নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক দিনের শেষে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। আজকের থিম ‘লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম দফার ভোটের আগে ভাঙ্গরে বোমাবাজি’। কি ঘটনা ঘটেছে ওখানে? হাত রয়েছে কাদের? আহত হলো কারা? কি ঘটলো ‘আজ সারাদিন’? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
বরাবরই রাজনৈতিক হিংসার হটস্পট বলে চিহ্নিত করা হতো আইএসএফ শাসিত ভাঙড়কে। দুদিন অন্তর অন্তর সংবাদমাধ্যমগুলি তুলে ধরতে সেখানকার রাজনৈতিক চিত্র। মাঝেমধ্যেই সেখানে অশান্তি লেগে থাকে তৃণমূল ও আইএসএফ কর্মীদের মধ্যে। কখনো তৃণমূল দাবি করে যে আইএসএফের লোক অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আবার অন্যদিকে আইএসএফের বক্তব্য যে শাসকদল আশ্রিত গুন্ডারা এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করেছে। বহু সময় আবার সেখান থেকে বোমাও উদ্ধার হওয়ার খবর উঠে আসে। সবমিলিয়ে, কোন না কোন কারণেই উত্তপ্ত থাকে ভাঙড়।
আবারো রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটলো ভাঙরে। ফের বোমাবাজি হল এলাকায়। আইএসএফের দ্বিতীয় অভিযোগের আঙ্গুল তুলল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। ঘাসফুল শিবিরের এক পঞ্চায়েত সদস্যকে লক্ষ্য করে বোমা মারার অভিযোগ ওঠে আইএসএফের বিরুদ্ধে। তিনি ছাড়া জখম হয়েছেন আরো দশ জন। বর্তমানে তাঁদের জিরানগাছা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে আইএসএফ। তারা পালটা অভিযোগের আঙুল তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেই। তবে ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
ঠিক যেন চোখের নিমেষে মিটতে চলেছে লোকসভা নির্বাচন। দেখতে দেখতে চলে এলো শেষ দফার ভোট। ১লা জুন বুথে বুথে মানুষ ভিড় জমাবে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যার কেন্দ্রীয় বাহিনী যাতে কোন রকমের কোন অশান্তি না হয় এবং মানুষ যেন শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের ভোট দিতে পারে। যদিও শেষ মুহূর্তের প্রচার শেষ হয়ে গেছে সমস্ত রাজনৈতিক দলের। সকলেই একে অপরকে আক্রমণ করার পাশাপাশি উপস্থিত সকল দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধ করেছেন তাদের প্রার্থীকে ভোট দিতে।
তবে এতকিছু হওয়ার পরও যেন সমস্যা মেটার নাম নেই ভাঙ্গরে। আবারো এলাকায় অশান্তির ছায়া। বোমাবাজিতে বিধ্বস্ত এলাকা এবং এর জন্য ভোটের আগেরদিন এমন কাণ্ড দেখে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। সকলেই চিন্তা করছেন যে এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে কিভাবে আগামীকাল তাঁরা গিয়ে ভোট দেবেন। এখানেই শেষ নয়, এমনকি সাধারন মানুষের নিরাপত্তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। সবমিলিয়ে, একটা চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এলাকায়। স্বাভাবিকভাবেই চাপ বেড়েছে পুলিশের উপরও। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যে আগামীকাল চরম সতর্ক থাকতে হবে, তা এখনই বেশ স্পষ্ট।
ঠিকই ঘটেছে আইএসএফ শাসিত এই স্থানে? জানা গিয়েছে যে সপ্তম দফার ভোটের আগে বৈঠক সেরে বাড়ি ফিরছিলেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন দলীয় কর্মী ও সমর্থক। সেই মুহূর্তেই হামলা হয় তাঁদের উপর। এখানেই শেষ নয়, লাগাতার বোমাবাজি করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। মোট ১১ জন গুরুতর আহত হয় – ঘাসফুল শিবিরের পঞ্চায়েত সদস্য ও দশ দলীয় কর্মী। ঘটনা জানাজানি হতেই হইচই পড়ে যায় গোটা এলাকায়। এই ঘটনার জেরে আইএসএফ কর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে শাসকদলের অন্যান্য স্থানীয় কর্মীরা।
বিন্দুমাত্র দেরি না করে গুরুতর আহত ১১ জনকে স্থানীয় বাসিন্দারা, রক্তাক্ত অবস্থায়, জিরানগাছা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক বলেও জানা গিয়েছে। এছাড়াও জানা গিয়েছে যে যাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় তাদের হয়তো কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হতে পারে। দলীয় কর্মীদের এমন অবস্থা দেখে নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা। তিনি তৎক্ষণাৎ আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান এবং ক্ষোভ উগড়ে দেন ভাঙ্গরের বিধায়ক, তথা আইএসএফ নেতা, নওশাদ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শওকত মোল্লা ঘটনা প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান জানান। তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি তিনি নওশাদ সিদ্দিকির গ্রেফতারির দাবিও তোলেন। তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “অন্তত পাঁচ জন গুরুতর আহত হয়েছে এই ঘটনায়। একটি শিশুও রয়েছে এর মধ্যে। কিছু সমাজবিরোধী ও খুনি রাতে বোমা বাঁধছে। এটা গত কয়েকদিন ধরেই চলছে। ওরা সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এই ঘটনার। অবিলম্বে নওশাদ সিদ্দিকিকে গ্রেপ্তার করা হোক।” যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে আইএসএফ। এই ঘটনার জন্য তারা সম্পূর্ণভাবে দায়ী করেছে তৃণমূল কংগ্রেসকেই। তাদের বক্তব্য যে এই বোমাবাজির পেছনে দলের কারোর কোন হাত নেই। পাশাপাশি তারা আরও জানায় যে এই ঘটনার পেছনে হাত রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের।
‘আজ সারাদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।