নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক নতুন সপ্তাহের শুরুতে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গত সপ্তাহের সেরা সব খবর। এবারের থিম রামনবমী। কি ঘটলো শেষ সপ্তাহে? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অনুমতি দেওয়া হলোনা রামনবমী উদযাপনের! কি বলছে এবিভিপ?
গতসপ্তাহের সেরা নিউজের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় রামনবমী পালন না হতে দেওয়া। যদিও প্রথমদিকে পালন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে ভেবে পড়ে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এসএফআই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেয় এবং তারপর মঙ্গলবার রাতে সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও গেরুয়া শিবিরের ছাত্র সংগঠনের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে যে রামের নাম শুনলেই রেগে যায় বাম ছাত্র সংগঠন এবং যাবতীয় সব অশান্তির পেছনে তাদের হাত রয়েছে।
বুধবার, অর্থাৎ ১৭ই এপ্রিল, গোটা ভারতবর্ষে পালন হয় রামনবমী। রামভক্তরা এদিন প্রতিটি রাজ্যের নামে আনন্দের সঙ্গে এই উৎসব উদযাপন করতে। এমনকি ভিড় ছিলও চোখে পড়ার মতো। যদিও একইসঙ্গে কড়া নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল চারিদিকে, যাতে কোনরকমের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। সবমিলিয়ে, এবারের রামনবমী এক আলাদা রূপ দিয়েছে পুরো দেশকে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রামনবমী পালন করাকে ঘিরে আবেদন করা হয়েছিল এবিভিপির তরফ থেকে এবং সেই অনুযায়ী অনুমতিও দেওয়া হয় তাদের এবং নির্দেশ দেওয়া হয় যে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টো অবধি পুজো করা যাবে। তবে এর সঙ্গে এটাও জানিয়ে দেওয়া হয় যে কোনরকমের কোন শোভাযাত্রা করা যাবেনা। এছাড়াও বাইরের কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেনা, সেই নির্দেশ অবধি দেওয়া হয় তাদের।
যদিও বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই ও অন্যান্যরা প্রথম থেকেই রামনবমী উদযাপনের বিরুদ্ধে ছিল। এবিভিপি অনুমতি পাওয়ার পরই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের দ্বারস্থ হয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়, যাতে দাবী করা হয় যে আবেদনকারীদের মধ্যে ১০৩জনের নাম ভুয়ো এবং এদের সাথে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন যোগ নেই। পাশাপাশি এই অভিযোগ অবধি করা হয় যে রামনবমী উদযাপনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায় এবিভিপি। এরপরই অনুমতি প্রত্যাহার করেন রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে আবেদনকারীদের মধ্যে অনেকেরই নাম জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এছাড়া ক্যাম্পাসে রামনবমী উদযাপন করতে দেওয়া হলে সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে। অন্যদিকে এবিভিপি দাবি করেছে যে ধর্মের নামে অশান্তি করছেনা তারা এবং রামের নাম শুনলেই বাম ছাত্র সংগঠনগুলি বিরক্ত হয়ে যায়।
রামনবমীর মিছিল ঘিরে চরম অশান্তি মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগর বিধানসভার শক্তিপুর থানা এলাকায়
গতসপ্তাহের সেরা নিউজের তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে রামনবমী উৎসব ঘিরে মুর্শিদাবাদে অশান্তি। ঘটনাটি ঘটেছে রেজিনগর বিধানসভার শক্তিপুর থানা এলাকায়। রামনবমীর মিছিলে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। বাড়ির ছাদ থেকে মিছিলে ঢিল ছোড়ে তারা এবং এর জেরে আহত হয় প্রায় ২০জন। সকল আহতদের বহরমপুরের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও কাদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছে যে শুধু পাথর নয়, মিছিলে বোমা পর্যন্ত ছোড়া হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতেও এবং এরপর পরে কমেন্টের বন্যা। সবমিলিয়ে, শক্তিপুর এলাকা রীতিমতো একটি রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কে আপনাদের অধিকার দিয়েছে রামনবমীর মিছিলে অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার? এই ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছে। এমনকি ওসি অবধি আঘাত পেয়েছে। আমি কোনরকমের কোন উত্তেজনা ছড়াতে চাইছিনা। কিন্তু আমি এটা জানতে চাই যে ঠিক রামনবমীর আগেরদিন কেন ডিআইজিকে হঠাৎ করে সরিয়ে দিলেন আপনারা? পরেরদিন নাটক করে বেড়াবেন বলেই এই প্ল্যানটা করলেন।”
অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “প্রশাসনের থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল মিছিল বের করার জন্য। কিন্তু দুষ্কৃতীদের তরফ থেকে মিছিলে হামলা চালানো হয় শক্তিপুর, বেলডাঙ্গা – ২ ব্লকে। আমি এটা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি যে মমতা পুলিশ এবার যোগ দিয়েছে। দুষ্কৃতীরা এই হামলা সম্পর্কে বলছে যে মিছিল যাতে হঠাৎ শেষ হয়ে যায় তাই পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে এবং শেল ছোড়া হয় রামভক্তদের উপর।”
এছাড়া এই ঘটনা প্রসঙ্গে বহরমপুরের সাংসদ, তথা কংগ্রেস নেতা, অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, “আমি আহতদের দেখতে এসেছিলাম হাসপাতালে, কিন্তু বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখায় এবং দাবি করে যে হিন্দুদের উপর হামলা করা হয়েছে। শাস্তি দেওয়া উচিত যারা প্রতিবাদ করছে। পুরো পরিকল্পনা করে দাঙ্গা লাগানোর উস্কানি দেওয়া হয়েছে। যারা বিজেপি বিরোধী, তারা তা প্রমাণ করে। যদিও আমি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি এই ব্যাপারে। অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হয়েছে শক্তিপুরে। এছাড়া এসপি রয়েছেন ঘটনাস্থলে।”
‘ফিরে দেখা সাতদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামী সপ্তাহে আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো সপ্তাহের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।