নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক দিনের শেষে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো ‘আজ সারাদিন’? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার দিন অশান্ত মনিপুর, বুথে হামলা দুষ্কৃতিদের
অবশেষে শুরু হল লোকসভা নির্বাচন। শুক্রবার, অর্থাৎ ১৯শে এপ্রিল, ছিল প্রথম দফার ভোট। এদিন সকাল থেকেই গোটা ভারতবর্ষের সমস্ত সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রের সামনে ভিড় জমায় নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে। এছাড়া বাকিরা অপেক্ষা করছেন তাদের সুযোগের। সবমিলিয়ে, এদিন প্রথম দফার ভোটেই সমগ্র ভারতবর্ষ থেকে উঠে এলো একটা অন্যরকমের ব্যস্ততার চিত্র।
কিন্তু এদিনও চরম অশান্তি দেখা গেল জাতিদাঙ্গায় বিধ্বস্ত মনিপুরে। কি হলো আজ? এদিন সেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সবমিলিয়ে ১১ থেকে ১২ শতাংশ ভোট পড়েছে এই পর্যন্ত। এখানেই শেষ নয়, অশান্তি এড়াতে এদিন বহু সাধারন মানুষ ভোট বয়কট অবধি করে দিয়েছেন।
আউটার মণিপুরের মৈরাঙ বিধানসভা এলাকার থামানপোকপি এলাকায় এদিন তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা। জানা গিয়েছে যে একটি বুথ লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় তাদের তরফ থেকে এবং এর জেরে গুরুতর আহত হন তিনজন। যদিও সেখানে পরে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হয় এবং ভোট গ্রহণ চালু করা হয়। এছাড়াও এদিন ইম্ফল উপত্যকার ইনার মণিপুর আসনের থংজু বিধানসভা এলাকায়ও একটি বুথে হামলা চালানো হয় দুষ্কৃতীদের তরফ থেকে এবং ভাঙচুর করা হয়। তবে সেখানে পরে ভোটগ্রহণ নতুন করে শুরু করা হয়। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার, এদিন ইনার মণিপুর থেকেই সকালে ভোট দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং।
উল্লেখ্য, বিগত কয়েকমাস ধরে জাতিদাঙ্গায় জর্জরিত ছিল গোটা মনিপুর। মেতেই ও কুকি দুজনেই একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমেছিল। দীর্ঘদিন ধরে জ্বলছিল সেই রাজ্য। প্রাণ হারিয়েছে অনেকে। এই দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ায় একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং দাবি করে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ কেন্দ্র সরকার। যদিও পাল্টা দিতে বিন্দুমাত্র দেরি করা হয়নি বিজেপির তরফ থেকেও। এমনকি ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধিরাও সেখানে যান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। সেই কারণে এবারের লোকসভা নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে।
লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি কোচবিহার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে
লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় রক্তাক্ত কোচবিহার জেলা। একাধিক জায়গা থেকে উঠে আসে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ছবি। হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল বিজেপির কর্মীরা। ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো পর্যন্ত মোট ১৫১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এখানেই শেষ নয়, দুই দলের তরফ থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত কর্মীদের সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করে এসেছেন রাজ্যের মন্ত্রী, তথা তৃণমূল নেতা, উদয়ন গুহ। সবমিলিয়ে, গোটা জেলা পরিণত হয়েছে একটি রণক্ষেত্রে।
ভোট শুরুর আগেই চান্দামারিতে শুরু হয় অশান্তি। ঘাসফুল ও পদ্মফুল শিবিরের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এখানে তৃণমূলের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয় যে বিজেপি তাদের বুথ এজেন্টকে বসতে বাধা দেয়। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে, শীতলকুচির গোঁসাইহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের বড় ধাপের চত্রা এলাকায়ও পড়ে অশান্তির আঁচ। সেখানে এক বিজেপি কর্মীকে বেধড়ক মারধর দেওয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গুরুতর আহত ওই বিজেপি কর্মীকে ভর্তি করানো হয়েছে মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে। তবে দিনের শেষে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায়, এতো অশান্তির মাঝেও, রাজ্যের তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট হয়েছে কোচবিহারেই।
দুই পক্ষের বেশকিছুজন আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি আহত হন দিনহাটা–১ বি ব্লক সভাপতি। গোটা ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন উদয়ন গুহ। আক্রান্ত কর্মীদের সঙ্গে হাসপাতলে দেখা করতে এসে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এবং বলেন, “আসলে আমাকে যে এলাকাবন্দি করার চেষ্টা করা হয়েছিল তার পেছনে একটা কারণ রয়েছে। ওরা সন্ত্রাস করে আসন দখল করার চেষ্টা করেছিল। নির্বাচন কমিশন ওদের হামলা করার সুযোগ করে দিয়েছে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে। তবে আজ আমি এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে নির্বাচন কমিশন একেবারেই নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেনা। এসব দেখার পর আমাকে বাধ্য হয়েই বেরোতে হলো।”
অন্যদিকে, উদয়ন গুহকে একহাত নেন জেলার বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামানিকও। তিনি বলেন, “উদয়ন গুহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে গুন্ডামি করে বেড়াচ্ছে। আসলে তৃণমূল কংগ্রেস ভয় পাচ্ছে কারণ ওরা জানে যে এবার ওরা হেরে যাবে।”
‘আজ সারাদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।