নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক দিনের শেষে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। আজকের থিম ‘পুরুলিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা’ কি ঘটলো ‘আজ সারাদিন’? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
পুরুলিয়ার সভা থেকে আজ কি বললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মঙ্গলবার, অর্থাৎ ৭ই এপ্রিল, লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট। এদিন ভোট হয়েছে উত্তর মালদা, দক্ষিণ মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং জঙ্গিপুরে। কিন্তু এদিনও বেশ কয়েকটি জায়গায় সামান্য অশান্তির আঁচ লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া এদিন দুই পক্ষই, অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টি, একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে। কিন্তু সবমিলিয়ে, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের উপস্থিতিতে, তৃতীয় দফার ভোট হয় মোটামুটি শান্তিপূর্ণ।
কিন্তু আজকের দিনেও প্রচারে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, অর্থাৎ তৃণমূল সুপ্রিমো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন পুরুলিয়া একটি জনসভার আয়োজন করা হয় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। নির্বাচিত প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর হয়ে প্রচারে আসেন মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সভামঞ্চ থেকে একাধিক ইস্যু নিয়ে আক্রমণ করেন বিজেপিকে। ফের চাকরিহারাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। পাশাপাশি আজও তিনি স্পষ্ট করে দেন যে এবারে নির্বাচনে ৪০০ আসনের গণ্ডি ছুতে পারবেনা বিজেপি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওরা ছেলেমেয়েদের চাকরি খেয়ে নিয়েছে আর বলছে উনি নাকি চেষ্টা করবেন। আরে কি চেষ্টা করবেন? উনি তো সিবিআইয়ের রিপোর্ট দিয়ে যারা যোগ্য তাদেরও চাকরি খেয়েছেন। ১০ লক্ষ চাকরি তৈরি রয়েছে আমার। শুধু বিজেপি আর সিপিএমের লোকেরা আদালতে চলে যাচ্ছে আর মামলা করছে। আর ওরা মামলা করলেই আদালত ওদের পক্ষে রায় দিয়ে দিচ্ছে। আমাদের বেলা জেল আর ওদের বেলায় জামিন। এই অবস্থাই হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। তাই লড়াই নতুন করে লড়তে হবে।”
এরপর নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সংখ্যালঘু ভাইবোনদের নাকি ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে উত্তরপ্রদেশে। এমনকি একজন ভোট দিতে গেছে বলে তাকে পিটিয়ে রোদে ফেলে রাখা হয়েছে। এই খবর আমার কাছে এসেছে। নির্বাচন কমিশন কিছু করবে এই ব্যাপারে আপনাদের মনে হয়? কিছুই করবেনা ওরা। মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট এখন মোদি কোড অফ কন্ডাক্ট হয়ে গেছে। ওরা এখন বিজেপির দালালি করছে। একবার বাংলায় হাত দিক। হাত ভেঙে গুটিয়ে দেবে মানুষ। মনে রাখবেন কোনদিনও অত্যাচার করে ভোট হয়না।”
এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “একজন স্বৈরাচারী রাজা। লোকের বাড়ির টাকা, রাস্তার টাকা কিছু দেয়না। কেন্দ্র ও রাজ্য যে একসঙ্গে প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে, তা জানাবেনা। শুধু নিজের ছবি দেবে। করোনার সময় সমস্ত রাজ্য প্রচুর খেটেছে কিন্তু ইনজেকশনে নিজের ছবি দিয়েছেন। প্রচার করতে করতে আত্মহানকারী হয়ে গিয়েছেন। এর জন্য সারা বিশ্ব ধিক্কার জানাচ্ছে। শুধু হিন্দু-মুসলমান ভাগ করে দাও। উনি একা হিন্দু এসেছেন এবং সবার দীক্ষাগুরু হয়ে গেছেন। একটা মুকুট পড়ো তুমি।”
এরপর তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “শান্তিরাম মাহাতো গ্রামের ছেলে। আপনারা সকলে ওকে ভালো করে ভোট দিয়ে জেতান। পুরুলিয়ায় এতবার আমার মতো কেউ আসেনি। রাত জেগে ঘুরেছিলাম অযোধ্যায় এবং ভাবছিলাম কি করে এখান থেকে অশান্তি দূর করা যায়। ৪০০ পর বলেছিলেন না উনি। এইবার পগার পার করে দিন বিজেপিকে।”
এরপর কেন্দ্র সরকারের মিথ্যা নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জাগুক বিভিন্ন জনজাতি এবং এগিয়ে আসুক। বাউরি, বাগদি,মতুয়া, রাজবংশী সম্প্রদায় মানুষরা নিজেও সম্মান অর্জন করেছেন। বিজেপি শুধু কাগজে নয়, এমনকি গ্রামে গ্রামেও মিথ্যা কথা লিখছে। ওরা লিখেছে যে অন্নপূর্ণা ভান্ডারে তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। আমার প্রশ্ন কোথায় গেল ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’? গ্যাস বেলুনের থেকেও বড় বেলুন প্রধানমন্ত্রী। দাওনি কেন এতদিন অন্নপূর্ণার ভান্ডার? খালি আমাদের কথা আমাদের কথা। ওদের কথা ভাওতা ছাড়া আর কিছুইনা।”
তিনি আরো বলেন, “সবকিছু হারিয়ে গেলে পাওয়া যায় কিন্তু সম্মান পাওয়া যায়না। এটা সকলের মনে রাখা উচিত। দেখলেন তো কিভাবে সন্দেশখালিতে চক্রান্ত করা হলো। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি। লুকিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে নয়। এর জবাব আমরা দেবই। কেন্দ্র বিনামূল্যে রেশন দেবে বলেছিল কিন্তু এক টাকাও দেয়নি। কিন্তু আমরা বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছি। যাতে বাড়ি বাড়ি রেশন না দেওয়া যায় সেই কারণে ওরা আদালতে গিয়ে মামলা করেছে।”
এরপর অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়েও মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এবার এদের আসতে দেওয়া মানে নিজের সর্বনাশ নিজে ডাকা। আইপিসি তুলে দিয়ে এখন ইউসিসি করছে ওরা যাতে কারোর কোন অস্তিত্ব না থাকে। দেশে উনি একা থাকবেন আর কেউ থাকবে না আর সারাক্ষণ মিথ্যা ভাষণ দেবেন। দিল্লির বিজেপি সরকার আসলে একটা চোর।”
‘আজ সারাদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।