নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক নতুন সপ্তাহের শুরুতে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গত সপ্তাহের সেরা সব খবর। এবারের থিম বাংলা ও কেন্দ্রীয় বঞ্চনা। কি ঘটলো শেষ সপ্তাহে? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
কেন্দ্রীয় বঞ্চনা এবার ওষুধেও! ছয় মাস ধরে ওষুধ পাচ্ছেনা যক্ষারোগীরা
লোকসভা নির্বাচনের দামামা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সমস্ত রাজনৈতিক দল ময়দানে নেমে পড়েছিল প্রচার করতে। মাঝেমধ্যেই বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে আওয়াজ তুলতে শোনা যেত কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে। দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করতেন যে বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র সরকার। এখানেই শেষ নয় তিনি আরো দাবি করতেন যে কেন্দ্রীয় সরকার, অর্থাৎ ভারতীয় জনতা পার্টি, নিজেদের শাসিত রাজ্যগুলিকে সমস্ত সুবিধা দেয় কিন্তু বাংলাকে বিন্দুমাত্র সাহায্য করেনা।
তবে এবার প্রকাশ্যে এলো একটি ভয়াবহ চিত্র, যা দেখে রীতিমতো চিন্তায় পড়লো সকল বঙ্গবাসি। কি সেই চিত্র? এক নয়, দুই নয়, কেটে গেল একেবারে ছয় মাস। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাংলা পেলোনা রোগীদের জন্য ওষুধ। টিবি রোগীদের ওষুধ পাঠাচ্ছেনা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সেন্ট্রাল টিবি ডিভিশন। স্বাভাবিকভাবেই এর জন্য বিশাল বড় চাপে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত যক্ষারোগী। আতঙ্কে ও চিন্তার মধ্যে দিয়ে কাটছে তাদের দিন। পাশাপাশি, এই ঘটনার জেরে মাথায় হাত পড়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরেরও।
জানা গিয়েছে যে শেষ পর্যন্ত উপায় না থাকায়, বিভিন্ন সংস্থার থেকে ওষুধ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফ থেকে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় যক্ষারোগীদের রোগমুক্ত করার জন্য বাজার থেকে ওষুধ কেনা হচ্ছে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের তরফ থেকে। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “গত ৬ মাস ধরে আমরা ধারাবাহিকভাবে ওষুধ পাচ্ছিনা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সেন্ট্রাল টিবি ডিভিশনের থেকে। এর জন্য সমস্যা হচ্ছে যক্ষারোগীদের। তাই ওদের যাতে কোনরকমের কোন অসুবিধা আর না হয়, সেই কথা মাথায় রেখে আমরাই ওষুধ কিনে ওদের দিচ্ছি।”
অন্যদিকে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “যক্ষারোগের ক্ষেত্রে যেই ব্যাপারটা হয় যে এর ওষুধ একটা সময় পর্যন্ত নিলে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে যায়। হ্যাঁ তবে কিছু রোগী থাকে যাদের কিছু ওষুধ ও ইনজেকশন দিতে হয়। তারা আসলে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগী। এভাবেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কিন্তু এখন সমস্যাটা হচ্ছে যে কেন্দ্রের তরফ থেকে আমরা এর ওষুধ আর নিয়মিতভাবে পাচ্ছিনা এবং এর জন্য প্রাণ সংশয়ের একটা ব্যাপার চলে আসে রোগীদের। এছাড়া সংক্রমণও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এখানেই হচ্ছে আসল সমস্যা।”
জনসভা থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ তৃণমূল কংগ্রেসের
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিটি জনসভা থেকেই আওয়াজ ওঠান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমোর বক্তব্য যে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা আটকে রেখে কেন্দ্রীয় সরকার। বহুবার মুখ্যমন্ত্রীকে এমনও বলতে শোনা যায় যে কেন্দ্র টাকা না দিলেও, মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। একই সুর শোনা যায় দলের সেনাপতি, তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়ও।
সম্প্রতি পিংলার জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি যদি ভোট চাইতে আসে তাহলে আমি যে প্রশ্নগুলি বলছি সেগুলি করবেন। ওদের জিজ্ঞেস করবেন ২০১৪ সালে সকলের একাউন্টে ১৫ লাখ টাকা করে আসার কথা ছিল। কিন্তু আপনারা কি একটাও টাকা পেয়েছেন? যদি না পেয়ে থাকেন তাহলে বিজেপিকে ভোট দেবেন না। ১০০ দিনের কাজের টাকা কার দেওয়ার কথা ছিল? যাদের দেওয়ার কথা ছিল তারা একটা টাকাও দেয়নি। তিন বছর টাকা দেয়নি। কিন্তু সেই প্রাপ্য টাকা আমরা সকলকে দিয়েছি। সুতরাং বিজেপিকে একটাও ভোট দেবেন না।”
এমনকি শনিবার কুলটির জনসভা থেকেও একই কথা বলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “”শুনলাম নাকি আগেরবার বিজেপি প্রার্থী ভোট জিতেছিলেন টাকার জোরে। যদি ভুল না হই, তাহলে এবারও ওরা টাকা দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে যদি ওরা এই একই কাজ আবার করে তাহলে আপনারা সোজাসুজি ওদের থেকে ১৫ লক্ষ টাকা চাইবেন। ইতিমধ্যেই, আমরা অনেক বাড়ি বানিয়ে ফেলেছি এবং আগামীদিনে আরো বানাবো। ডিসেম্বর মাসের ৬০ হাজার টাকা দেব এবং এরপর আরো ৬০ হাজার টাকা পাবেন। চাকরি তো দেওয়ার ক্ষমতা ওদের একটুও নেই, কিন্তু ওরা চাকরি কেড়ে নেয়। কিন্তু আমি কথা দিলাম যে যাদের চাকরি চলে গিয়েছে, তাদের পাশে আমি দাঁড়াবো। আমাদের সরকার তাদের পাশে সর্বদা রয়েছে।”
বিজেপির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রতিটি সভায়। শনিবার দুবরাজপুরের সভা থেকে তিনি বলেন, “লক্ষীর ভান্ডারে হাজার টাকা করে দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সেই টাকা আপনাদের থেকে নিয়ে নিচ্ছেন আধার কার্ড ও প্যান কার্ড লিঙ্ক করার নামে। ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি বাতিল করে দিয়েছে ওরা। মেনে নিচ্ছি তর্কের খাতিরে যে কিছু লোক দুর্নীতি করেছে। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে ওই ২৬ হাজারের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ মেধাবী ছিল। তাহলে আপনারা সকলে দেখুন যে কিভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেওয়া চাকরি নরেন্দ্র মোদী কেড়ে নিচ্ছে। কেন্দ্র সরকার টাকা না দিলেও তৃণমূল কংগ্রেস আপনাদের সকলকে বাড়ির টাকা এই বছরের মধ্যেই দিয়ে দেবে। ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে আপনারা টাকা পেয়ে যাবেন।”
‘ফিরে দেখা সাতদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামী সপ্তাহে আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো সপ্তাহের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।