ধরেই এই খেলাটি ছড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যে, ভারত, চীন, তিব্বতে, জাপান সহ অন্যান্য দেশে। কারণ শোনা যায় কুতুবউদ্দিন আইবক ভারতে প্রথম খেলাটি নিয়ে আসেন। কুতুবউদ্দিন আইবক নাকি পোলো খেলার সময়ই মারা যান। তবে কিছু তথ্য বলছে যে ভারতের মনিপুরে এই খেলাটি আগে থেকেই খেলা হত। একটি কাঠের বল, ম্যালেট ও পোলোপনি নামক ছোট জাতীয় এক ঘোড়ার সহযোগে মনিপুর বাসি এটি খেলতো। খেলাটি মূলত বড়লোকের খেলা হিসাবেই মনে করা হত। মনিপুরে তো এই খেলা এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে ঐ ছোট জাতীয় ঘোড়া গুলিকে নিয়ে গানও বাঁধা হত। পোলোপনি ঘোড়া গুলিকে মনিপুরবাসি পূজাও করত। তবে বর্তমানে পোলোপনির অবস্থা খুবই শোচনীয়। তাদের বিচরণের খোলা মাঠ গুলো আজ মানুষের দখলে। মানুষরা তাদের আর আগের মতন যত্ন করেন না, খেতেও দেন না। বাধ্য হয়ে পনিরা আজ আবর্জনা ভক্ষণ করে জীবন ধারণ করছে এবং ধীরে ধীরে সংখ্যায় কমে যাচ্ছে।
২৪শে আগস্ট আমাদের প্রাণের শহর কলকাতার জন্মদিন
কথাটা এত সহজভাবে হয়তো বলে দেওয়া যায়না। ১৬৯০ সালের ২৪ শে আগস্ট অর্থাৎ আজকের দিনে জোব চার্নক সাহেব প্রথম কলকাতায় পা রাখেন, তাই এই দিনটাই নাকি কলকাতার জন্মদিন। কথাটা সত্যি নয়। এর আগেও তিনি দু’বার কলকাতায় আসেন। তখন কলকাতা এত বড় শহর ছিলনা। আজকের বাবুঘাট এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলটাই ছিল ডিহি কলকাতা। বিড়লা প্ল্যানেটরিয়াম, ফোর্ট উইলিয়াম, ক্যাথেড্রাল চার্চ অঞ্চলটা ছিল গোবিন্দপুর। আর বাগবাজার-শ্যামবাজার-শোভাবাজার অঞ্চলটা ছিল সুতানুটি গ্রাম।
১৬৯৮ সালের নভেম্বরে জোব চার্নকের জামাই আয়ার সাহেব এখানকার পূর্বতন জমিদার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের থেকে ১৩০০ টাকার বিনিময়ে কলকাতা, গোবিন্দপুর ও সুতানুটি এই তিনটি গ্রামের জমিদারি কিনে নেন ও আধুনিক কলকাতা শহরের সূচনা করেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি, পুরাতন ‘কলিকাতা’ নামটি পরিবর্তন করে কোম্পানি একত্রে এই তিনটি গ্রামকে ‘ক্যালকাটা’ নামে ডাকতে শুরু করেন দক্ষিণ ভারতের ‘কালিকট’ অঞ্চলের নামের সঙ্গে মিল রাখতে। সে কারণ অবশ্য অন্যদিন আলোচনা করব। যদিও কলকাতার নাম পাল্টানোর চেষ্টা আরেকবার হয়েছিল। নবাব সিরাজদ্দৌলা ১৭৫৬ সালের জুন মাসে যখন কলকাতা আক্রমণ করেন তখন ইংরেজদের পরাজিত করে কলকাতা নগরী অধিকার করে নেন এবং কলকাতার নতুন নাম রাখেন ‘আলিনগর’ (তাঁর মায়ের বাবা আলিবর্দি খানের নামে)।
তাহলে দেখাই যাচ্ছে কলকাতা গ্রাম বহু আগে থেকেই ছিল। বিপ্রদাস পিপলাইয়ের মনসামঙ্গল কাব্যেও কলকাতা গ্রামের উল্লেখ রয়েছে। এই মর্মে কলকাতার পূর্বতন জমিদার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের তরফে করা একটি মামলার ফলস্বরূপ কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, জোব চার্নক কখনই কলকাতা শহরের প্রতিষ্ঠাতা নয়, আর ২৪শে আগস্ট মোটেই কলকাতার জন্মদিন নয়। কলকাতার ইতিহাস অতি প্রাচীন।
এ শহরটা জাস্ট একদিনে গড়ে ওঠেনি। তিল তিল করে সেজে উঠেছে আমাদের এই কল্লোলিনী তিলোত্তমা। এ শহর রবীন্দ্রনাথের শহর, এ শহর জীবনানন্দ, শক্তি, সুনীলের… এ শহর নেতাজীর… সত্যজিৎ, মৃণালের… আরও অনেক বরণীয় মানুষের। এ শহর মানুষকে আপন করতে জানে।
এ শহরকে ভালোবেসে মমতাময়ী মাদার টেরিজা আমৃত্যু থেকে গেছেন। এ আমাদের গর্বের শহর, ঐতিহ্যের শহর, সংস্কৃতির পীঠস্থান। এ শহর প্রেমের, এ শহর আনন্দের, এ শহর আমাদের আবেগের… নচিকেতা থেকে অনুপম এই শহরকে নিয়ে ভালোবেসে গান বেঁধেছে…
অনেকগুলো কথা লিখব ভেবেছিলাম এই শহর নিয়ে… পারছিনা, চোখ ঝাপসা হচ্ছে.. গলা বুজে আসছে.. আবেগে..
লেখিকা: সায়নী দাশগুপ্ত