নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক নতুন সপ্তাহের শুরুতে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গত সপ্তাহের সেরা সব খবর। তবে এবার থেকে প্রকাশিত হবে সপ্তাহের সেরা গল্পগুলি। এই সপ্তাহের সেরা গল্প ‘বাড়ি নম্বর ৮০৮’।
গল্পের শুরুতেই বলে রাখা ভালো এটি আমার শহরের সত্য ঘটনা যা আমাকেও ভয় পাইয়ে দেয়। আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগের ঘটনা নিতা বাড়ি খুঁজছিল থাকার জন্য তাঁর দুই সন্তান এবং মা নিয়ে তাঁর সংসার ,তাঁর স্বামী মারা গিয়েছিল প্রায় ৩ বছর আগে । অনেক কষ্ট করে তাঁকে রোজগার করতে হতো একা মেয়ের পক্ষে যা কিছটা হলেও দুর্বিসহ।তবে নিতার একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল যার নাম আকাশ । সবই ঠিক ছিল কিন্তু আগে যে পাড়াতে সে থাকতো সেটা খুব একটা ভালো নয় এবং দুই সন্তানের বিদ্যালয় গুলিও অনেক দূরে দূরে ছিল যার কারণে অনেক অসুবিধে হতো তাই তারা নতুন বাড়ি খোঁজ করে । কিছুদিন একটি বাড়ির খোঁজ পায় , বাড়িটি শহরের ঠিক মাঝখানে হাসপাতাল, থানা ,ব্যাংক ইত্যাদি হাতের কাছেই তো সে আর না করেনা সে সঙ্গে সঙ্গে কিছু টাকা এডভ্যান্স করে দেয় । বাড়িটা বেস বড়ো ছিলো এবং তাঁরা সেখানে একা থাকবে সেটাও বাড়ি ওয়ালা জানিয়ে দেয় সে খুব খুশি তারপর সে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে । যেদিন যাবে সেদিন তাঁর প্রতিবেশী তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবে নিতা বলে সান্যাল পাড়াতে বাড়ি নম্বর ৮০৮ এ যাচ্ছি প্রতিবেশী শুনেই চোখ ওপরে উঠে যায় সে বলে ঠিক আছে যাচ্ছো কিন্তু আগে যাঁরা গিয়ে থেকেছিল তাঁরা কিন্তু ৬ মাস ও টিকতে পারেনি এবং বলে যায় বাচ্চাগুলোকে সাবধানে রেখো । সে শুনে পাত্তা দেয় না কারণ ভৌতিক জিনিসে সে বিশ্বাস করে না । যাই হোক সে বাড়িতে গিয়ে সিফট হয়ে যায় আকাশও আসে সাহায্য করতে । তাঁর দুই সন্তান এক ছেলে যার নাম আবির ৮ বছর এবং এক মেয়ে যার নাম রিয়া ১৬ বছর , তাঁরা বেশ খুশি বাড়িটা পেয়ে ছাদ আছে দোতলা বাড়ি একাই থাকবে খুব মজা , কিন্তু এই মজা বেশিদিনের নয় ।
দেখতে দেখতে দুই সপ্তাহ কেটে যায় কিন্ত সেই প্রতিবেশীর কথা কোনো ভাবেই ঠিক হয় না সে ভাবে ওইতো হিংসে করে বলেছে কারণ বাড়িভাড়া একদমই কম তাঁর ওপর মালিক বলেছেন যতদিন পারো থাকো কোনো অসুবিধা নেই তাই নিতা ভাবে তাঁরা মিথ্যে বলে।
সেদিন রাতেই আর রাত গুলোর মত সে বাথরুমে যায় যাওয়ার সময় সিঁড়ির সামনে দিয়ে যেতে হয় হঠাৎ সে অনুভব করে কেউ মনে হয় পেছন দিয়ে সিঁড়ির দিকে চলে গেলো, সে ওতো পাত্তা দেয় না ভাবে তাঁর মা হয়তো গিয়েছে। সকালে উঠে বাচ্চাদের তৈরি করে বিদ্যালয়ের জন্য এবং নিজেও তৈরি হচ্ছিল নতুন চাকরির ইন্টারভিউ এর জন্য। যাই হোক সকল ৯ টা মধ্যে সবাই বেরিয়ে যায় শুধু থাকে তাঁর মা। তার মা সেদিন তাড়াতাড়ি পুজো দিতে যান পুজো দেওয়ার সময় মন্ত্র বলছিলেন হঠাৎ তাঁর মনে হয় কেউ মনে হয় তাঁর সাথে সাথে বলে যাচ্ছে মন্ত্র তো সে ওতো পাত্তা দেয়না, পুজো সেরে তিনি টিভি খোলেন সিরিয়াল দেখবেন তাঁর স্বভাব ছিল জোরে করে শোনার কিন্তু যখনই সে আওয়াজ বাড়ায় তখনই দেখা যায় রান্না ঘরের বাসন পরে যাচ্ছে, তিনি একটু অন্য ভাবে নেন বিষয় গুলো তিনি টিভি বন্ধ করে বাইরে চলে আসেন কিছুক্ষন বাদে তাঁর মেয়ে মানে নিতা চলে আসে তারপর তাঁর মেয়েকে সে খুলে সব বলে কিন্তু নিতা বলে তোমার মনের ভুল। যাইহোক রাত্রি বেলা খাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমোতে যায় সেদিন আকাশ আর নিতা একটু রোমান্টিক হবার চেষ্টা করে বেশ প্রেমময় পরিস্থিতি চালু হতে থাকে আকাশ বলে ভিডিও কল করে কথা বলতে তো তারা ভিডিও কল করে কিছুক্ষণ বাদে আকাশ দেখে নিতা পিছনে একটি কালো ছায়া সে ভাবে হয়তো ক্যামেরার জন্য কিন্তু কিছুক্ষণ বাদে সেই কালো ছায়া এক বিভস্র রূপ ক্যামেরার সামনে দেখায় আকাশ জোরে করে চেঁচিয়ে ওঠে নিতা ও ভয় পেয়ে যায় কারণ চলছিল প্রেম ময় ব্যাপার। ভিডিও কল বন্ধ করে নিতা তাড়াতাড়ি আকাশ কে ফোন করে সে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে ? আকাশ বলে আমি কাল বলব আজ ঘুমোই। সকাল হলে নিতা বাচ্চাদের রেডি করতে গেলে সে দেখে আবির কার সাথে একা একা কথা বলে যাচ্ছে এবং খেলছে সে কিছু ভাবে না সে কিছু না ভেবে রেডি করে বাচ্চাদের নিয়ে বেরিয়ে যায় । সেদিন ছিল মঙ্গলবার নিতার মা হনুমান জির ভক্ত তো সে হনুমান চলিসা পড়েন মঙ্গলবার করে হঠাৎ পড়তে পড়তে তাঁর কোনো এক জায়গায় ভুল হয় সে অনুভব করে কেউ তাঁর পেছনে এবং একটা শব্দ আসে আরেকবার ভুল করলে শেষ তুই তার চক্ষু চড়ক গাছ সে ভাবে কি করবো সে আবার পরে কিন্তু এক জায়গায় ভুল করে বেস তাঁর চুলের মুঠি ধরে তাকে দূরে ফেলে দেয় এবং নিতা মা অজ্ঞান হয়ে যান তারপর নিতা যখন বাড়িতে আসে সে দেখতে পায় তাঁর মায়ের অবস্থা খুব খারাপ সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার বলেন তার পায়ে এবং কোমরে লেগেছে একটু রেস্ট করলে সেরে যাবে কিন্তু দেখাশুনা করতেই হবে। সে ভাবে কাউকে রাখবে কাজের জন্য তো মাকে বাড়িতে নিয়ে এসে সে দেখাশুনার লোক খুঁজতে থাকে কিন্তু যাকেই বলে সেই ৮০৮ বাড়ির কথা শুনে সবার গলা শুকিয়ে যায় । শেষে একজন কে পায় কিন্তু টাকাটা বেশি চায় তো তাকে দিতেই হবে । যাই হোক সেই কাজের লোক বাড়িতে কাজ করতে আসে সেদিনই সে ছাদে যায় কাপড় মেলতে ছাদে ওঠার সময় ওখানে দুটো দরজা সে দেখতে পায় এবং কিছুক্ষন সে তাকিয়ে থাকে সেই দরজার দিকে মনে হচ্ছিল কেউ যেনো তাকে ডাকছে সেই দরজার দিকে হঠাৎ নিতা মা তাকে ডাকলে সে চলে যায় নিচে। একদিন সেই কাজের লোক ঝার দিতে দিতে একটা বাক্স পায় সে ভাবে এটা কোনো ভাঙ্গা বাক্স তাই সে ওটাকে ডাস্টবিনে ফেলতে যায়, ফেলতে গিয়েও তাকে কেউ পেছন থেকে লাথি মারে সঙ্গে সঙ্গে সে চিক্তার শুরু করে আসে পাশের লোকেরা সব চলে আস্তে গিয়েও ভয় পায় যাবো কিনা ! কিন্তু সবাই যায় এবং তাদের নিয়ে আসে পাশের বাড়িতে সেই কাজের লোক আর নিতা মা যখন ব্যাপার গুলো শুনে নেয় ওদের চোখ উপরে উঠে আসে যে ওখানে কিছু আছে কিন্তু কেউ জানে না সেটা কি! নিতা বিকেলে আসার পর সব শুনতে পারে কিন্তু বিশ্বাস এখনও হচ্ছিল না কিন্ত চিন্তায় পড়ে যায় , কিন্তু তাদের কাজের লোক বলে দিদি আমি কাজ ছাড়বো না তুমি চিন্তা কোরো না । ধীরে ধীরে ওই বাড়ি নিজের আসল রূপ দেখতে শুরু করে । শুক্রবার রাত্রি অমাবস্যা সেদিন হঠাৎ তারা ডাইনিং রুমে আওয়াজ শুনে সব কেমন জানি কাপছে এবং বাসন গুলো পরে যাচ্ছে যখন সামনে যায় তখন দেখে ইদুর কিন্তু যখনই সে রুমের দিকে যাবে সে দেখে একটা কালো ছায়া তার দিখে চেয়ে আছে সে দেখে তো কিছু বলতে পারেনা আস্তে আস্তে সেটা তার দিকে এগোতে থাকে সে তখন না পেরে চিৎকার করে ওঠে বাড়ির সকলে উঠে চলে আসে তার মা ছেলে মেয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে সে নিজেকে শান্ত করে বলে আরশোলা ছিলো।
পরের দিন থেকে বাচ্চাগুলোর গরমের ছুটি তারা বেস খুশি। নিতা নিজের কাজে চলে যায় তারপর তার মেয়ে ছাদে চলে যায় সেখানে সে বসে থাকে সারাদিন, তার কেনো জানি মনে হতো সেখানে সে না বসতে চাইলেও তাকে বসতে হচ্ছে সে উটতে পারছে না আর এদিকে আবির আঁকা করতো নিতা মা দেখে ও কিছু আঁকছে দেখে সেই আঁকা তে একটি লোক তার দুটো সিং এবং দাঁত গুলো বড় বড় তার পাশে ছোট ছোট অনেক জন সে বলে তুমি এটা কিভাবে করলে কে বললো তোমাকে ? সে তাঁর আঙুল দিয়ে দরজার দিকে দেখালো দেখতেই তার মায়ের সামনে সেই জিনিসটা চলে আসলো তার মা চিৎকার করতে লাগলো কাজের লোক এবং তার নাতনি দুজনেই চলে আসলো এবং সামলালো । নিতা অফিস থেকে আসার পর তাকে সব বললো নিতা এবার আকাশ কে ফোন করলো সব জানালো তারপর সে বললো দুদিন অপেক্ষা করতে সে কলকাতা গিয়েছে। এরই মধ্যে বাড়িতে পচা গলা গন্ধ বেরোতে লাগলো সেটা আর নেওয়া যাচ্ছে না রিয়া একটু নাস্তিক এগুলো তে সে সব বিষয়ে বিজ্ঞান কে দেখে তো সে বললো হয়তো কোনো ছত্রাক এর জন্য হচ্ছে। দুদিন পর আকাশ আমাকে ফোন করলো বললো ব্যাপারটা, আমি তো এমনি ভয় শুনে আরও ভয় পেলাম কিন্তু বললাম বাড়িতে এক যজ্ঞ করে দেখ আকাশ সেটা মানলো আর মিতাকে জানালো। বাড়িতে ১ মাস কেটে গেলো একদিন আকাশ নিতা বাড়িতে এলো ঢুকতেই তার কেমন জানি লাগতে লাগলো খুব বাজে ভাব সে নিচের তলাতে বসে ছিল গন্ধটা সেও পেলো না পেরে উপরে গেলো উপরে গিয়ে দরজা খুলতেই একটি কালো ছায়া তার সামনে দিয়েই বেরিয়ে গেলো দেওয়ালে পিঠ ঠেকে দিয়ে সে জোরে একটা নিঃশ্বাস নিলো তারপর নিতাকে বললো পুজো করাতে সেদিনের ব্যাপারটা সে বলেনি কি হয়েছিল। এতো কিছু হওয়ার পরও তারা বাড়ির মালিককে কিছু বলেনি কারণ সুবিধা অনেক ছিল তাই কিছু উপায় না দেখে মুখ বন্ধ রাখতে হলো।
পরের সপ্তাহে বাড়িতে একটা পুজো করা হলো তাদের আত্মীয়দের ডাকা হলো আকাশ আমাকেও বলেছিল কিন্তু আমার কাজ ছিল জন্য যায়নি। পুজো যখন হচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে যজ্ঞের যে ধোঁয়া সেটা বাড়ির বাইরে চলে যাচ্ছে জানলা দিয়ে তাই তারা জানলা বন্ধ করলো কিন্তু যজ্ঞের আগুন জ্বল লেও ধোঁয়া আর ওঠে না আর এদিকে পন্ডিতের কানে কানে কেউ মন্ত্র বলে যাচ্ছে যখনই সে মন্ত্র বলছে। তাও তারা বন্ধ করেনি। সেই সময় তার এক মাসি ছিল তিনি বেশ শক্তিশালী তিনি বুঝতে পারছিলেন কোনো এমন শক্তি আছে এই বাড়িতে।
তাই তিনি এক পিরকেও ডাকেন যাতে যজ্ঞের সময় দুজন মিলে কার্য করতে থাকবে কিন্তু পড়তে পড়তে যখন তাঁরা উপরের দিকে উঠতে থাকে তখন সেই দরজার ভেতর থেকে আওয়াজ আসে “আমি আসছি দারা তোদের আজ শেষ করে দেবো”। যেই বললো ওমনি তারা আরও জোড়ে মন্ত্র পড়া শুরু করে হঠাৎ তারা দেখে এক বিশাল চেহারার কেউ তাদের সামনে এসে বলছে আমার এতে কিছু হবেনা এবং ভাঙ্গাভাঙ্গা গলায় সে তাদের মন্ত্র পরে শোনায় এবং দুজনকেই ধাক্কা দিয়ে দেওয়ালে মাথা ঠিক দেয় আর অন্যদিকে আকাশ ঘরে শুয়ে ছিল একা হঠাৎ কেউ তার গলা চেপে ধরে আর বলে “আমার বাড়িতে উল্টাপাল্টা জিনিস করবি তোকে আজ মেরেই ফেলবো।” সে কোনো মতে ছাড়িয়ে রুম থেকে দৌড় দেয়। পরে সে শুনতে পারে চিৎকারের আওয়াজ সঙ্গে সঙ্গে সে দৌড়ায় উপরের দিকে তাদের ধরতে যাবে সেই সময় রিয়াকে কেউ তার চুড়িদারের ওড়না দিয়ে চেপে ধরে আর ওদিকে যজ্ঞের আগুন নিভিয়ে দেয় এবং যজ্ঞের সামগ্রী এদিক ওদিক ছিটিয়ে দেয়। সবাই বিপদ বুঝে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় এবং তার মাসি ও পীরকে নিয়ে হাসপাতাল যায়। তারপর তারা বাড়ির মালিককে ফোন করে বাড়ির মালিক বলে সে সবই জানে তাই তারা যদি ছাড়তে চায় তো ছাড়তে পারে বাড়ি। সেদিন যাওয়ার পর তারা এক অঘরীর সাথে কথা বলে তিনি বলেন সেটা আর কেউ না সেটা হলো ব্রহ্ম রাক্ষস। তাদের তৎক্ষণাৎ বাড়ি ছাড়তে বলে এবং তারা বাড়ি ছেড়ে দেয় বাড়ি ছাড়ার দুদিন আগে পর্যন্ত তারা থাকে এবং শেষদিন বাড়ির মালকিন কেও তারা দেখতে পায় রাতে তারপর তারা অন্য বাড়িতে সিফট হয়ে যায়। যাওয়ার ৩দিন বাদে আরেক পরিবার আসে আর সেই সান্যাল পাড়ার বাড়ি নং ৮০৮এ তারপর বুম।
লেখক: পৃথ্বীশ সরকার
‘ফিরে দেখা সাতদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামী সপ্তাহে আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো সপ্তাহের সব নজরকাড়া গল্প নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।