মাকে যখন ছোটবেলায় ঠাকুরের আসনে জল বাতাসা দিয়ে পুজো করতে দেখতাম তখন মনে অনেক রকম প্রশ্ন জাগতো। ঈশ্বর আছেন কিনা; উনি এসে মায়ের দেওয়া এই জল বাতাসা খেয়ে যান কিনা; কখন আসেন, দেখতে পাই না কেনো। এরকম বহু প্রশ্ন। জীবনের এক একটা ধাপ এগিয়েছি আর এই প্রশ্নগুলোর এক এক রকম উত্তর মিলেছে। একসময় বুঝেছি ঈশ্বরের সাথে আমার এই প্রশ্নোত্তর খেলা আমৃত্যু চলতেই থাকবে।
সমাজে মেলামেশার ক্ষেত্র টা যখন বাড়লো তখন বুঝলাম ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস ও অবিশ্বাস এর উপর ভিত্তি করে সমাজে বহু বিভাজন আছে। আমি এই বিভাজনের মধ্যে ঠিক কোন “জন” (zone) এ পড়ি বহুকাল বুঝেই উঠতে পারিনি। আপনি জানেন কি আপনি কোন “জন” এর অন্তর্ভুক্ত। না জানলে জেনে নিতে পারেন….
🔸 Atheists (অ্যাথেইস্ট):
এরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নন। বিজ্ঞানে পৃথিবী ও জীব জগৎ সৃষ্টির যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এরা তাই বিশ্বাস করেন। এদের মধ্যেও আবার বিভাজন আছে —–
Gnostic Atheist :- কোনোভাবে কোনো পরিস্থিতি তেই এরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না। এরা মনে করেন ঈশ্বর নামক কোনো সত্তার অস্তিত্ব কোথাও নেই।
Agnostic Atheist :- এদের বক্তব্য মতে, যেহেতু এরা ঈশ্বর কে কোনোদিন দেখেনি অথবা অনুভব করেনি সেহেতু এরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না।
🔸 Agnostic (অগ্নস্টিক):
Strong :- যেহেতু, এরা ঈশ্বরকে অনুভব করেনি তাই এদের কাছে ঈশ্বর হলেন অজানা এক তত্ত্ব।
Moderate :- এরা বলেন, অনেকের কাছে যেমন ঈশ্বর থাকার প্রমাণ আছে আবার অনেকের কাছে না থাকার প্রমাণ ও আছে; তাই ঈশ্বর হয়ত আছে অথবা হয়ত নেই।
Weak :- এদের মতে ” আমি মনে করি ঈশ্বর আছেন, কিন্তু আমি নিশ্চিত ভাবে একথা বলতে পারিনা”।
🔸Theist (থেইস্ট):
থেইস্ট দের বক্তব্য অনুযায়ী ঈশ্বর আছেন এবং তিনিই এই জীব জগৎ সৃষ্টি করেছেন এবং এর ধ্বংস তিনিই করবেন এবং আবার সৃষ্টি করবেন।
Weak :- “ঈশ্বর বলে নিশ্চই কিছু আছেন; আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী”। একটু খেয়াল করে দেখুন এদের কথার মধ্যে খানিক সন্দেহ লুকিয়ে আছে।
Moderate :- “ঈশ্বর বলে কিছু আছে অবশ্যই। আর আমি তাকে বিশ্বাস করি।” এই ক্ষেত্রে সন্দেহ না থাকলেও বিষয় সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট না।
Strong:- “ঈশ্বর আছেন এবং তিনিই সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয়ের কারণ।” একটি বলিষ্ঠ বিশ্বাস।
থেইস্ট দের মধ্যে ঈশ্বরের ধারণা সংক্রান্ত আবার কিছু বিভাজন আছে।
▪️Monotheist :- ঈশ্বর এদের কাছে এক এবং অদ্বিতীয় সত্তা।
▪️ Polytheist :- ঈশ্বর এর বহুত্বে বিশ্বাসী এরা। অর্থাৎ ঈশ্বর একাধিক।
▪️ Henotheist :- ঈশ্বরের বহুত্বে বিশ্বাসী হলেও এরা একজন ঈশ্বরেরই আরাধনা করেন।
▪️Monolatrist :- বহুত্বে বিশ্বাসী কিন্তু একজন ঈশ্বরেরই আরাধনা করেন এবং অন্য ঈশ্বরের আরাধনা এদের নিকট একেবারেই বর্জনীয়।
▪️ Pantheist :- এদের কাছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড এবং ঈশ্বর একই সত্তা। অর্থাৎ যাই সৃষ্টি তাই স্রষ্টা। চোখের সন্মুখে আমরা যা দেখছি তা যদি সৃষ্টি হয় তবে তাই স্রষ্টা বা ঈশ্বর।
▪️Panetheist :- এদের মতে অন্তে গিয়ে অথবা গভীরে গিয়ে ব্রহ্মাণ্ড ও জীব জগৎ ঈশ্বরে মিলিত হয়।
🔸Deist :
এরা বলেন ঈশ্বর বহু নন। ঈশ্বর এক। এবং এই ঈশ্বর কে জানতে গেলে বা তার অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গেলে প্রাকৃতিক জগৎ যথেষ্ট। এর জন্য কোনো ধর্ম জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না।
🔸Apatheist :
ঈশ্বর সংক্রান্ত কোনো আলোচনাতেই এদের কোনরকম কোনো আগ্রহ থাকে না। ঈশ্বর আছেন কিংবা নেই এই নিয়ে এরা ভাবতেও চায় না। এদের কাছে, থাকলে আছে না থাকলে নেই। কিছুতেই অসুবিধা নেই। আসলে আগ্রহ নেই।
🔸Letist :
এরা ঈশ্বর নামক এক অতিন্দ্রীয় সত্তায় আস্থা রাখেন। কিন্তু মনে করেন এই সত্তার অস্তিত্ব যেমন সত্যি তেমন এই সত্তা অজ্ঞাত। একে জানা সহজ না।
🔸Ignotist :
এদের কাছে ঈশ্বর বিষয়ক সকল আলোচনা অর্থহীন। সময়ের অপচয়।
🔸 Autotheist:
এরা মনে করেন জগতের সকল বস্তুর মধ্যে ঈশ্বর আছেন। ব্যক্তি মানুষের মনের ভিতর ঈশ্বর আছেন। কোনো ব্যক্তি যদি চান তাহলে তার অন্তরের ঈশ্বরকে তিনি জাগিয়ে তুলতে পারেন।
🔸 Ethuist : এদের ধারণা ঈশ্বর সর্বতো ভাবে একটি সৎ এবং সদর্থক সত্তা বা শক্তি। অর্থাৎ ভালো।
Dytheist: এদের মতে ঈশ্বর সর্বতো ভাবে সৎ আবার শয়তান ও হতে পারেন।
Maltheist : ঈশ্বর আছেন কিন্তু তিনি সর্বতো ভাবে একটি অসৎ অর্থাৎ শয়তান সত্তা।
Misotheist : এরা ঈশ্বর কে ঘৃণা করেন।
পাশ্চাত্য দর্শন অনুযায়ী এই হল ঈশ্বর বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীর বিভাজন। প্রাচ্য বা ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী যে শ্রেণী বিভাজন তার মূল ভাগ দুটি আমাদের সকলের জানা – আস্তিক এবং নাস্তিক। পরবর্তী লেখায় ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী বিভাজন টি নিয়ে গল্প করবো। আশা করি আপনি খুঁজে পেয়েছেন নিজেকে।