নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক দিনের শেষে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সব খবর। আজকের থিম ‘বাংলায় তৃণমূলের দাপট’। কি ঘটলো ‘আজ সারাদিন’? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
মাসের পর মাস লড়াইয়ের হল ইতি। শেষ হয়ে গেল লোকসভা নির্বাচন। ফের শেষ হাসি হাসলো এনডিএ সরকার। তবে জয় পেলেও একেবারেই তা স্বস্তির জয় নয় তাদের। কারণ একা তারা পার করতে পারেনি ম্যাজিক ফিগার। অর্থাৎ জোট করেই চালাতে হবে সরকার। তবে ময়দানে নেমে বড় দাগ কাটতে সফল হয়েছে ইন্ডিয়া জোট। জিততে না পারলেও তাদের লড়াই ছিল প্রশংসার যোগ্য। বেশ ভালোই টক্কর দিয়েছে তারা বলে দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সহ গোটা রাজনৈতিক মহলের।
কিন্তু বাংলায় ফের কামাল করে দেখালেও ঘাসফুল শিবির। অব্যাহত রইল সবুজ ঝড়। এক্সিট পোলে যা দেখানো হয়েছিল, তার সম্পূর্ণ উল্টোটা ঘটলো। অর্থাৎ যেভাবে নিউজ চ্যানেলগুলিতে দেখানো হয়েছিল যে বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস ভরাডুবি হবে, তা হয়নি। বেশ বড় ব্যবধানেই জয় নিজেদের নামে করে নিল সবুজ বাহিনী। এক্ষেত্রে অনেকের বক্তব্য যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাধারণ সম্পাদক, তথা ডায়মন্ড হারবার প্রার্থী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার রোড শো ও জনসভার জেরেই এই জয় সম্ভব হয়েছে। তবে সকলের নজর কেড়েছেন দলের সব প্রভাবশালী প্রার্থীরাও।
তবে এদিন, অর্থাৎ ফল ঘোষণার দিন, বেশকিছু মুহূর্ত দৃষ্টি আকর্ষণ করে গোটা বাংলার। তাদের মধ্যে একটি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেকর্ড ব্যবধানে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে জয়। অন্যদিকে, সর্বদা আলোচিত সন্দেশখালির ফলও চমকে দিয়েছে গোটা বাংলাকে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল যে সহজেই জয় পাবেন বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য জিনিস ঘটে। বেশ বড় ব্যবধানেই জয় পায় বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম। এমনকি বেলা গড়াতেই বুথ ছেড়ে চলে যান রেখা পাত্র। তবে যাওয়ার সময়ও তিনি সাংবাদিকদের দাবি করেন যে চুরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এছাড়াও কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের জয় তাক লাগিয়ে দিয়েছে সকলকে। ফের তিনি সংসদে বসার টিকিট পাকা করে নিয়েছেন। অনেকে মনে করছেন যে তিনি কড়া জবাব দিয়েছেন বিরোধীদের।
তবে এদিন জয় ঘোষণার আগেই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে আনন্দ উদযাপন করতে শুরু করেন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থকরা। সকলেই সবুজ আবীর নিয়ে একে অপরকে মাখান এবং নাচানাচি শুরু করেন। দুপুর থেকেই কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে ভিসমাতে শুরু করেন দলীয় কর্মী ও সমর্থকরা। মহিলাদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। তারা অবস্থা ভালো দেখেই ‘দিদি দিদি’ ধ্বনি দিতে শুরু করেন। তাদের বক্তব্য যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া তারা কিছুই বোঝেনা। অনেক মহিলা এটাও দাবি করেন যে দিদি তাদের কাছে শেষ কথা এবং তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া বাংলাকে চালাতে পারবেনা অন্য কোন দল।
এদিন জয়ের পরই সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তথা তৃণমূল সুপ্রিমো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি প্রথমে সকল রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ জানান জয়ের জন্য এবং একাধিক ইস্যু নিয়ে মুখ খোলেন। পাশাপাশি, গণনা নিয়ে ক্ষোভ পর্যন্ত উগরে দেন দলনেত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য বেশ কয়েকটি জায়গায় গণনায় কারচুপি হয়েছে, যার জন্য পুরোপুরি সঠিক ফল হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কাঁথি-তমলুকে ভোট হয়নি, রিগিং হয়েছে। কাঁথিতে তৃণমূল প্রার্থী জেতার পর জেলার অবজার্ভার সার্টিফিকেট দিচ্ছেন না। নন্দীগ্রামের ভোটে যা হয়েছিল, তমলুকেও তাই হয়েছে। গণনাকেন্দ্রের কাছে রাজ্য পুলিশকে ধারেকাছে ঘেঁষতে দেয়নি। আমি এর বদলা নেবো। আরও ৩-৪টে আসন বেশি জিতেছি আমরা। কিন্তু গণনায় কিছু একটা কারচুপি হয়েছে এবং সেই কারণে আসল ফল বেরোয়নি। আমি চাই এগুলির পুনর্গণনা হোক।”
এদিন তৃণমূল সুপ্রিমোকে আরো বলতে শোনা যায়, “ওরা দল ভেঙেছে, জনতা ওদের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছে। মোদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। আমি খুব খুশি। এখন নীতীশজি ও টিডিপির পা ধরতে হচ্ছে। মোদি-শাহের অহংকার ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। দেশের জন্য খতরনক কাজ করেছেন ওরা। বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন মোদি। দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি। ওরা ইন্ডিয়াকে ভাঙতে পারবেনা। আরএসএসে অনেক ভালো মানুষ আছেন। বিজেপিতেও কিছু ভালো লোক আছেন, যারা বাজপেয়ী আমলে কাজ করেছেন। তাদের বলব, বিষয়টা দেখুন।” এরপর বেশ কয়েকজন তৎকালীন নেতার প্রশংসাও শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর মুখে।
‘আজ সারাদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামীকাল আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো দিনের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।