নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক নতুন সপ্তাহের শুরুতে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গত সপ্তাহের সেরা সব খবর। তবে এবার থেকে প্রকাশিত হবে সপ্তাহের সেরা গল্পগুলি।
স্নেহা আজ খুব খুশি। আজ সে অনেক টা সময় রুদ্র এর সাথে কাটিয়েছে। রুদ্র এর ব্যস্ত শিডিউল এর মধ্যে আজ অনেকটা সময় সে স্নেহা এর জন্যে বের করতে পেরেছে। রুদ্র একটা সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার। লন্ডন থেকে তার কাছে অফার এলেও রুদ্র গরিব মানুষের সেবা করার জন্যে সরকারী হাসপাতালের চাকরী কে বেছে নিয়েছে। বিদেশে চাকরী বৈভব তাকে খুব একটা ছুতে পারে না, তাই বিদেশ থেকে ডাক্তারী পাস করেও রুদ্র দেশের মানুষকেই সেবা করছে। রুদ্র এর একটা এনজিও আছে যেখানে গরিব মানুষের জন্যে বিনা পয়সা তে চিকিৎসা করা হয়। এসব নিয়েই রুদ্র সব সময়ে ব্যস্ত থাকে তাই স্নেহা কে খুব একটা সময় দিতে পারে না। সেই জন্যই স্নেহা খুব একটা অভিযোগ এর আঙুল ও তুলতে পারে না তাকে খুব বেশী সময়ে না দেওয়ার জন্য। আর দুই মাস পর দুজনের বিয়ে. মোটামুটি দুই পরিবার এর সম্মতি পাওয়া হয়ে গেছে, শুধু দুজন এর চার হাত এক হওয়া সময়ের অপেক্ষা। রুদ্রর সাথে দেখা করে আজ খুশি মনে বাড়ির দিকে যাচ্ছে স্নেহা, এমন সময়ে কেউ একজন স্নেহার পথ আটকায়। স্নেহার পাড়ার মস্তান রনি আজ আবার স্নেহার পথ আটকেছে।
রনি-” কি বেবি খুব তারা, তা বেবি কি শুধু ডাক্তার/ ইঞ্জিনিয়ার দের মস্তি দেবে আমাদের মত গরিব এর জন্যে কাচকলা।”
স্নেহা-“দেখো তুমি পাড়া তে থাকো ছোটো বেলা থেকে তোমাকে দাদা বলে সম্মান দি, সেই সম্মান টা রাখার চেষ্টা করো।”
রনি- “দাদা(কিছুটা হাসি) নারে আমি তোর দাদা নই সেটা তো তুই জানিস ভালো করেই। আমি তোকে বিয়ে করেই ছাড়ব। সেই কবে থেকে তোকে আমি ভালোবাসি। তুই যখন ক্লাস ইলেভেনে তখন তোকে ফার্স্ট প্রপোজ করি সেটা কি এমনি এমনি। তুই আমার না হলে কারো হতে দেবো না তোকে। ওই ডাক্তার এর তোর সাথে ঘুরে বেড়ানো আমি সহ্য করতে পারিনা। হ্যা আমি বেকার, বেশি পড়াশুনা করি নি, সমাজের চোখে আমি গুনডা কিন্ত বিশ্বাস কর তুই ভালবাসলে ,আমি সব ছেড়ে দিতে পারি একটা ভালো জীবন পেতে পারি।”
স্নেহা- “এসব বলে কোন লাভ নেই , আমি আর রুদ্র কদিন বাদে বিয়ে করছি এরপর তুমি যদি ডিসটার্ব করো আমি পুলিশ এ ইনফর্ম করতে বাধ্য হব।”
রনি- “ঠিক আছে তোর ওই রুদ্র ডাক্তার কে আমি দেখে নেবো কথা দিলাম তোকে।” এই বলে রনি তখনকার মতো চলে যায়। এদিকে রুদ্র আগামীকাল ওর দেশের বাড়ি পুরুলিয়া যাচ্ছে এনজিও এর কাজে। কাল সকাল সকাল বেড়িয়ে যাবে তাই রাতে স্নেহা কে ফোন করে।
রুদ্র-” আচ্ছা তোমার পারার সেই ছেলে টা কি যেন নাম, রনি তোমাকে আর ডিসটার্ব করছে না তো।”
স্নেহা- “আজকে ধরেছিল তোমার সাথে দেখা করে ফেরার সময় , আমি সাইড করে চলে এসেছি।”
রুদ্র- “খুব বেড়েছে আমি ফিরে ওর ব্যবস্থা করছি আর এ কয়দিন একটু সাবধান এ থেকো, সন্ধ্যা এর পর বাড়ির বাইরে যেও না। নিজের যত্ন নিও।” এই বলে রুদ্র ফোন রাখে। দিন ১০ পর রুদ্র একদিন ফোন করে স্নেহাকে পুরুলিয়া যাওয়ার জন্যে বলে, স্নেহা যাওয়ার জন্যে রাজিও হয়ে যায়। দুদিন পর যখন স্নেহা পুরুলিয়া যাওয়ার জন্যে তৈরি এমন সময়ে তার কাছে এমন একটা খবর এলো যে সে জীবনের চরমতম আঘাতটা পেলো। রুদ্র গতকাল রাত এ মারা গেছে। রুদ্র এর আকস্মিক মৃত্যুতে বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পরে স্নেহা। সে কিছু তে মানতে পারছে না, রুদ্র যেখানে নিজে একজন ডাক্তার সেখানে তার এত কম বয়সে হার্ট আটাক এ কী করে মৃত্যু পারে। কিন্তু ইদানিং কম বয়সে হৃদরোগের এর পরিমান অনেক বেড়ে গেছে কিন্তু তাও স্নেহা কিছু তে মানতে পারছে না। তার মনে হতে থাকে কিছু একটা রহস্য লুকিয়ে আছে এই মৃত্যু এর পিছনে। এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে রনিও নিখোঁজ। স্নেহার সন্দেহের তির গিয়ে পরে রনির উপর। শেষ যখন রনির সাথে দেখা হয়, রনি দেখে নেবো বলে হুমকি দিয়েছিল তাহলে সেই কি কিছু ভাবে এই ঘটনা এর সাথে যুক্ত। এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে স্নেহা পুরুলিয়া তে রুদ্র এর গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। গ্রামে পৌঁছে রুদ্রর দেশের বাড়িতে গিয়ে উঠলো স্নেহা. রুদ্র এর মারা যাওয়ার পর সে বাড়িতে আর কেউ থাকে না একমাত্র বাড়ির চাকর রতন দা ছাড়া। স্নেহা রুদ্রর গ্রামের বাড়ি পৌছে রতন দাকে জানায় তার সাথে রুদ্রর বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো, সে কদিন ঐ বাড়িতে থাকবে। মানসিক আঘাত সামলে মন কে শক্ত করে স্নেহা ঠিক করেছে সে এই রহস্য এর কিনারা করেই ছাড়তে কারন স্নেহা বিশ্বাস করতো রুদ্রর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়।
স্নেহা-“আচ্ছা রতন দা, বলোতো সেদিন মানে রুদ্র মারা যাওয়ার দিন exactly কী কী হয়েছিল। সব বলবে কিছু বাদ দেবে না।”
রতন দা- “হ্যা দিদিমনী সব বলছি। দাদাবাবুকে গ্রামের সবাই ভগবানের চোখে দেখত, যখনই গ্রামে আসতো এখানকার গ্রামবাসীদের মধ্যে একটা উতসবের পরিবেশ তৈরি হয়ে যেত। এবারও সেরকম হয়েছিল কিন্তু ৪-৫ দিন বাদে থেকে হঠাত করেই মরক লাগলো গ্রাম এ, কি একটা অজানা ভাইরাস এলো গ্রামের একটা পর একটা বাচ্চা মারা যেতে লাগলো। এই নিয়ে দাদাবাবু খুব চিন্তিত ছিল, দাদাবাবু বাচ্চাদের ইঞ্জেকশন দেওয়া শুরু করেছিল সেটাও বন্ধ করে দিলো। ঘটনা এর দিন দাদাবাবু রাতে খেয়ে শুয়ে পরেছিল। পর দিন সকাল এ শুভ দাদাবাবু এসে খবর দিল সব শেষ হয়ে গেছে।”
স্নেহা- “আচ্ছা এই শুভটা কে? এর নাম তো কোন দিন শুনি নি।”
রতন – “আরে শুভ তো, দাদাবাবু এর সাথে এসেছিল, দাদাবাবু এর সাথে থাকত ওষুধ তৈরি করতো।”
স্নেহার মনে সন্দেহ তৈরি হল কে এই শুভ, তাকে খুঁজে বের করতেই হবে। এই শুভর সাথেই হয়তো রুদ্র এর মৃত্যু রহস্য লুকিয়ে আছে।
স্নেহা- “আচ্ছা রতন দা এই শুভ এর কোন ছবি আমাকে দেখাতে পারবে, ও এখন কোথায় আছে বলতে পারবে?
রতন – “শুভ দাদাবাবু তো ওই ঘটনা এর পর চলে গেছে। আচ্ছা দাঁড়াও শুভ দাদা বাবু যাওয়ার আগে কিছু জিনিস ফেলে গেছে সে গুলো রয়ে গেছে আমি তো পড়াশোনা জানি না, ওগুলো তুমি দেখো, আমি এনে দিচ্ছি।”
রতন দার দেওয়া কাগজ গুলো দেখে স্নেহা চমকে উঠল- “আরে এটা তো রনির ছবি তাহলে রনি ভুয়ো পরিচয় দিয়ে এসেছিল রুদ্রর সাথে।। ঐ কাগজ গুলোর মধ্যে কলকাতার একটা এনজিও এর ঠিকানা পেল স্নেহা।
স্নেহা দেরি না করে পৌঁছে গেলো সেই এনজিও ,ঠিকানা তে । এনজিও তে গিয়ে সেই এনজিও এর ফাউন্ডার মি. ব্যানার্জির সাথে দেখা হল স্নেহার।
স্নেহা- “নমস্কার, এই এনজিও এর সাথে রনি কিভাবে যুক্ত আমি জানতে চাই, ও এখন কোথায় আছে জানতে চাই, ওর ঠিকানা দিলে ভালো হতো।”
মি.ব্যানার্জি- “কেন বলুন তো ? আপনি কে?”
স্নেহা” আপনি একটা খুনি কে গার্ড করছেন। রনি একটা খুনি। ওকে আমি ছোটোবেলা থেকে চিনি ও একটা মাস্তান।”
মি. ব্যানার্জি – “রনি খুনি, না রক্ষাকর্তা সেটা আগে জানো।”
স্নেহা-“কি বলছেন কি? আমি কিছু বুঝতে পারছি না”।
মি. ব্যানার্জি -“সে বহুদিন আগের কথা ব্যবসার কাজে আমি কলকাতা এসেছিলাম আমার একটা দুর্ঘটনা ঘটে সে সময়ে রনি আমাকে বাচায়। তার পর থেকেই ও আমার এনজিওতে নানা রকম সাহায্য করতো। আমার এনজিওতে মুলত অনাথ বাচ্চাদের পড়াশোনা তে সাহায্য করা হয়। রনি এসে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাত। একবার একটা বাচ্চার ডায়রিয়া হয় বাচ্চাটাকে আমরা ড. রুদ্রর কাছে নিয়ে যাই সেখানে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে ছেড়ে দেয় কিন্তু ওই ইঞ্জেকশনটা দেওয়ার পর থেকে বাচ্চাটার আরো শরীর খারাপ বেড়ে যায়, ব্রিদিং প্রবলেম শুরু হয় আমরা আবার রুদ্রর কাছে যাই। ও দেখে বলে একটা বিরল সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বাচ্চাটা। দুই দিন পর বাচ্চাটা মারা যায়। কিন্তু ওরা বাচ্চাটার বডি দিতে চাইছিল না। বলে সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণ এ বডি দেওয়া যাবে না। এরপর এই এলাকাতে একই ঘটনা আরো ঘটে আরো কয়েক টা বাচ্চা মারা যায়। আমি রনিকে ডেকে আনি রনি খোঁজ খবর নিয়ে একটা নকল এনজিওর সন্ধান পায়। এই এনজিওটা বাচ্চাদের কিডনি সহ নানা অর্গান পাচার করে। আর এই এনজিও এর সাথে রুদ্র যুক্ত বলে খবর আসে। ও অনেক গ্রামে গিয়ে ভুল ইঞ্জেকশন দিয়ে বাচ্চাদের মেরে ফেলে, সেখান কার মানুষ কে ভাইরাস এর ভুয়ো গল্প শুনিয়ে দেহ পরিবারের হাতে দেয় না, এই সুযোগে বাচ্চাদের অর্গান ট্রাফিকিং করে। রনি জানতে পারে রুদ্র পুরুলিয়ার একটা গ্রামে যাচ্ছে। রনিও সেই গ্রামে যায় রুদ্রর চক্রান্ত ভেস্তে দিতে। রুদ্র ওখানেও একই খেলা শুরু করে, তাই আর যাতে কোনও বাচ্চার প্রাণ না যায় তাই রুদ্রকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় রনি। রুদ্র সেই রাতে ঘুমিয়ে গেলে রনি ওকে একটা সিরিনজে হাওয়া ভরে ইনজেকট করে আর তাতে রুদ্র কার্ডিয়াক আরেসট হয়ে মারা যায়। এবার তুমি বলো রনি খুনি না রক্ষাকর্তা। রুদ্রর মৃত্যুর পর থেকে ওই গ্রামে আর কোন বাচ্চার কোন ক্ষতি হয় নি। রুদ্রর মহত আর সমাজসেবার আরালে লুকিয়ে ছিল একটা শয়তান আর রনির মস্তান রুপের আরালে লুকিয়ে ছিল একটা প্রকৃত মানুষ।”
স্নেহা সবটা শুনে ওর পৃথিবীটা ওলট পালট হয়ে গেল। স্নেহা সিদ্ধান্ত নেয় রনির সাথে দেখা করতে যাবে। কিন্তু মি. ব্যনার্জি বলেন রনি এই পৃথিবীতে আর বেশী দিন নেই ও ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত।
স্নেহা ছুটে যায় রনির বাড়িতে। কিন্তু গিয়ে রনিকে খুঁজে পায়না, কিন্তু তার ঘরে একটা ডায়েরি খুঁজে পায়। ডায়েরি তে লেখা- “স্নেহা তোকে আমি সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি। কিন্তু তোর আর আমার পৃথিবীটা সম্পুর্ন আলাদা। তুই ছোটবেলা থেকে একটা জয়েন্ট ফ্যামিলিতে সকলের ভালোবাসাতে বড় হয়েছিস, ভাল স্কুল, কলেজে পড়েছিস। কিন্তু আমি অনাথ, কখনো মা বাবার আদর ভালবাসা পাইনি। নিজেরটা নিজেকে জোগার করতে হয়েছে, তাই এ জীবনে মানুষের মত মানুষ হওয়া হল না। দূর থেকে তোকে দেখতাম আর দূর থেকে ভালবাসতাম। একদিন তোর কাছে গিয়ে সবটা বললাম আমার ভালোবাসার কথা, তুই হ্যা বলিস নি। সেদিন থেকে ঠিক করেছিলাম তোর জীবনে আমি না থাকলেও তোর জীবনে কোন কালো ছায়া আসতে দেবো না। ভালো থাকিস তোর পাস থেকে একটা কালো ছায়া আমি সরিয়ে দিয়েছি। এটাই ধরে নে তোকে ভালবাসার শেষ উপহার আমার তরফ থেকে। আমাকে খুজতে যাসনা। জীবনের মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার আগে এটাই আমার শেষ অনুরোধ, আমাকে খুজতে যাসনা। মরীচিকা ছাড়া কিছুই পাবিনা।”
ডায়েরিটা হাতে নিয়ে এক ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো স্নেহা। তার দুই চোখ দিয়ে জল গড়াতে লাগলো।
লেখক: মৌক্তিক সাহা
‘ফিরে দেখা সাতদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামী সপ্তাহে আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো সপ্তাহের সব নজরকাড়া গল্প নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।
Khub sundor hoyeche lekhata
অসংখ্য ধন্যবাদ সাথে থাকুন।
Vlo hye6
অসংখ্য ধন্যবাদ সাথে থাকুন।