প্রিয় পাঠক নতুন সপ্তাহের শুরুতে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হতো গত সপ্তাহের সেরা সব খবর। তবে তারপর থেকে প্রকাশিত হয় সপ্তাহের সেরা গল্পগুলি। এই সপ্তাহের সেরা গল্প ‘সিমলা নামের ইতিহাস’ ও ‘ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান’।
সিমলা নামের ইতিহাস
ভারতবর্ষের উত্তরে পাহাড় ঘেরা রাজ্য হিমাচল প্রদেশের রাজধানী হল সিমলা। সিমলা নামকরণটি করেছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্রিটিশ সাহেবরা। কিন্তু তারা এই নামকরণ কিভাবে করলেন! হঠাৎ লোকচক্ষুর আড়ালে একলা পড়ে থাকা বরফ ঘেরা জায়গাটির নাম তারা “সিমলা” রাখলেন কেন!
সিমলার কেন্দ্র তে বানটনি পর্বতের উপর একটি প্রাচীন কালীমন্দির অবস্থিত। ঐ মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন – শ্যামলা মাতা অর্থাৎ মা কালী। বর্তমান সিমলা বাসি বিশ্বাস করেন এই শ্যামলা মাতার নামেই ব্রিটিশ রা এই জায়গার নামকরণ করেছেন সিমলা। ব্রিটিশরা যেহেতু “শ্যামলা” উচ্চারণ করতে পারেনি তাই তারা ওকে “সিমলা” বলেই উচ্চারণ করেছে। ১৮৪৫ সালে একজন বাঙালি হিন্দু ব্রাহ্মণ রামচরণ ব্রহ্মচারী এই মন্দির নির্মাণ করেন যাখু পর্বতের উপর। ব্রিটিশ পরবর্তী সময়ে এই মন্দির বানটনি পর্বতের উপর স্থাপন করে। শ্যামলা মাতা ঘন নীল রঙের কাঠ দিয়ে তৈরি। ১৯০২ সালে এই মন্দিরের ট্রাস্ট গঠন করা হয়। শ্যামলা মাতার মন্দিরে দূর্গা পূজা, সিঁদুর খেলা, বিজয়াদশমীর অনুষ্ঠান, কার্তিক মাসের কালি পূজা সকল কিছুই পালন করা হয়। সিমলার স্থানীয়রা আরও একটি তত্ত্বের কথা বলে থাকেন। তারা বলেন – কোন একসময় এক ফকির বাবা নীল রঙের শ্লেট দিয়ে একটি বাড়ি তৈরী করেন যাখু পর্বতের উপর। নীল রঙের শ্লেট দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ হয় বলে এর নাম হয় – শ্যামলী বা শ্যামল্য; সেই থেকেই হয়ত সাহেবরা এই জায়গার নামকরণ করেন “সিমলা”। তাদের নিজেদের উচ্চারণের সুবিধার্থে। তবে স্থানীয়রা “শ্যামলা মাতার” নাম থেকেই “সিমলা” – এই তত্ত্ব টিই বিশ্বাস করেন।
কিছুদিন আগে অবশ্য রাজ্যের সরকার যখন “সিমলা” নামটি পরিবর্তন করে “শ্যামলা” করার কথা ভেবেছিলেন তখন বহু মানুষ এর বিরোধিতা করেন। অবশেষে সরকার নিজের অভিপ্রায় ত্যাগ করে। তবে সিমলা বাসি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন – এ শহর শ্যামলা মাতার শহর। সমগ্র সিমলা বাসির অভয়তারিণী মা শ্যামলা মাতার শহর সিমলা।
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান
বাদ্যযন্ত্র সানাইকে ভারতের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের যন্ত্র হিসেবে সম্মানিত করার একমাত্র কৃতিত্ব যাঁর তিনিই হলেন ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান। ১৯৩৭ সালে অল ইন্ডিয়া মিউজিকের কলকাতায় যে কনফারেন্স টি অনুষ্ঠিত হয় সেখানেই সানাই বাজিয়ে তিনি সানাইকে ভারতীয় সঙ্গীতের মূল মঞ্চে নিয়ে আসেন। শুধু ভারতবর্ষের মাটিতে নয় বিদেশেও তিনি তাঁর শিল্পের মহিমা ছড়িয়ে এসেছেন। আফগানিস্তান, ইউরোপ, ইরান, ইরাক, কানাডা, আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত, জাপান, হংকং এর শ্রোতাদের ও উনি মুগ্ধ করেছেন বারবার। ভারতের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারী দিল্লির লাল কেল্লায় সানাই বাজিয়ে তিনি মুগ্ধ করেন অগন্তি শ্রোতাকে। অন্যান্য বিভিন্ন পুরস্কার লাভের সাথে সাথে পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, ভারতরত্নের সম্মান লাভ করেন তিনি। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এর পক্ষ থেকে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করা হয়। ভারতীয় ডাকব্যবস্থা তাঁকে সম্মান জানিয়ে ২১ অগাস্ট ২০০৮ সালে তাঁর ছবি যুক্ত পোস্টাল স্ট্যাম্প ও তৈরী করে।
সদ্যজাত কামারুদ্দিন খানের জন্মের সংবাদ পাওয়ার পরেই তাঁর পিতামহ বলে ওঠেন – “বিসমিল্লাহ”। পরবর্তীতে এই নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন শিল্পী কামারুদ্দিন খান। ছয় বছর বয়সে তিনি বিহার ছেড়ে বারানসী আসেন। সেখানেই তাঁর মামা আলী বাক্স খানের কাছে তিনি সানাই বাজানোর শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর মামা বারানসীর বিশ্বনাথ মন্দিরের সানাই বাদক ছিলেন। মামার কাছেই খান সাহেবের প্রথম সানাই শিক্ষা শুরু হয় এবং খান সাহেব নিজেও বিশ্বনাথ মন্দিরে সানাই বাজানো শুরু করেন। দেবী স্বরসতীর বন্দনা করে তিনি প্রতহ্য রেওয়াজ শুরু করতেন। ঈশ্বরের আশীর্বাদ ধন্য এই শিল্পী মাত্র ১৪ বছর বয়সে এলাহাবাদ মিউজিক কনফারেন্সে মামার সাথে সানাই বাজিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেন। ওনার শেষ ইচ্ছা ছিল ইন্ডিয়া গেটের সামনে হওয়া অনুষ্ঠানে সানাই বাজানো। কিন্তু ওনার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। ২০০৬ সালের ২১ অগাস্ট তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বেনারসের ফতেমান কবরখানায় একটি নীম গাছের তলায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর সমাধির সাথে একটি সানাই ও রাখা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাঁকে স্যালুট করে শেষ বিদায় জানান।
লেখিকা: সায়নী দাশগুপ্ত
‘সপ্তাহের সেরা গল্প’ আজ এই পর্যন্তই। আগামী সপ্তাহে আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো সপ্তাহের সব নজরকাড়া গল্প নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।