নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক দিনের শেষে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। রাজ্য থেকে দেশ, কি ঘটলো ‘আজ সারাদিন’? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
এসএসসি নিয়োগ মামলা: খারিজ করে দেওয়া হল ২০১৬ সালের প্যানেল
এক নজিরবিহীন রায় দেওয়া হল কলকাতা হাই কোর্টের তরফ থেকে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায়। কি রায় দেওয়া হল? খারিজ করে দেওয়া হল ২০১৬ সালের প্যানেল এবং এর সঙ্গে চাকরি গেল প্রায় ২৬ হাজার লোকের। এখানেই শেষ নয়, আরো বড় চাপ দেওয়া হল চাকরিহারাদের। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের ফেরত দিতে হবে সমস্ত বেতন। পাশাপাশি, বার্ষিক সুদ দিতে হবে ১২ শতাংশ হারে। জানা গিয়েছে যে দীর্ঘদিন ধরে পেয়ে থাকা সেই বেতন ফেরাতে হবে ডিআই এবং জেলাশাসকদের মারফত।
সোমবার, অর্থাৎ ২২শে এপ্রিল, সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ রায় পড়েন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। তিনি দাবি করেন যে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত যেকটি মামলা রয়েছে, সবটি গ্রহণযোগ্য। এরপরই তিনি প্যানেল খারিজ করার কথা জানান। তবে এর সঙ্গে তিনি এটাও স্পষ্ট করে দেন যে সোমা দাস নামে এক চাকরিপ্রাপকের চাকরি থাকবে কারণ তিনি ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত এবং মানবিকতার খাতিরে তাঁর চাকরি বহাল রাখা হয়েছে।
এরপরই বেতন সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে, ডিআই এবং জেলাশাসকের মারফত, পুরো বেতন ফেরত দিতে হবে এবং এর সঙ্গে বার্ষিক ১২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। বেতন ফেরত দেওয়ার বিষয়টি ৬ সপ্তাহের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে জেলাশাসককে। এছাড়া সিবিআই এই মামলার তদন্ত চালিয়ে যাবে। যদিও নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে এদিন।
“মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত” এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে বিস্ফোরক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের রায় নিয়ে এবার মুখ খুললেন প্রাক্তন বিচারপতি, তথা তমলুকের বিজেপি প্রার্থী, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন ভোটপ্রচারের মাঝে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় নিজের অবস্থান প্রকাশ্যে আনেন। তাঁর বক্তব্য যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এখানেই শেষ নয়, তিনি আরো দাবি করেন যে গোটা বাংলার উচিত তৃণমূল কংগ্রেসকে বয়কট করা। এমনকি ফাঁসিতে চড়ানোর কথা শোনা যায় তাঁর মুখ থেকে।
এদিন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যখন আমি বিচারপতি ছিলাম, তখন এই মামলাটা নিয়ে আমি অনেকদিন কাজ করেছিলাম। যারা যোগ্য তাদেরকে ঠকানো হয়েছিল। এদের মধ্যে হিন্দু, মুসলিম, সকলেই রয়েছে।” এরপরই রাজ্য সরকারকে নিশানা করে তিনি বলেন, “দেখুন আমার হাতে একবার ধরা পড়েছে এবং এখন আরো একবার ধরা পড়লো। মুখ্যমন্ত্রী একজন মিথ্যাচারী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিনের পর দিন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের ঠকিয়ে গেছেন। তাই আমাদের সকলেরই উচিত এই সরকারকে পুরোপুরি বয়কট করা। ফাঁসিতে চরানো উচিত সমস্ত জোচ্চোরদের। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।”
এরপরই প্রাক্তন বিচারপতিকে প্রশ্ন করা হয় যে তিনি কলকাতা হাই কোর্টের এই রায়তে খুশি হয়েছেন কিনা। সেই প্রশ্নের উত্তরে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “দেখুন আপনি যদি আমাকে এটা জিজ্ঞেস করেন তাহলে আমি এটাই বলব যে এই রায়তে আমি একেবারেই খুশি নই। উল্টে খারাপই লাগছে। তবে আমি এটাই প্রার্থনা করবো যে যারা যোগ্য, সেই চাকরিপ্রার্থীরা যেন অবশ্যই চাকরি পাক।”
“আমরা আপনাদের জন্য লড়াই করবো” চাকরিহারাদের পাশে থাকার আশ্বাস মমতার
এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে ক্ষুব্ধ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার জনসভা থেকে চাকরিহারাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, এদিন নাম না করে তৃণমূল সুপ্রিমো কটাক্ষ করেন প্রাক্তন বিচারপতি, তথা তমলুকের বিজেপি প্রার্থী, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী একহাত নেন গেরুয়া শিবিরকেও।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চিন্তা করবেন না। আমরা আপনাদের জন্য লড়াই করবো। আপনাদের পাশে আছি। আমরা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করছি। ২৬ হাজার ছেলে মেয়ে মানে প্রায় দেড়-দুই লক্ষ পরিবার। ওরা বলে কিনা এতদিন ধরে যা বেতন পেয়েছে তা সব ফেরত দিতে হবে। চার সপ্তাহের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপনারা বলুন এটা কি সম্ভব ৭-৮ বছর ধরে যা বেতন পেয়েছে তা সব ফেরত দেওয়া।”
এরপরই নাম না নিয়ে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আপনারা আপনারা তো দেখলেন কি করে একজন বিজেপির হয় ভোটে দাঁড়িয়ে গেল। এটা তারই অর্ডার ছিল। স্থগিতাদেশ কিন্তু দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। আলোচনা হোক নতুন ডিভিশন বেঞ্চ তৈরি করে। এই অর্ডারটা পুরোপুরি বেআইনি। আমি বিচারপতিকে বলছি যে আমরা শীর্ষ আদালতে যাবো।”
এছাড়া বিজেপিকে কটাক্ষ করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “আমি মনে করিনা যে এটা বিচারপতিদের দোষ। এর জন্য পুরোপুরি দায়ী কেন্দ্র সরকার। তাদেরকেই এখানে বসানো হয়েছে যারা বিজেপির লোক যাতে ওরা সেই মতো কাজ করে দেয় যেটা বিজেপি কার্যালয় থেকে বলা হয়।”
‘আজ সারাদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।