নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক প্রতিদিন সকালে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গতকালের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো গত ২৪ ঘন্টায়? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসছে হিংসার খবর। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযোগ যে তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সন্ত্রাস চালাচ্ছে রাজ্যজুড়ে এবং লাগাতার হামলা করে চলেছে বিজেপি কর্মীদের উপর। এমন পরিস্থিতিতে ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্তদের নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু রাজভবন যাওয়ার পথে ধর্মতলার কাছে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। তা দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ক্ষোভ উগরে দেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন যে এর শেষ দেখে তিনি ছাড়বেন এবং প্রয়োজনে রাজ্যপালকে সমস্ত অভিযোগ লিখিতভাবে জানাবেন এবং তাঁর সাহায্য চাইবেন।
কিন্তু এখানে ব্যাপারটা থেমে যায়নি। জল গড়ায় কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত। সেখানে রাজ্য পুলিশকে তুলোধোনা করেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা এবং শুভেন্দু অধিকারীকে শর্তসাপেক্ষ অনুমতি দেন রাজভবনে যাওয়ার জন্য। তিনি জানিয়ে দেন যে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গেলে শুভেন্দু অধিকারী কে আগে অনুমতি নিতে হবে এবং অনুমতি পেলেই তবেই শুভেন্দু অধিকারী ও ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত বিজেপি কর্মীরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। তবে তার সঙ্গে বিচারপতি এটাও জানিয়ে দেন যে কতগুলি গাড়ি রাজভবনে ঢুকবে তা পুলিশকে জানিয়ে দিতে হবে। যদিও বিজেপির বক্তব্য যে তারা হেটেই রাজভবন যাবে এবং এরপরই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে শনাক্তকরণের দায়িত্ব শুভেন্দু অধিকারীদের মধ্যেই কাউকে একজন নিতে হবে। তাতে সহমত জানান বিচারপতি অমৃতা সিনহা এবং বলেন কারোর পরিচয় নথিবদ্ধ করলে চলবেনা। নাহলে পরে হেনস্তার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার, অর্থাৎ ১৯শে জুন, তিনি আদালতে গিয়ে রাজভবনের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভের অনুমতি চান। মামলা দায়ের করার অনুমতিও পান বিচারপতি অমৃতা সিনহার তরফ থেকে। তবে এদিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় বিরোধী দলনেতাকে। বিচারপতির প্রশ্ন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস বসেছিল বলেই কি সেই স্থানে শুভেন্দু অধিকারীকে অবস্থান-বিক্ষোভে বসতে হবে। এছাড়া আদালতের তরফ থেকে একটি বিকল্প জায়গা খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং সেটা জানানোর কথা অবধি বলা হয়। যদিও অবশেষে আইনি লড়াই জেতেন বিরোধী দলনেতা এবং তিনি রাজভবনের সামনে ধরনার অনুমতি পান। তবে আদালতের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় যে ৩০০র বেশি বিজেপি কর্মী নিয়ে ধরনা করা যাবেনা।
যদিও এরপর তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলার পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। রাজনৈতিক হিংসা থেকে শুরু করে জেসিবি-জয়ন্ত সিংদের দাপট, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে সবকিছু নিয়েই আলোচনা হয়। সেই ছবি তিনি নিজের এক্স হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করেন এবং এরপরই শুরু হয় কমেন্টের বন্যা। একে অপরকে অনলাইনেই আক্রমণ করেন তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থক ও কর্মীরা। বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন মত দেয় এই প্রসঙ্গে। যদিও শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সবরকমভাবে দল ও দলের কর্মীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
অনুমতি অনুযায়ী রবিবার, অর্থাৎ ১৪ই জুলাই, শুভেন্দু অধিকারী রাজভবনের সামনে বসেন ৩০০ বিজেপি কর্মীকে নিয়ে। এদিন উপস্থিত ছিলেন তাপস রায়, কৌস্তব বাগচী সহ গেরুয়া শিবিরের জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতারা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর দুটো অবধি ধরনার অনুমতি পান বিরোধী দলনেতা। এদিন সকলের গলায় পোস্টার ঝোলানো ছিল, যাতে ছবি দিয়ে দাবি করা হয়েছে যে প্রতিনিয়ত বাংলায় গণতন্ত্রের হত্যা করা হচ্ছে। এদিন মহিলা বিজেপি কর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কোনরকম কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেই কথা মাথায় রেখে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়েছিল রাজভবন চত্বরে।
একদিন সকলের উদ্দেশ্যে বার্তা রাখেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কটাক্ষ করেন রাজ্য সরকারের। তিনি বলেন যে ২১শে জুলাই যখন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস একদিকে শহীদ দিবস পালন করবে তখন অন্যদিকে বিজেপি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করবে। তবে এদিন একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন তিনি। বিরোধী দলনেতা দাবি করেন যে রাজ্য সরকার হিন্দুদের ভোট দেওয়াতে বাধা দিয়েছেন এবং শীঘ্রই তিনি তাদের নিয়ে একটি বড় আন্দোলনে নামবেন। পাশাপাশি, তিনি সকলকে অনুরোধ করেন পথে নামার, যাতে তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায়।
এরপর মঙ্গলবার ১৬ই জুলাই শুভেন্দু অধিকারী, শঙ্কুদেব পন্ডা ও তমগ্ন ঘোষের মতো প্রভাবশালী বিজেপি নেতাদের সঙ্গে রাজভবন জান ১০০জন আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের নিয়ে। রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি অনুরোধ করেন আক্রান্তদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কথা বলানোর জন্য। এরপর বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান যে মুখ্য নির্বাচন কমিশনকে ভোট লুট প্রসঙ্গে জানাবেন। পাশাপাশি তিনি জানান যে বহু জায়গায় স্লিপ নিয়ে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি এবং ঘাসফুল শিবির নিজেদের গুন্ডা বাহিনীদের দিয়ে ভোট করিয়েছে।
তবে বুধবার, অর্থাৎ ১৭ই জুলাই, সাইন্স সিটিতে বিজেপির এক বৈঠকে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন নিজের বক্তৃতা রাখার সময় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে মুখ খোলার পাশাপাশি তিনি বলে ফেলেন “সাবকা সাথ সবকা বিকাশ আর নয়। জো হামারা সাথ হাম উনকে সাথ।” এখানেই শেষ নয় সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। এরপরই শুরু হয় নিন্দার বন্যা। এমনকি দলের অন্যান্য প্রভাবশালী নেতারাও শুভেন্দুর বিরোধিতা করেন।
যদিও বিরোধী দলনেতা নিজের এক্স হ্যান্ডেল থেকে আসল মানেটি তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্য, তিনি বলতে চেয়েছেন যে তাদের পাশেই যারা মনেপ্রাণে বাংলা ও দেশকে ভালোবাসে এবং তৃণমূলকে আর দেখতে চায়না। এখানেই শেষ নয় তিনি আরো দাবি করেন যে তিনি মনেপ্রাণে মোদিজীর ‘সাবকা সাথ সবকা বিকাশ’ আদর্শে বিশ্বাসী এবং চিরকাল তা মেনে চলবেন।
‘সাতসকাল’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।