নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক দিনের শেষে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। আজকের থিম ‘ঠিক কি কারণে বাংলায় জয় অব্যাহত রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের?’ কি ঘটলো ‘আজ সারাদিন’? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল লোকসভা নির্বাচন। ঘোষণা হয়ে গেল ফলাফল। আবারো ক্ষমতায় এলো এনডিএ জোট। তবে ব্যাপারটা একেবারেই স্বস্তির নয় বিজেপির জন্য। একা সরকার গড়া সম্ভা হলোনা গেরুয়া শিবিরের কাছে। অন্যদিকে, না জিততে পারলেও মাঠে নেমেই বড় প্রভাব ফেলতে সফল হয়েছে ইন্ডিয়া জোট। বেশ দারুন লড়াইয়ের উদাহরণ তুলে ধরেছে তারা। ইন্ডিয়া জোটের উত্থান দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে গোটা দেশের। অনেকেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে অভিনন্দন ও কুর্নিশ জানিয়েছেন জয়ের জন্য।
তবে বাংলার ক্ষেত্রে যা আশা করেছিল বঙ্গ বিজেপি, তা একেবারেই হয়নি। বরং সম্পূর্ণ উল্টোটাই হলো। বড় ব্যবধানে জিতল ঘাসফুল শিবির। বলা যায় একেবারে ডাহা ফেল এক্সিট পোল। স্বাভাবিকভাবেই এই ফল দেখে যেমন একদিকে খুশির হাওয়া বইলো ঘাসফুল শিবিরে, তেমনি হতাশার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে গেরুয়া শিবিরে। কোন বিজেপি কর্মী বা সমর্থক আশা করতে পারেনি যে তৃণমূল কংগ্রেস এতো বড় ব্যবধানে জিতবে। সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের জয়। বহু ঘাসফুল কর্মী ও সমর্থক মনে করছেন তিনিই এবারের নির্বাচনের ‘ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ’।
তবে আজ আমরা দেখে নেব যে ঠিক কি কারনে বাংলায় আসন বৃদ্ধি হল তৃণমূল কংগ্রেসের বা কেন এত লড়াই করেও দাগ কাটতে পারলোনা গেরুয়া শিবির। ঠিক কি কারনে এতো বড় বদল ঘটলো? কার ভুলে হলো কার লাভ? কেন এখনো গোটা বাংলা রয়েছে মমতার পক্ষে? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
বঙ্গ বিজেপির অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় নেতা ও এজেন্সির উপর নির্ভর করা
বঙ্গ বিজেপির পুরোপুরি কেন্দ্রীয় নেতা ও এজেন্সির উপর নির্ভর করে চলা প্রথম কারণ মনে করা হচ্ছে তাদের ক্ষমতা কমার। রাজ্যের একাধিক দুর্নীতির মামলায় লাগাতার এজেন্সির হস্তক্ষেপ বিজেপি সমর্থকেরা ভালো চোখে নিলেও, সাধারণ মানুষ তা একেবারেই ভালো চোখে নেয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করতেন যে দলটা পুরোপুরি চলছে এজেন্সির ক্ষমতার উপর এবং এটি একটি বাজে উদাহরণ তৈরি করেছে বঙ্গবাসীদের নজরে।
এছাড়া তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতাদের লাগাতার ইডি বা সিবিআই তলব চোখে লেগেছে একাংশের। তার উপর, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ছাড়া কোন মামলাতেই তেমনভাবে কিছু প্রমাণ করে উঠতে পারিনি কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকরা। যার ফলে অনেকেই মনে করতে শুরু করে দিয়েছিলেন যে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে বাংলার নেতা-মন্ত্রীদের। পাল্টা সেই প্রভাবটাই পড়ে ভোটবাক্সে। বাংলার প্রায় অর্ধেক মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে বিজেপিকে দুর্বল করেন।
বিজেপির সিএএ ও ঘৃনাভাষণ একেবারেই ভালো চোখে নেয়নি বাংলার মানুষ
এটিও একটি বড় কারণ বাংলায় বিজেপির হারার পিছনে। এমনটাই মনে করছেন বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষক। অনেকের দাবি বিজেপির জনসভা থেকে বহুবার ‘দুধেল গাই’, ‘মোল্লা তোষন’, ‘জিহাদি’, ইত্যাদি কুরুচিকার শব্দ প্রয়োগ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের আক্রমণ করেছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের ক্ষুব্ধ তো করেইছে, পাশাপাশি যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী, তারা একেবারেই এগুলিকে ভালোভাবে নেননি।
অন্যদিকে ভোট ঘোষণার প্রাক্কালে সিএএ কার্যকর করার কথা ঘোষণা একরকম ছক হিসেবে নিয়েছিল বাংলার মানুষ। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের জনসভা থেকে লাগাতার দাবি করেছেন যে এর জন্য আবেদন করা মানে নিজের নাগরিকত্ব খোয়ানো। পাশাপাশি, এই আইনের বিরোধিতা করে বহু সংগঠন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। যা তৈরি করে একটা খারাপ ইমেজ। সেটারও একটা প্রভাব পড়েছে।
সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিও ও ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি বাতিল করা
এগুলিকেও একটি বড় কারণ ধরা হচ্ছে বাংলায় বিজেপির পরাজয়ের পেছনে। হঠাৎ করে ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ ক্ষুব্ধ করে দিয়েছিল তাদের। তার উপর প্রাক্তন বিচারপতি, তথা তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এর বিজেপিতে যোগ দেওয়া একেবারেই ভালো চোখে নেয়নি চাকরিপ্রার্থীরা। অনেকে মনে করছেন যে বিচারপতির আসনে বসে উনি বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও লাগাতার একই কথা বলে গেছেন প্রতিটি জনসভা থেকে।
অন্যদিকে সন্দেশখালির একটি স্টিং অপারেশন ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় আসল পর্দা ফাঁস হওয়া একটা বড় ধাক্কা দিয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। বিজেপি পুরো ঘটনাকে সত্যি বলে দাবি করলেও, একাংশ মনে করতেন যে পুরো ঘটনাটাই সাজানো। এছাড়া বসিরহাট বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রেরও কয়েকটি বিষয় মিথ্যে প্রমাণিত হয়। যা পাল্টা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে বিজেপির কাছে এবং হাতছাড়া হয় সেই আসন।
‘আজ সারাদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।