নিউজ ডেস্ক: প্রিয় পাঠক নতুন সপ্তাহের শুরুতে বঙ্গ-ভারতী নিউজের তরফ থেকে আপনাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে গত সপ্তাহের সেরা সব খবর। এই সপ্তাহের থিম মালদা স্পেশাল। কি ঘটলো শেষ সপ্তাহে? দেখে নিন একনজরে এবং জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।
রাস্তার কাজে নিম্নমানের সামগ্রি ব্যবহার! রুখে দাঁড়ালেন স্থানীয়রা
গতসপ্তাহের সেরা খবরের মধ্যে দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে রাস্তার কাজের নিম্নমানের সামগ্রি ব্যবহারের জন্য স্থানীয়দের বিক্ষোভ। ঘটনাটি ঘটেছে মালদহ শহরের মঙ্গলবাড়িতে। জানা গিয়েছে যে মঙ্গলবাড়ি রেল গেট থেকে বুলবুলি মোড় পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণের কাজে তৈরি হচ্ছে দুই ধারে হাইড্রেন। প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় কাউন্সিলর বিভূতি ঘোষ শনিবার সকালে অভিযোগ করেন যে পিডাব্লিউডিকে জানানো সত্বেও ড্রেনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী।
তিনি অভিযোগ করেন, “কেন পুরনো রড ব্যবহার করা হচ্ছে? কেন ড্রেনের নিচে ইটসলিং না করে মাটির উপরে ঢালাই করে দেওয়া হচ্ছে? ফাইভ এইট পাথর ব্যবহার না করে তার বদলে বড় পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। এর জন্য তো আমাদের ভুগতে হবে। বছর না পার হতেই এই ড্রেনগুলি ভেঙে বসে যাবে। কিন্তু রাজ্য সরকার এই কাজের জন্য অজস্র টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু ভালো মানের কাজ একেবারেই হচ্ছেনা।”
অন্যদিকে, জেলা পূর্ত দপ্তরের নির্বাহী বাস্তকর অসিত কুমার সাহা বলেন, “আমাদের দপ্তরে যে পুরানো রডগুলি রয়েছে তা ব্যবহার করার জন্য ঠিকাদার সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। আমরা এই দামটা ওদের বিল থেকে কেটে নেবো। এই সরকারি নিয়মের মধ্যেই পড়ে।”
তুকতাকের অভিযোগ তুলে বৃদ্ধকে হেনস্তা! আমবাগান থেকে উদ্ধার তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ
গতসপ্তাহের সেরা খবরের মধ্যে দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে তুকতাকের অভিযোগে চাঁচোলে এক প্রৌঢ়কে গণপিটুনি এবং তারপর তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়া। ঘটনাটি ঘটে ভগবানপুর এলাকায়। মৃতবৃদ্ধ পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে চাঁচোল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর একটা চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, স্থানীয় পুলিশের তরফ থেকেও গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে যে মৃত বৃদ্ধর নাম জয়দেব বর্মন। বয়স ৬০ বছর। গত শুক্রবার, অর্থাৎ ৫ই এপ্রিল, বাড়ির কাছাকাছি এক আমবাগানে তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয় এবং এরপর ময়নাতদন্তের জন্য সেই দেহটিকে উদ্ধার করে মালদাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য যে অপমানের জেরে আত্মহত্যা করেছেন জয়দেব বর্মন। পুলিশের সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জয়দেব বাবুর কন্যা পূরবী বর্মন বলেন, “আমাদের গ্রামে যখনই কারুর অসুখ হত তখনই দোষারোপ করা হতো আমার বাবাকে। গ্রামবাসীদের একাংশ সন্দেহ করতো যে আমার বাবা তন্ত্রসাধনা জানে এবং সেই কারণেই গ্রামে এতো অসুখ হচ্ছে। একবার নয়, দুবার নয়, বহুবার হেনস্থা করা হয়েছে আমার বাবাকে। এমনকি গত মঙ্গলবার, আমাদের এলাকার কয়েকজন মাতব্বর সালিশি সভা করে এবং সেখানে মলমূত্র খাইয়ে আমার বাবাকে মারধর করা হয়। এই ঘটনা ঘটার পর আমার বাবা মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে পড়ে। শুক্রবার সাতসকালে জানতে পারি যে আমাদের বাড়ি থেকে কিছু দূরে এক আমগাছে বাবার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়।”
জয়দেব বর্মনের ভাইপো বিশ্বজিৎ বর্মন বলেন, “আমার কাকু ওসব কিছু করতোনা। উনি সাধারন মানুষের সেবা করতেন। কিন্তু তবুও ওনাকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখতেন এবং ভাবতেন যে উনি তুকতাক করেন। অনেকে আবার এটাও মনে করতেন যে উনার জন্যই নাকি গ্রামে এতো লোক অসুখে ভোগে। গত মঙ্গলবার যখন আমাদের গ্রামের এক যুবতী অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তার পরিবারের লোকেরা কাকুর কাছে আসেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার জন্য। আমরা জানতে পারি যে সেই সময়ে নাকি সেই যুবতী হঠাৎ বোবা হয়ে যায়। এরপরই উনি তুকতাক করেছেন, এমন অভিযোগ তুলে আমার কাকুকে টেনে হিঁচড়ে গ্রামের সালিশি সভায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে ওনাকে মারধর তো দূর, এমনকি মলমূত্র অবধি খাওয়ানো হয়েছে। এই অপমান আমার কাকু সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন।”
রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতিদের তাণ্ডব! কি করছে পুলিশ? উঠছে এই প্রশ্ন
গতসপ্তাহের সেরা খবরের মধ্যে প্রথমে রয়েছে রথবাড়ি এলাকায় যুবকের উপর ছিনতাইকারীদের হামলা। এক ভয়াবহ ঘটনার শিকার হলো গোটা মালদা। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলো এক যুবক। ছিনতাইবাজদের আক্রমন থেকে কোনরকমে রক্ষা পেলো সে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে যায় গোটা মালদা জেলায়। কেন দিনের পর দিন এমন ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে? এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে চারিদিকে। এছাড়াও প্রশ্ন উঠছে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে।
এই ভয়ংকর ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ১১ই এপ্রিল, রাত আনুমানিক ১১টা নাগাদ সামিউল শেখ নামে এক যুবকের সাথে। তিনি ইংলিশবাজার পৌরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি কলোনি এলাকার বাসিন্দা। জানা গিয়েছে যে রথবাড়ি এলাকায় একটি গ্যারেজের দোকানে কাজ করে সেই যুবক। রোজের মতো কাজ সেরে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন এবং ঠিক সেই সময়েই কয়েকজন দুষ্কৃতি তার উপর হামলা করে এবং তার পেটে ছুরি মারে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে মাটিতে লুটিয়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা উদ্ধার করে এবং মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। এরপর শুক্রবার, অর্থাৎ ১২ই এপ্রিল, সামিউল শেখের অস্ত্রোপচার হয়। যদিও কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত এবং কেনই বা হামলা করা হয়েছে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ইংলিশবাজার থানার পুলিশ।
এই ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। কিন্তু এর সঙ্গে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। সকলেরই বক্তব্য যে পুলিশ থাকা সত্ত্বেও কি করে এমন ঘটনা প্রায়দিন ঘটে চলেছে। এছাড়াও রোজ রাতে সেই এলাকায় টহল দেয় পুলিশ, তাহলে কি করে এমন ঘটনা ঘটলো। সবমিলিয়ে, এই ঘটনার রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মনে।
‘ফিরে দেখা সাতদিন’ আজ এই পর্যন্তই। আগামী সপ্তাহে আমরা ফের আপনাদের কাছে ফিরে আসবো সপ্তাহের সব নজরকাড়া খবর নিয়ে। ধন্যবাদ। সুপ্রভাত।